শেয়ার বাজার

গেম্বলারদের দৌরাত্ম্য: আস্থা ফেরাতে চাই কঠোর শাস্তি ও কাঠামোগত সংস্কার

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৬ ০০:৩৫:০৮
গেম্বলারদের দৌরাত্ম্য: আস্থা ফেরাতে চাই কঠোর শাস্তি ও কাঠামোগত সংস্কার

সত্য নিউজ:২০২৪ সাল বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ারবাজারে এক দুঃস্বপ্নের বছর ছিল, যার রেশ ২০২৫ সালেও কাটছে না। বছরের পর বছর ধরে বাজারে চলা অনিয়ম, কারসাজি ও নীতিগত দুর্বলতার কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। এর জ্বলন্ত উদাহরণ মিলেছে আজ সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে (১৫ মে, ২০২৫), যেদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসই (ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ) এক বড় ধরনের ধসের সাক্ষী হয়।

সূচক পতন: এক দিনের নয়, দীর্ঘমেয়াদি সংকটের প্রতিচ্ছবি

আজকের সূচক পতনের মধ্য দিয়ে ডিএসই পৌঁছে গেছে গত সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে, যা কেবল দিনের একটি স্বাভাবিক পতন নয়—বরং চলমান আস্থাহীনতা, অস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও বাজার ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদি দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি। এই ধস নতুন করে বিনিয়োগকারীদের মনে ভয়, অনিশ্চয়তা ও হতাশার বার্তা দিয়েছে।

কারসাজি আর অনিয়মের বেড়াজালে আটকে শেয়ারবাজার

বিশ্লেষকদের মতে, পুঁজিবাজার একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল খাত, যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং নীতিনির্ধারণী দৃঢ়তা না থাকলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা অসম্ভব। বাস্তবতা হলো, একদল ‘গেম্বলার’ ও প্রভাবশালী চক্র দীর্ঘদিন ধরে নানা কৌশলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি লুটে নিচ্ছে। ২০২৪ সালেই মাত্র ১২টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির ঘটনায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৭২২ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করা হয়েছে। তবে আদায় কতটা হয়েছে, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায় নি।

আলোচিতদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বৈরশাসক সরকারের শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, যিনি সুকুক বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ উত্তোলন করে বিতর্কে আসেন। একইসঙ্গে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের হিরুর নামও উঠে এসেছে শেয়ারবাজারে অনিয়ম ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে।

জরিমানা নয়, চাই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি

অর্থদণ্ড দিয়ে কি এসব জটিল আর পরিকল্পিত অপরাধ রোধ সম্ভব? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কারসাজিকারীরা যেভাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করে দিচ্ছে, সেই তুলনায় জরিমানা একেবারেই নগণ্য শাস্তি। কোন কোন ক্ষেত্রে আইনের ফাঁকে উক্ত জরিমানাও রহিত বা সীমিত হয়ে যাওয়ার নজিরও আছে। সেক্ষেত্রেবিশেষজ্ঞদের সুপারিশ হচ্ছে, সিকিউরিটিজ আইন এখনই কঠোরভাবে সংস্কার করতে হবে। শেয়ারবাজারে প্রমাণিত প্রতারণা ও কারসাজির জন্য বাধ্যতামূলকভাবে অন্তত দুই বছরের জেল নিশ্চিত করতে হবে, যা কোনোভাবেই অর্থদণ্ডে রূপান্তরযোগ্য হবে না। কেবল তখনই অপরাধীরা দ্বিতীয়বার এই বাজার নিয়ে খেলতে সাহস পাবে না।

ক্ষতিপূরণ কোথায়? ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের

একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, বিএসইসি যেসব জরিমানা আদায় করছে, তার একটি অংশও কেন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের হাতে ফেরত যায় না? এতে তাঁরা একদিকে অর্থ হারান, অন্যদিকে ন্যায়বিচার থেকেও বঞ্চিত হন। অনেকেই মনে করছেন, কারসাজিকারীদের থেকে আদায়কৃত অর্থের একটি অংশ ক্ষতিপূরণ হিসেবে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বণ্টন করা উচিত।

বাজারে আস্থা ফেরাতে চাই কাঠামোগত সংস্কার

বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, বিএসইসি চাইলে আইন সংশোধনের মাধ্যমে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং বিনিয়োগকারীদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা গেলে ধীরে ধীরে বাজারে হারিয়ে যাওয়া আস্থা ফিরে আসতে পারে।এই পরিবর্তন যদি এখন না আসে, তাহলে বাজারে যে ক্ষতি হচ্ছে তা শুধু বিনিয়োগকারীর নয়—এটি দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যতের অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবেই দেখা যাবে। এই আস্থা ফিরিয়ে আনা কেবল শেয়ারবাজারের জন্যই নয়, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত