সংসদ ভবনে মানুষের ঢল: শহীদ হাদির জানাজায় লাখো মানুষের ভিড়

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অকুতোভয় নেতা ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিতে আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর থেকেই জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় মানুষের ঢল নেমেছে। নির্ধারিত সময় দুপুর ২টা হলেও সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত এবং দেশের দূর-দূরান্তের জেলাগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ জানাজা স্থলে এসে জড়ো হতে থাকেন। সাধারণ মানুষের দাবি অনুযায়ী এই জানাজা হতে যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বৃহৎ এক গণজমায়েত। ভিড় সামাল দিতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরো এলাকা জুড়ে বিশেষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাধারণ জনতাকে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। ভিড় সামলাতে প্রতিটি প্রবেশপথে বসানো হয়েছে কড়া নিরাপত্তা চৌকি। জানা গেছে যে বিশেষ নিরাপত্তার স্বার্থে চীন থেকে আনা আটটি অত্যাধুনিক আর্চওয়ে গেট বসানো হয়েছে যার ভেতর দিয়ে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ছাত্র-জনতা জানাজা স্থলে প্রবেশ করছেন। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে জানাজা স্থলের চারপাশের উঁচু ভবনগুলো থেকেও বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বলছেন যে এই জানাজা কেবল একজন নেতার বিদায় নয় বরং এটি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক ঐক্যবদ্ধ শক্তির বহিঃপ্রকাশ।
এর আগে বেলা পৌনে ১১টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে হাদির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। সেখান থেকে মরদেহ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে গোসলের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এনএইচএ-এর সদস্য সচিব ডা. মো. আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন যে জানাজা শেষে শহীদ হাদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে সমাহিত করা হবে। উল্লেখ্য যে গত ১২ ডিসেম্বর বিজয়নগরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হওয়ার পর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গতকাল সন্ধ্যায় তার মরদেহ দেশে পৌঁছানোর পর থেকেই শোকের ছায়া নেমে আসে দেশজুড়ে।
হাদির জানাজা পড়াবেন বড় ভাই: সংসদ ভবনে শেষ বিদায়ের প্রস্তুতি
জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম রূপকার ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির শেষ বিদায়ের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজার নামাজে ইমামতি করবেন মরহুমের বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ও ন্যাশনাল হেলথ অ্যালায়েন্সের সদস্য সচিব ডা. মো. আব্দুল আহাদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জানাজা শেষে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।
শহীদ শরিফ ওসমান হাদির লাশের ময়নাতদন্ত আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তার মরদেহ মর্গে নেওয়া হয়। এ সময় সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের বিশেষ দল মর্গ এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। হাদির স্বজন ও সহযোদ্ধাদের পাশাপাশি ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষকে হাসপাতালের সামনে ভিড় করতে দেখা যায়। ময়নাতদন্ত শেষে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী গোসল ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সেরে মরদেহ সরাসরি সংসদ ভবনের জানাজা স্থলের অভিমুখে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
হাদির মৃত্যুতে আজ শনিবার পুরো বাংলাদেশে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে। দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। এছাড়া বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও হাদির স্মরণে পতাকা অর্ধনমিত রয়েছে। গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান হাদি। এরপর ঢাকা মেডিকেল ও এভারকেয়ার হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই তরুণ বিপ্লবী নেতা।
শরিফ ওসমান হাদি: একটি প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ও বিপ্লবের অমর উপাখ্যান
