স্বাস্থ্য জিজ্ঞাসা

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কীভাবে বাড়ানো যায়?

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৫ ১৬:০১:০২
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কীভাবে বাড়ানো যায়?

সত্য নিউজ:মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হচ্ছে এমন এক প্রাকৃতিক ঢাল, যা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও নানা রকম সংক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করে। এই ক্ষমতা যত বেশি, তত সহজেই আমরা অসুখবিসুখ থেকে দূরে থাকতে পারি। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে—সঠিক খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং নিয়মিত কিছু সহজ অভ্যাস আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারে।

পুষ্টিকর খাবার খাওয়া সবচেয়ে বড় অস্ত্র

দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে প্রথমেই দরকার সুষম খাদ্য। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় তাজা ফলমূল ও শাকসবজি রাখা উচিত, যাতে থাকে ভিটামিন সি, বি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আঁশ। টকজাতীয় ফল যেমন—কমলা, লেবু, আমলকী এবং পেয়ারা রোগ প্রতিরোধে ভীষণ কার্যকর। একইসঙ্গে বাদাম, ডিম, মাছ ও মাংস থেকে প্রোটিন পাওয়া যায়, যা দেহের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে। এসব খাবার শুধু রোগ প্রতিরোধই নয়, সামগ্রিকভাবে শরীরকে রাখে ফিট ও চাঙ্গা।

দুধ-দইয়ে গড়া অন্ত্রের স্বাস্থ্য

দই, ঘোল, কেফিরের মতো দুগ্ধজাত খাবার অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়, যা শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে অনেক সময়ই ছোটখাটো সংক্রমণ শরীরে প্রবেশ করেও তা বড় হতে পারে না। তাই প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

শরীরকে জলের মতো তরল রাখুন

শুধু খাবার নয়, পর্যাপ্ত পানি পান করাও অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং শ্লেষ্মা ঝিল্লিকে আর্দ্র রাখে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া ভেষজ চা, চিনি ছাড়া ফলের রস এবং নারকেল পানি ভালো বিকল্প হতে পারে।

ঘুম—দেহের প্রাকৃতিক মেরামতকারক

ভালো ঘুম দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। রাতে অন্তত ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। ঘুমের সময় শরীর বিশেষ কিছু প্রোটিন তৈরি করে, যা রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। ঘুমের আগে মোবাইল বা টিভি স্ক্রিন এড়িয়ে চললে ঘুমের মান ভালো হয় এবং সকালের ক্লান্তি অনেকটা কমে যায়।

নিয়মিত ব্যায়াম রোগ প্রতিরোধের চাবিকাঠি

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে হালকা থেকে মাঝারি ব্যায়াম যেমন হাঁটা, যোগব্যায়াম, সাইকেল চালানো বা স্ট্রেচিং করলে শরীর চনমনে থাকে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এতে রোগ প্রতিরোধক কোষ সক্রিয় থাকে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে দ্রুত কাজ করতে পারে।

স্ট্রেস কমান, শরীর বাঁচান

দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ শরীরের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এতে কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায়, যা দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করে দেয়। প্রতিদিন একটু ধ্যান, প্রকৃতিতে সময় কাটানো বা প্রিয়জনের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। শখের চর্চাও মানসিক চাপ কমানোর এক দারুণ উপায়।

সূর্যকে হতে দিন শক্তির উৎস

ভিটামিন ডি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকা উচিত, বিশেষ করে সকালে। সূর্যালোকের পাশাপাশি ডিম, স্যামন মাছ ও দুধও ভিটামিন ডি-র ভালো উৎস।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাও একধরনের প্রতিরক্ষা

হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরা, আশপাশ পরিষ্কার রাখা—এসব ছোট অভ্যাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখে। নাক, মুখ ও চোখে হাত দেওয়া এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এই পথেই জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে।

মিতব্যয়ী হোন চা, চিনি ও ভাতে

দিনে অনেকবার চা-কফি খাওয়া, বিশেষ করে চিনিযুক্ত, শরীরের ক্ষতি করে। একইভাবে অতিরিক্ত ভাত বা শর্করা জাতীয় খাবার ফ্যাটে পরিণত হয়, যা শরীরকে দুর্বল করে। প্রতিদিনকার খাবারে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও চর্বির সুষম অনুপাত বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাস্থ্য পরীক্ষাও প্রতিরক্ষার অংশ

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা আমাদের শরীরের ভেতরের ছোটখাটো ঘাটতি বা সমস্যা আগেভাগে ধরতে সাহায্য করে। তাই বছরে একবার হলেও রুটিন চেকআপ করানো দরকার, যাতে শরীরের কোন অংশে সমস্যা হচ্ছে তা আগে থেকেই জানা যায় এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

এই বিষয়গুলো মেনে চললে শরীর নিজেই প্রতিরক্ষা গড়ে তুলবে নানা রকম সংক্রমণের বিরুদ্ধে। তরুণ চিকিৎসক ডাঃ মাহবুবুর রহমান আম্মার বলেন, “দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা এমন একটি ঢাল, যা অনেক সময় ওষুধের চেয়েও বেশি কার্যকর হতে পারে।” তাই ওষুধের ওপর ভরসা করার আগে নিজেকে ভিতর থেকে শক্তিশালী করে তোলাই শ্রেয়।

আপনার শরীরের যত্ন নিন, কারণ আপনি ভালো থাকলে তবেই আপনার চারপাশও ভালো থাকবে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত