ট্রাম্পের আদেশে পাল্টা শুল্ক কার্যকর, ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০২ ০৮:৩৭:১৬
ট্রাম্পের আদেশে পাল্টা শুল্ক কার্যকর, ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কগ্রাফিকস: প্রথম আলো

বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে উন্নীত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত এই শুল্ক ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে বলে হোয়াইট হাউস এক আদেশে জানিয়েছে। এতে করে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মোট শুল্কহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যেতে পারে, যা দেশটির রপ্তানি খাতে নতুন চাপ তৈরি করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের (USITC) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৪৪ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে দেশটি আদায় করেছে ১২৭ কোটি ডলার শুল্ক। অর্থাৎ শুল্কহার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ। নতুন ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে এই হার বেড়ে ৩৫ শতাংশে পৌঁছাবে।

তবে সব পণ্যে এক রকম শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন পণ্যে ভিন্ন হারে শুল্ক আদায় করে, যার পরিমাণ শূন্য থেকে ৩৫০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। পাল্টা শুল্ক এই হারগুলোতেও প্রভাব ফেলবে।

যুক্তরাষ্ট্র তিন ধরনের শুল্কহার অনুসরণ করে:

এমএফএন (Most Favored Nation): যেসব দেশের সঙ্গে স্বাভাবিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, তাদের পণ্যে এই শুল্ক প্রযোজ্য। বাংলাদেশ এ সুবিধার অন্তর্ভুক্ত।

চুক্তিভিত্তিক শুল্কহার: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি থাকা দেশগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যা সাধারণত এমএফএন হার থেকে কম।

সীমিত সম্পর্কের দেশ: যেসব দেশের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক নেই, তাদের পণ্যে তুলনামূলকভাবে উচ্চ শুল্ক আদায় হয়।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্কহার ছিল ২.৪০ শতাংশ। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের ধারাবাহিক পদক্ষেপে তা বেড়ে ১ জুন পর্যন্ত ১৫.৬০ শতাংশে দাঁড়ায়। নতুন শুল্ক কার্যকর হলে তা ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত পোশাক শিল্প। গত বছর এ খাতে গড় শুল্কহার ছিল ১৬.৭৭ শতাংশ। পাল্টা শুল্ক যোগ হলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৬.৭৭ শতাংশে।

নিম্নে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো:

ম্যান-মেইড ফাইবারের সোয়েটার: বর্তমানে ৩২% শুল্ক, নতুন হারে হবে ৫২%।

তুলার সোয়েটার: এখন ১৬.৫০%, বাড়বে ৩৬.৫০%।

ছেলেদের আন্ডারপ্যান্ট (সুতার কাপড়): এখন প্রায় ৬%, বাড়বে ২৬%।

১% শুল্কযুক্ত পোশাক: নতুন হারে ২১% দিতে হবে।

জুতা: আগে গড় শুল্ক ছিল ৮.৫%, এখন হতে পারে ২৮.৫০%। কিছু পণ্যে সর্বোচ্চ ৫৫% পর্যন্ত শুল্ক ধার্য হতে পারে।

হ্যাটস ও হেডগিয়ার: গড় শুল্ক ৭.৫%, নতুন হারে হবে ২৭.৫%।

চামড়াজাত পণ্য: গড় শুল্ক ১২.২০%, পাল্টা শুল্কসহ হবে ৩২.২০%।

চামড়ার হাতব্যাগ: আগে ৯%, নতুন হারে ৩১% দিতে হবে।

এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান দুর্বল হতে পারে এবং মার্কিন বাজারে রপ্তানিতে হুমকি তৈরি হতে পারে। ফলে রপ্তানিকারকদের জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও বিকল্প বাজার খুঁজে বের করাই এখন সবচেয়ে জরুরি চ্যালেঞ্জ।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