শরিফ ওসমান হাদি কেবল একটি নাম নন বরং তিনি চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের এক জ্বলন্ত প্রতীক এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীনতার এক সাহসী কণ্ঠস্বর। ফ্যাসিবাদের চোখে চোখ রেখে সত্য উচ্চারণের যে সাহস তিনি দেখিয়েছিলেন তা সমকালীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত। জুলাইয়ের সেই উত্তাল দিনগুলোতে যখন চারদিকে আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা তখন হাদি হয়ে উঠেছিলেন অবদমিত মানুষের কণ্ঠস্বর। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সত্য বলার ঝুঁকি থাকলেও নিশ্চুপ থাকার দায় আরও বেশি ভয়াবহ। আধিপত্যবাদ ও শোষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবিচল থেকে তিনি লালন করেছিলেন এক নতুন ও ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশের স্বপ্ন।
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া হাদি ছিলেন ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। তার বাবা ছিলেন একজন মাদ্রাসা শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম। ঝালকাঠির এন এস কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন তিনি। ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থান তাকে রাজনীতির সম্মুখভাগে নিয়ে আসে। জুলাই শহীদদের অধিকার রক্ষা এবং আধিপত্যবাদবিরোধী অবস্থানে তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই তিনি গড়ে তুলেছিলেন ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ যা নিপীড়িত তরুণদের এক শক্তিশালী প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়।
হাদি প্রায়ই বলতেন যে ভয় পেলে চলবে না কারণ ইতিহাস ভীরুদের ক্ষমা করে না। তাকে দমাতে আসা অসংখ্য হুমকি বা শত্রুর ভয়কে তিনি তুচ্ছজ্ঞান করতেন। তিনি হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন যে বুলেট ছাড়া কেউ তাকে থামাতে পারবে না। সত্যিই গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্সকালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা ঘাতকের বুলেট তার মস্তিষ্ক ভেদ করে দেয়। আট দিনের দীর্ঘ লড়াই শেষে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো দেশে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাকে প্রতিবাদের এক ‘আইকন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন তাকে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার অকুতোভয় যোদ্ধা হিসেবে স্মরণ করেছেন।
শরিফ ওসমান হাদি আগামীর বাংলাদেশে এক নতুন ধারার রাজনীতির স্বপ্ন দেখতেন। তিনি গতানুগতিক পুরোনো রাজনীতির কঠোর সমালোচক ছিলেন এবং জনগণকে সরাসরি সম্পৃক্ত করতে ‘চা-শিঙাড়া’ আড্ডার মতো ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালন করতেন। তার রাজনৈতিক দর্শন ছিল কাঠামোগত পরিবর্তন এবং নৈতিক রাজনীতির প্রতিষ্ঠা। তিনি প্রশ্ন তুলতেন যে রাষ্ট্র কেন বারবার সাধারণ মানুষের বিপক্ষে দাঁড়ায়। আজ যখন বাংলাদেশ এক গভীর রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তখন হাদির সেই সাহসী প্রশ্নগুলো আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। হাদি চলে গেছেন ঠিকই কিন্তু তার রেখে যাওয়া স্বপ্ন ও আদর্শ এখন হাজারো তরুণের পাথেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শপথ নিয়েছেন যে প্রতিটি রাজপথে এখন থেকে হাজারো হাদি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখবে।
ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে হাদির মরদেহ: কড়া পাহারায় সেনাবাহিনী
জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘর থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে মরদেহটি মর্গে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে রাখেন। হাদির স্বজন, সহকর্মী এবং রাজনৈতিক সহযোদ্ধারাও এই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ভোর থেকেই প্রিয় এই নেতাকে শেষবারের মতো দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শত শত মানুষ হাসপাতালের সামনে ভিড় করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে যে ময়নাতদন্ত শেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার মরদেহ গোসল করানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর ধর্মীয় ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে কফিন নিয়ে যাওয়া হবে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে যে আজ দুপুর ২টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হবে যা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ সংলগ্ন এলাকাতেও সম্প্রসারিত হতে পারে।
