ভারতের ওপর ২৫% শুল্ক বৃদ্ধিতে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ০৮:৩২:০৪
ভারতের ওপর ২৫% শুল্ক বৃদ্ধিতে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রেক্ষিতে ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। বুধবার (৬ আগস্ট) রাতে এই ঘোষণার পর ভারতীয় পণ্যের আমদানি শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে, যা বাংলাদেশের ২০ শতাংশের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ এবং চীনের ৩০ শতাংশ ও পাকিস্তানের ২৯ শতাংশ শুল্কের চেয়ে যথাক্রমে ২০ ও ২১ শতাংশ বেশি। অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এই শুল্কবৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য বেশ অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

যদিও বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সরাসরি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি না থাকলেও, বাংলাদেশের তুলনামূলক কম শুল্ক হার তার তৈরি পোশাক খাতের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম পোশাক আমদানিকারক বাজার হওয়ায়, ভারতীয় রপ্তানি শুল্ক বৃদ্ধির ফলে তাদের বাজার শেয়ার সংকুচিত হতে পারে এবং তার সুফল বাংলাদেশসহ অন্য এসিয়ান উৎপাদক দেশগুলো পেতে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিবর্তন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য সুবর্ণ সুযোগের দ্বার খুলে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক যত কম হবে, ততই রপ্তানিকারীর পক্ষে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকা সম্ভব হবে। ফলে শুল্কের এই ব্যবধান বাংলাদেশের পণ্যের মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়াবে এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বিশেষ করে, মার্কিন ক্রেতারা যদি কম শুল্ক সুবিধার কারণে ভারতীয় পণ্যের বদলে বাংলাদেশের পণ্যকে অগ্রাধিকার দেন, তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মার্কেট শেয়ার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

তবে এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন দ্রুত উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো, উচ্চমান বজায় রাখা এবং লজিস্টিক অবকাঠামো উন্নত করা। মার্কিন বাজারের চাহিদা পূরণে সক্ষমতা বাড়ানো হলে বাংলাদেশ তার রপ্তানি আয় ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও ত্বরান্বিত করতে পারবে।

অন্যদিকে, এশিয়ার অন্যান্য রপ্তানিকারক দেশ যেমন ভিয়েতনাম (২০%), মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন (প্রতিটি ১৯%) ভারতের তুলনায় উল্লেখযোগ্য কম শুল্ক সুবিধা পেয়ে মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার লাভ করেছে। বিশেষ করে ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার জন্য এই সুবিধা তাদের দ্রুত বিকাশমান অ-চামড়াজাত জুতা শিল্প এবং ইলেকট্রনিকস খাতকে ভারতের প্রতিযোগিতায় চ্যালেঞ্জিং অবস্থানে এনেছে।

বর্তমানে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনা মূলত কৃষি ও গাড়ি শিল্প নিয়ে আটকে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চায়, ভারত জেনেটিক্যালি মোডিফায়েড (জিএম) ভুট্টা, সয়াবিন ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে মার্কিন কৃষিপণ্য আমদানির সুযোগ নিশ্চিত করবে। তবে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে এটি কার্যকর করা কঠিন, যা দুই দেশের বাণিজ্যে দীর্ঘস্থায়ী বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফলে, বর্তমান শুল্কনীতির কারণে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বড় ধরনের প্রতিযোগিতামূলক অসুবিধায় পড়তে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি কৌশলগত সোনালী সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে এই সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশের উচিত কেবলমাত্র শুল্ক সুবিধা নির্ভর না থেকে উৎপাদন মান, বহুমুখী বাজার অন্বেষণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো, যাতে দীর্ঘমেয়াদে মার্কিন বাজারে টেকসই অবস্থান প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়।

-শরিফুল

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