৫৪ বছরে বাংলাদেশ কী দিয়েছে, ভারত কী নিয়েছে?

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল অনিবার্য এবং গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের পরিক্রমায় এই সম্পর্ক কখনো উষ্ণতা ছুঁয়েছে, আবার কখনো দ্বিধা ও টানাপোড়েনের মধ্যেও গড়িয়েছে। বিশেষ করে ১৯৭২ থেকে ২০২5 পর্যন্ত সময়কাল ছিল রাজনৈতিক পরিবর্তন, নিরাপত্তা জটিলতা, আঞ্চলিক ভূরাজনীতি এবং অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতার বিচারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৭২: মৈত্রী চুক্তির সূচনা
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক চুক্তি হয় ভারতের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদি "বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি"। একই বছর একটি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়, যার অধীনে ভারত যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে খাদ্য, ওষুধ, শিল্প কাঁচামাল ও নির্মাণ সামগ্রী রফতানি করে।
১৯৭2–1975: সহযোগিতার স্বর্ণযুগ
এই সময়টি ছিল দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহায়তা, যৌথ উদ্যোগে শিল্প স্থাপন এবং ট্রানজিট সুবিধা বিনিময়ের সময়কাল। তবু সীমান্তবর্তী অঞ্চলে চোরাচালান ছিল বড় উদ্বেগের বিষয়, যা ভারসাম্যহীন বাণিজ্যের সূচনা করে।
১৯৭৫: মোড় ঘোরানো বছর
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড ও সরকার পতনের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন মোড়ে প্রবেশ করে। ফারাক্কা বাঁধ ইস্যু, সীমান্ত উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক মতবিরোধ বাণিজ্য সম্পর্ককে ব্যাহত করে।
১৯৮২–১৯৯০: এরশাদ আমলে সম্পর্ক স্থিতিশীল
স্বৈরশাসক এরশাদের আমলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তুলনামূলক স্থিতিশীল ছিল। ১৯৮৫ সালে বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষার জন্য যৌথ কমিশন গঠন হয়।
১৯৯৬: ফারাক্কা চুক্তি ও বাণিজ্য পুনরুজ্জীবন
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এলে ৩০ বছরের ফারাক্কা পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটি রাজনৈতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতায় নতুন বার্তা দেয়।
২০০১–২০০৬: প্রতিরোধ ও বাণিজ্য ঘাটতির উদ্বেগ
বিএনপি সরকারের সময় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আবারও শীতল হয়। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড ও বাণিজ্য ঘাটতির অভিযোগ নতুন মাত্রা পায়। এই সময় ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশে নানা অশুল্ক বাধা দেখা দেয়।
২০০৯–২০১৮: ‘সোনালী অধ্যায়’
আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে। এই সময় দুই দেশ ১০টিরও বেশি বাণিজ্য ও ট্রানজিট সংক্রান্ত চুক্তি করে।
উল্লেখযোগ্য চুক্তিসমূহ:
২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা দুদেশের বাণিজ্য ও আঞ্চলিক সংযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ২০১০ সালে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তি নবায়নের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও আনুষ্ঠানিক ও দীর্ঘস্থায়ী রূপ পায়। ২০১১ সালে স্বাক্ষরিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তি সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করে এবং একইসঙ্গে এলসি সীমা বাড়ানোয় রফতানিকারকরা উপকৃত হন। ২০১৫ সালে সড়ক ও রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি সংক্রান্ত চুক্তি আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। এরপর ২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত পেট্রোলিয়াম ট্রানজিট চুক্তির মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশ হয়ে ত্রিপুরায় জ্বালানি পরিবহন শুরু করে, যা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার এক নতুন মাত্রা যোগ করে।
এই সময় ভারত বাংলাদেশের অন্যতম বড় রফতানি গন্তব্যে পরিণত হয়, যদিও বাণিজ্য ভারসাম্য এখনও ভারতের দিকে ঝুঁকে থাকে।
২০২4: রাজনৈতিক পালাবদল ও নতুন বাস্তবতা
২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আবারও অনিশ্চয়তায় পড়ে। রাজনৈতিক আশ্রয়, সীমান্ত উত্তেজনা ও বাণিজ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ভারতীয় পণ্যে শুল্ক বাড়ানো, ট্রাক আটকে দেওয়া, ট্রানজিট সুবিধায় স্থগিতাদেশসহ একাধিক পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সম্পর্কের ইতিহাস কেবল অর্থনীতিকেই নয়, রাজনীতি, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং জনগণের অভ্যন্তরীণ অনুভূতিকেও প্রতিফলিত করে। ২০২৫ এ দাঁড়িয়ে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন নতুন সরকার ও রাজনৈতিক বাস্তবতা কীভাবে এই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ রূপ নির্ধারণ করবে?
-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেয়ারবাজারে গেম্বলারদের দৌরাত্ম্য: আস্থা ফেরাতে চাই কঠোর শাস্তি ও কাঠামোগত সংস্কার
- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের দীর্ঘ ছুটি, চালু থাকবে জরুরি সেবা
- বাংলাদেশে সেনা-সরকার উত্তেজনা ও ‘কু’ এর গুঞ্জন: নেপথ্যে কি?
- নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে কারা টিকে থাকবে, কারা হারিয়ে যাবে?
- সেনাপ্রধানের বক্তব্য, জুলকারনাইন তাতে যা বললেন!
- নাহিদের স্পষ্ট বার্তা: এনসিপিতে নেই দুই উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ
- তারকা পরিচিতি: রক্ষাকবচ না কি সমাজবিমুখ অব্যাহতি?
- বিএনপির সালাউদ্দিনকে নিয়ে কি লিখলেন প্রেস সচিব শফিকুল?
- বাংলাদেশে আন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে মৌলিক অধিকার হুমকিতে
- সড়ক দুর্ঘটনায় সেনা কর্মকর্তা নিহত
- মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কেন অনিশ্চিত
- ডিসেম্বরে নির্বাচন চান সেনাপ্রধান
- "ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সব রাজনৈতিক দল অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে"
- তিন মাসে ১.১৮ লাখ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি, দেউলিয়াত্বের পথে ২০ ব্যাংক
- স্টারলিংক চালু, সরকারের দ্রুত সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কি?