জানাজা উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। যারা জানাজায় অংশগ্রহণ করবেন তাদের কোনো প্রকার ভারী ব্যাগ বা সন্দেহজনক বস্তু সাথে না আনার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থে সংসদ ভবন ও এর আশপাশের পুরো এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় সিঙ্গাপুর থেকে হাদির মরদেহ ঢাকায় পৌঁছানোর পর বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তা হিমাগারে রাখা হয়েছিল। ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে সংসদ ভবনে জানাজা শেষে বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশেই তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে।
বিজিবি এখন সীমান্ত নিরাপত্তায় আরও পেশাদার: প্রধান উপদেষ্টা
দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি সীমান্ত সুরক্ষায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবির ভূমিকার প্রশংসা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২৫’ উপলক্ষে দেওয়া এক বিশেষ বাণীতে তিনি বিজিবি সদস্যদের ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে অভিহিত করেন। চোরাচালান বন্ধ, মাদক নির্মূল এবং নারী ও শিশু পাচার রোধে বাহিনীর নিরলস পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন যে বিজিবি দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন যে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবি অত্যন্ত পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমন এবং পুশইন রোধসহ বিভিন্ন ধরনের জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় বাহিনীর সদস্যরা সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। বিজিবি দিবস উপলক্ষে তিনি বাহিনীর সকল স্তরের সদস্য ও তাদের পরিবারকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। ড. ইউনূস উল্লেখ করেন যে এই বাহিনী এ অঞ্চলের এক সুদীর্ঘ ইতিহাস ও অত্যন্ত গৌরবময় ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার বহন করছে।
মুক্তিযুদ্ধে বিজিবির অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন যে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে দুজন বীরশ্রেষ্ঠসহ এই বাহিনীর ১১৯ জন সদস্য খেতাব পেয়েছেন এবং ৮১৭ জন সদস্য দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। তাদের এই বিশাল আত্মত্যাগ বিজিবির ইতিহাসকে চিরকাল মহিমান্বিত করে রাখবে। তিনি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত থেকে বিভিন্ন সময়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। বাণীর শেষে তিনি বিজিবি দিবস-২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন এবং বাহিনীকে আরও গতিশীল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি: মূল্যস্ফীতির চাপে দিশাহারা সাধারণ মানুষ
উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের দ্বিমুখী চাপে গত তিন বছর ধরে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে পৌঁছানোর পর তা বিগত ১৫ মাসে কিছুটা কমলেও এখনো উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০২৫ সালের নভেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে যা আগের মাসের চেয়ে বেশি। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনো ৭ শতাংশের ওপরে থাকায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর সঞ্চয় শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং তারা ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে বাংলাদেশ বর্তমানে একটি ‘স্ট্যাগফ্লেশন’ বা স্থবিরতা ও মূল্যস্ফীতির ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। একদিকে দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী অন্যদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসছে। সরকারের সংকুচিত মুদ্রানীতি এবং নীতি সুদ হার ১০ শতাংশে উন্নীত করার ফলেও বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব খুব একটা দৃশ্যমান হচ্ছে না। এর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সরকারের দ্বৈত আচরণকে। একদিকে বাজারে অর্থের সরবরাহ কমাতে সুদ হার বাড়ানো হচ্ছে অন্যদিকে রুগ্ণ ব্যাংকগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ পরিচালন ব্যয় মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে উদারহস্তে অর্থ সরবরাহ ও ঋণ নেওয়া হচ্ছে। ফলে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না এবং মূল্যস্ফীতি উচ্চ স্তরেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
এরই মধ্যে দেশের শ্রমবাজারে বড় ধরনের ধস নেমেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, জ্বালানি সংকট এবং কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে শিল্পোদ্যোগ থমকে দাঁড়িয়েছে। এক হিসাবে দেখা যায় বর্তমানে দেশে প্রায় এক কোটি মানুষ বেকার যার মধ্যে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। গত দুই বছরে প্রায় ২০ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন এবং চলতি অর্থবছরে আরও আট লাখ মানুষ বেকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত বা গার্মেন্টস সেক্টরে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ থেকে কমে ৬ শতাংশে নেমে আসায় নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। এর বিপরীতে সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে যা বিনিয়োগের পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলছে।
