যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া উত্তেজনা

সমুদ্রের নিচে পারমাণবিক শক্তি প্রদর্শন! কে এগিয়ে— যুক্তরাষ্ট্র না রাশিয়া?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০২ ১৫:৩৬:২৫
সমুদ্রের নিচে পারমাণবিক শক্তি প্রদর্শন! কে এগিয়ে— যুক্তরাষ্ট্র না রাশিয়া?
ছবি: সংগৃহীত

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নির্দেশনায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কের জটিল প্রেক্ষাপটে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন রাশিয়ার সীমানার কাছাকাছি মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। এই পদক্ষেপের পেছনে কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের “উসকানিমূলক” মন্তব্য। শুক্রবার (১ আগস্ট) ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া এক পোস্টে বিষয়টি জানান।

ট্রাম্প বলেন, মেদভেদেভের সাম্প্রতিক উসকানিমূলক মন্তব্যের পর তিনি নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা অবস্থান শক্তিশালী করতে সাবমেরিন দুটি রাশিয়ার নিকটে সরিয়ে নিতে বলেছেন। তবে এ ঘোষণা সত্ত্বেও রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। যদিও রুশ পার্লামেন্টের একজন সিনিয়র সদস্য ভিক্টর ভোডোলাটস্কি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, রাশিয়ার মহাসাগরীয় অঞ্চলে পর্যাপ্ত পারমাণবিক সাবমেরিন রয়েছে, যারা প্রয়োজন হলে যুক্তরাষ্ট্রের জবাব দিতে সক্ষম।

এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, গভীর সমুদ্রে পারমাণবিক শক্তির ভারসাম্য এখন কার পক্ষে? যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয় দেশের সাবমেরিন বহরের কাঠামো ও সক্ষমতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উভয় পক্ষই চূড়ান্তভাবে সজ্জিত।

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর বর্তমান সাবমেরিন বহরে রয়েছে অন্তত ৫১টি পারমাণবিক চালিত সাবমেরিন। এর মধ্যে ১৪টি হচ্ছে ওহাইও ক্লাস ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন, যেগুলো ‘বুমার’ নামে পরিচিত। এগুলো নিঃশব্দে চলতে সক্ষম এবং দীর্ঘ সময় ধরে গভীর সমুদ্রে থেকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে। প্রতিটি সাবমেরিনে থাকে ২০টি ট্রাইডেন্ট-২ ডি৫ ব্যালিস্টিক মিসাইল।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বহরে রয়েছে তিন শ্রেণির আক্রমণাত্মক পারমাণবিক সাবমেরিন ভার্জিনিয়া-ক্লাস, সিউলফ-ক্লাস এবং লস অ্যাঞ্জেলেস-ক্লাস। এসব সাবমেরিন শত্রু জাহাজ ও সাবমেরিন শনাক্ত ও ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়, পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি, মাইন যুদ্ধ ও বিশেষ অভিযানেও সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত। ভার্জিনিয়া-ক্লাস যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আধুনিক সাবমেরিন, যার মধ্যে বর্তমানে ২৪টি সক্রিয় রয়েছে। এই সাবমেরিনগুলোতে রয়েছে উন্নত সেন্সর, টর্পেডো ব্যবস্থা এবং বিশেষ কমান্ডো মিশনের জন্য লক-ইন/লক-আউট চেম্বার।

অন্যদিকে রাশিয়ার সাবমেরিন বহর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বড়। প্রায় ৬৪টি পারমাণবিক সাবমেরিন রয়েছে রাশিয়ার নৌবাহিনীতে, যার মধ্যে অন্তত ১৪টি ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন। এই বহরের অন্যতম আধুনিক প্ল্যাটফর্ম হলো বোরেই-ক্লাস, যার মধ্যে বর্তমানে আটটি সক্রিয় রয়েছে। প্রতিটি বোরেই সাবমেরিনে রয়েছে ১৬টি বুলাভা মিসাইল এবং ৬টি টর্পেডো লঞ্চার। এগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী এবং একাধিক ভূমিকা পালনে সক্ষম।

রাশিয়ার নৌবাহিনীতে আরও রয়েছে ইয়াসেন-ক্লাস সাবমেরিন, যা আকারে ছোট হলেও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন। এগুলোতে থাকে দূরপাল্লার ক্যালিবার বা অনিক্স ক্ষেপণাস্ত্র। এ ছাড়া আকুলা-শ্রেণির (শার্ক-ক্লাস) সাবমেরিনগুলোও এখনো রাশিয়ার কৌশলগত ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এগুলো টর্পেডো ছাড়াও বহন করতে পারে গ্রানিত ও ক্যালিবার শ্রেণির ক্ষেপণাস্ত্র।

-রফিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