সামগ্রিক এই অর্থনৈতিক অস্থিরতার ফলে দারিদ্র্যের হার আবারও বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের সতর্কবার্তা অনুযায়ী চলতি বছর দারিদ্র্যের হার ২১ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং প্রায় সোয়া ছয় কোটি মানুষ দারিদ্র্যের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে নেমে আসায় কৃষি ও শিল্প—উভয় উৎপাদনশীল খাতেই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে কেবল মুদ্রানীতি দিয়ে হবে না বরং উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজারে পণ্য সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে হবে। একই সঙ্গে সিন্ডিকেটের কারসাজি ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং সরকারের বিলাসজাত পরিচালন ব্যয় কমিয়ে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
হাদি হত্যার বিচার দাবিতে উত্তাল দেশ: দিকে দিকে বিক্ষোভ
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে দেশজুড়ে নজিরবিহীন বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় প্রতিটি বড় শহরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে দিনভর ‘আগ্রাসনবিরোধী সমাবেশ’ করেছে ছাত্র-জনতা। সমাবেশের এক পর্যায়ে ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম ঘোষণা দেন যে এখন থেকে শাহবাগ মোড়ের নাম হবে ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’। সমাবেশ থেকে হাদির খুনিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
রাজধানীর উত্তাল পরিস্থিতির জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে যে স্থগিত পরীক্ষার নতুন সূচি শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তবে সার্বিক নিরাপত্তা এবং জুলাইবিরোধী শক্তির নাশকতার আশঙ্কায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম শাহবাগের অবস্থান কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দেন। তিনি এক বিবৃতিতে সাধারণ মানুষকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন যাতে জনগণের ক্ষোভকে ব্যবহার করে কোনো হঠকারী গোষ্ঠী অগ্নিকাণ্ড বা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে।
ঢাকার বাইরেও বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে। রাজশাহীতে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বুলডোজার দিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিয়েছে এবং ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন উচ্ছেদের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ঝিনাইদহে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু ও সাবেক চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাসের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বান্দরবানে সাবেক পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিংয়ের বাসভবনে আগুন দেওয়া হলে সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। এছাড়া গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘জয় বাংলা চত্বর’ এর নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ হাদি চত্বর’ নামকরণ করেছে।
দেশের প্রতিটি প্রান্তে এখন হাদি হত্যার বিচারের দাবি ও শোকের আবহ বিরাজ করছে। লক্ষ্মীপুর ও নওগাঁয় কফিন মিছিল বের করা হয়েছে এবং ফেনী, খুলনা, নীলফামারী, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলায় হাদির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর চার দফা দাবিতে স্মারকলিপি পেশ করেছে। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে হাদি হত্যার পরিকল্পনাকারীদের দ্রুত শনাক্তকরণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহি নিশ্চিত করা। হাতিয়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ঘেরাও করে খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীসহ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত রেখেছেন।
বেরিয়ে এলো ওসমান হাদি হত্যার ভয়ংকর পরিকল্পনা
জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ ওরফে ‘শাহীন চেয়ারম্যান’-এর নাম উঠে এসেছে। গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, চাঞ্চল্যকর এই ‘কিলিং মিশন’ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থ এবং অস্ত্রের জোগানদাতা ছিলেন খোদ শাহীন চেয়ারম্যান নিজেই। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানতে পেরেছেন, এই হত্যাকাণ্ডে শাহীনের সহযোগী হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা সরাসরি যুক্ত ছিলেন।
গোয়েন্দা সূত্র ও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের তথ্যানুযায়ী, শাহীন চেয়ারম্যান ছাড়াও হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। হাদির ওপর হামলার পর ঘাতকদের ঢাকা থেকে সীমান্ত পর্যন্ত নিরাপদে পালিয়ে যেতে এই হামিদই সহায়তা করেছিলেন বলে প্রমাণ মিলেছে। মূলত জুলাই বিপ্লবে শরিফ ওসমান হাদির অকুতোভয় ভূমিকা এবং ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তার আওয়ামী লীগ বিরোধী কঠোর অবস্থানের কারণে তাকে ‘হিটলিস্টের’ এক নম্বরে রাখা হয়েছিল। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ হাদিকে তাদের দলের অস্তিত্বের জন্য বড় বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করেই এই হত্যার ছক কষে।
অভিযুক্ত শাহীন আহমেদ দীর্ঘদিন ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন এবং সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ডানহাত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এলাকায় ‘মাফিয়া ডন’ হিসেবে পরিচিত শাহীনের বিরুদ্ধে বহু আগে থেকেই পুলিশের খাতায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাবে তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ৫ আগস্ট সরকারের পতন হলে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে কিছুদিন চুপচাপ থাকলেও গত তিন-চার মাস ধরে তিনি আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে দেশে থাকা আওয়ামী লীগের ‘স্লিপার সেল’-এর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কয়েকটি হোয়াটসঅ্যাপ কল এবং এসএমএস-এর সূত্র ধরে হাদি হত্যায় শাহীন চেয়ারম্যানের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। হত্যার আগে ও পরে কিলারদের সঙ্গে পলাতক ছাত্রলীগ নেতা হামিদের একাধিকবার যোগাযোগের ডিজিটাল প্রমাণও তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। এছাড়া তদন্তে কয়েকজন রাজনীতিকের নামও উঠে এসেছে, যা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তারা সবদিক বিবেচনায় রেখে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করছেন এবং খুব শিগগিরই মাস্টারমাইন্ডসহ পরিকল্পনাকারীদের সবার নাম জনসম্মুখে প্রকাশ করা সম্ভব হবে।
হাদির জানাজা উপলক্ষে রাজধানীতে বিশেষ ট্রাফিক নির্দেশনা
আগামীকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বাদ জোহর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ যোদ্ধা শরীফ ওসমান হাদির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজাকে কেন্দ্র করে বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগমের আশঙ্কা থাকায় রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মানিক মিয়া এভিনিউতে যান চলাচল সাময়িকভাবে সীমিত থাকবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপি জানায়, জানাজা অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থে শনিবার সকাল থেকেই খেজুর বাগান ক্রসিং থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রাখা হবে। এ কারণে নগরবাসীকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
ট্রাফিক নির্দেশনা অনুযায়ী, মিরপুর রোড দিয়ে উত্তর দিক থেকে ফার্মগেট বা সোনারগাঁও অভিমুখে যাতায়াতকারী যানবাহনকে গণভবন ক্রসিং হয়ে লেক রোড, উড়োজাহাজ ক্রসিং ও বিজয় সরণি হয়ে ফার্মগেটের দিকে যেতে হবে। একইভাবে ফার্মগেট থেকে ইন্দিরা রোড হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউমুখী যানবাহনকে খেজুর বাগান ক্রসিং হয়ে উড়োজাহাজ ক্রসিং ও লেক রোড ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
ধানমন্ডি এলাকা থেকে ফার্মগেটগামী যানবাহনের জন্য আসাদগেট ও গণভবন ক্রসিং হয়ে বিকল্প রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া আসাদগেট থেকে ফার্মগেটগামী যানগুলোকে লেক রোড ও বিজয় সরণি ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে অথবা ইন্দিরা রোড থেকে ধানমন্ডিগামী যানবাহনগুলোকে খেজুর বাগান ক্রসিং হয়ে উড়োজাহাজ ক্রসিং, লেক রোড ও আসাদগেট হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে জানাজা চলাকালীন সময়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফার্মগেট এক্সিট র্যাম্প ব্যবহার না করে এফডিসি (হাতিরঝিল) র্যাম্প ব্যবহারের জন্য চালকদের অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি।
ডিএমপি আরও জানায়, জানাজা ও দাফন কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকা এড়িয়ে চলাই সর্বোত্তম হবে। এতে নগরবাসীর ভোগান্তি কমবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে।
-রফিক
ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই সরকারের, ভাঙেনি পুরোনো সিন্ডিকেট
রাজধানীর উত্তরায় বসবাসকারী বেসরকারি চাকরিজীবী শামীমের মাসিক আয় পঁচাত্তর হাজার টাকা হলেও মায়ের ক্যানসারের চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে তিনি এখন পুরোপুরি বিপর্যস্ত। ক্যানসার আক্রান্ত মায়ের জন্য প্রতি মাসে অত্যাবশ্যকীয় ইনজেকশন পেগফিলগ্রাস্টিম কিনতে হয় তাকে, যার দাম গত এক বছরের ব্যবধানে আট হাজার টাকা থেকে বেড়ে পনেরো হাজার টাকায় ঠেকেছে। শামীমের মতো হাজারো মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এখন প্রধান দুশ্চিন্তার নাম ওষুধের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ সাতষট্টি হাজার মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন লক্ষাধিক মানুষ। গবেষণায় দেখা গেছে, অর্থাভাবে চিকিৎসা মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়ার কারণেই বেশিরভাগ রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।
এক সময় ক্যানসারের ওষুধের জন্য বাংলাদেশ পুরোপুরি আমদানিনির্ভর থাকলেও বর্তমানে স্থানীয় কোম্পানিগুলো চাহিদার প্রায় পঁচানব্বই শতাংশ ওষুধ উৎপাদন করছে। সরকার কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিলেও ওষুধের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে। পেগফিলগ্রাস্টিমের মতো জীবনদায়ী ওষুধের দাম কোম্পানিভেদে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা রাখা হচ্ছে, অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে একই ওষুধের দাম মাত্র দেড় হাজার রুপি বা বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই হাজার টাকার কিছু বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে ওষুধের দামের এই বিশাল পার্থক্যের জন্য বিশেষজ্ঞরা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ব্যর্থতা এবং কোম্পানিগুলোর সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন। অভিযোগ রয়েছে, গত ১৫ বছর ধরে সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করত এবং সরকার পরিবর্তনের পরও সেই প্রভাবে ভাটা পড়েনি।
গত পাঁচ বছরে দেশে সব ধরনের ওষুধের দাম অন্তত তিন গুণ বেড়েছে। গ্যাস্ট্রিক, অ্যান্টিবায়োটিক, ডায়াবেটিসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধের দাম গত দেড় বছরেও কমার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। গেঁটে বাতের ওষুধ অ্যানাফ্লেক্স ম্যাক্স কিংবা দাঁত ব্যথার ওষুধ মারভ্যানের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। অ্যাজমা রোগীদের জন্য জরুরি ডক্সোমা ট্যাবলেটের দামও বেড়েছে প্রায় ষাট শতাংশ। বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও পরিচালন ব্যয় বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছে। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছ থেকে মেধাস্বত্বে ছাড় পাওয়ার পরেও বাংলাদেশে ওষুধের উৎপাদন খরচ কম হওয়া উচিত। কিন্তু কোম্পানিগুলোর অতিমুনাফার প্রবণতা এবং খুচরা বাজারে তদারকির অভাবে সাধারণ মানুষের পকেট কাটা যাচ্ছে।
ওষুধের এই উচ্চমূল্য কেবল স্বাস্থ্যগত সমস্যাই নয়, বরং বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটও তৈরি করছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইকিউভিআইএ-র তথ্যমতে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের ৪৪ শতাংশই খরচ হয় শুধু ওষুধ কিনতে, যেখানে বৈশ্বিক গড় মাত্র ১৫ শতাংশ। ২০২২ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপে উঠে এসেছে এক ভয়াবহ চিত্র, যেখানে দেখা গেছে ওষুধের অতিরিক্ত ব্যয়ের ভার সইতে না পেরে প্রতি বছর প্রায় ৬১ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। সরকার গত আগস্টে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম নির্ধারণের উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন বাজারে দেখা যাচ্ছে না।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।
পাঠকের মতামত:
- সংসদ ভবনে মানুষের ঢল: শহীদ হাদির জানাজায় লাখো মানুষের ভিড়
- সৌদি আরবে উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশিদের জন্য বড় সুখবর
- হাদির জানাজা পড়াবেন বড় ভাই: সংসদ ভবনে শেষ বিদায়ের প্রস্তুতি
- অ্যাভাটারের নতুন ট্রেলারে ক্রিস ইভান্স: উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া
- মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত কামনায় জানাজার দোয়া ও এর তাৎপর্য
- ২০৩৫ সালে চাঁদে ফুটবল ম্যাচ? বিজ্ঞানীদের অবিশ্বাস্য দাবি
- গাজায় ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি: ইসরাইলি গোলার আঘাতে ঝরল প্রাণ
- স্বর্ণের বাজারে আগুন: আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন আকাশছোঁয়া দাম
- শরিফ ওসমান হাদি: একটি প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ও বিপ্লবের অমর উপাখ্যান
- নির্বাচন পেছানোর গভীর ষড়যন্ত্র চলছে: মির্জা ফখরুল
- ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে হাদির মরদেহ: কড়া পাহারায় সেনাবাহিনী
- বয়স বাড়লেও টেস্টোস্টেরন থাকবে অটুট: জানুন কার্যকরী উপায়
- শনিবার দুপুরে ঢাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
- আজকের খেলার সূচি: টিভিতে সরাসরি দেখবেন যেসব ম্যাচ
- ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়: ২০ ডিসেম্বর
- আজ ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়
- রাজধানীতে আজ কোথায় কী? বের হওয়ার আগে জানুন আজকের সূচি
- বিজিবি এখন সীমান্ত নিরাপত্তায় আরও পেশাদার: প্রধান উপদেষ্টা
- আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি: মূল্যস্ফীতির চাপে দিশাহারা সাধারণ মানুষ
- ঢাকা ছাড়ছেন ডা. জুবাইদা রহমান: কাতার বিমানে যাত্রা
- হাদি হত্যার বিচার দাবিতে উত্তাল দেশ: দিকে দিকে বিক্ষোভ
- বেরিয়ে এলো ওসমান হাদি হত্যার ভয়ংকর পরিকল্পনা
- জরুরি বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটি, সভাপতিত্বে তারেক রহমান
- এবার মুখোমুখি ভারত ও পাকিস্তান
- হাদির আসনে নির্বাচনে নামছেন যিনি
- হাদির জানাজা উপলক্ষে রাজধানীতে বিশেষ ট্রাফিক নির্দেশনা
- মরুভূমির দেশে সাদা চাদর, তুষারে ঢাকল সৌদি পাহাড়
- শনিবারের যে পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা
- ওসমান হাদির জানাজা শনিবার জানাজা কোথায় ও কখন
- জুমার দিনে দরুদ পাঠের বিশেষ ফজিলত
- শেয়ারবাজারের সাপ্তাহিক পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ
- হাদি হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল শাহবাগ: বাড়ছে জনস্রোত
- থামবে বয়সের চাকা: বৃদ্ধ কোষকে তারুণ্য দেবে ‘জাদুকরী ফুল’
- রাজশাহী আ.লীগ অফিস এখন ধ্বংসস্তূপ
- জুমার দিন কেন সেরা? হাদিসে বর্ণিত ৫টি বড় কারণ
- হাসিনার গুলিই দমাতে পারেনি, সন্ত্রাসীদের তোয়াক্কা করি না
- ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই সরকারের, ভাঙেনি পুরোনো সিন্ডিকেট
- শুক্রবার সোনার বাজারে কী অবস্থা? জানুন আজকের দর
- হাদির মৃত্যু ঘিরে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
- বদলে গেল ইতিহাস: পৃথিবীতে প্রাণের জন্ম নিয়ে বিজ্ঞানীদের নতুন দাবি
- প্রতিদিন হত্যার হুমকি পাচ্ছি: হাসনাত আব্দুল্লাহ
- হাড়ের ব্যথায় ভুগছেন? শুধু বয়স নয়, দায়ী আপনার ৫টি অভ্যাস
- লিখিত পরীক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তি
- হাদির প্রথম জানাজা কোথায় ও কখন? জানাল ইনকিলাব মঞ্চ
- হাদি মৃত্যুতে জ্বলছে দেশ: মিডিয়া অফিস ও হাই কমিশনে হামলা
- খেলার খবর: বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচসহ আজকের টিভি সূচি
- খুলনায় সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা
- ছুটির দিনেও উত্তপ্ত ঢাকা: আজ কোথায় কী কর্মসূচি?
- এবার এনসিপি নেতা হান্নান মাসউদকে মেরে ফেলার হুমকি
- হাদির মৃত্যুতে শায়খ আহমাদুল্লাহ ও আজহারীর আবেগঘন বার্তা
- বুধবার টানা ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়
- শনি-রবিবার বিদ্যুৎ থাকবে না বহু এলাকায়
- মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি শুরুর সময়সূচি প্রকাশ
- এমপি হওয়ার আগেই ভিআইপি প্রোটোকল পেলেন হাদি: ডা. মাহমুদা মিতু
- রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন যেসব এলাকা
- বাজুসের নতুন ঘোষণা: আজ থেকে কার্যকর স্বর্ণের বর্ধিত দাম
- ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা
- দেশের বাজারে স্বর্ণের দামের নতুন রেকর্ড
- স্বর্ণের বাজারে আগুন: আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন আকাশছোঁয়া দাম
- ১৬ অক্টোবর ২০২৫: জেনে নিন আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
- সিঙ্গাপুরে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ওসমান হাদি
- আগামী ৫ দিনের আবহাওয়ার আগাম বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস
- মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দেশসেরা জাহাঙ্গীর আলম শান্ত
- ডলারসহ বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রার আজকের বিনিময় হার
- কারা ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না, স্পষ্ট করল নির্বাচন কমিশন








