জাতীয় নির্বাচনের সংশোধিত তফসিল ঘোষণা

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২০ ১৮:৪৯:৫১
জাতীয় নির্বাচনের সংশোধিত তফসিল ঘোষণা
ছবি : সংগৃহীত

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল কিছুটা সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে ইসি জানিয়েছে যে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং তা নিষ্পত্তির সময়সীমায় এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংশোধিত সূচি অনুযায়ী আপিল দায়েরের সময় দুই দিন কমিয়ে তা নিষ্পত্তির জন্য আরও দুই দিন সময় বাড়ানো হয়েছে। মূলত মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়াগুলো আরও নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতেই এই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

ইসির সংশোধিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের সময়সীমা আগে ৫ থেকে ১১ জানুয়ারি নির্ধারিত থাকলেও বর্তমানে তা কমিয়ে ৫ থেকে ৯ জানুয়ারি করা হয়েছে। এর বিপরীতে আপিল নিষ্পত্তির সময়সীমা ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারির পরিবর্তে বাড়িয়ে ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ আপিল নিষ্পত্তির জন্য এখন মোট নয় দিন সময় পাওয়া যাবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন কর্তৃক গত ১১ ডিসেম্বর ঘোষিত মূল তফসিলের অন্যান্য সময়সূচি অপরিবর্তিত রয়েছে। সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ এর ক্ষমতা বলে কমিশন এই সাধারণ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে।

ঘোষিত সূচি অনুযায়ী আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ আগামী ২৯ ডিসেম্বর নির্ধারিত রয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের কাজ চলবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে ২১ জানুয়ারি। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ৩০০ আসনে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। একই দিনে সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫-এর ওপর একটি জাতীয় গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে এই ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে নির্বাচন কমিশন পুনরায় নিশ্চিত করেছে।


এমিরেটস ফ্লাইটে দেশে ফিরলেন সুদান সীমান্তে শহীদ ৬ বীর সেনা

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২০ ১৮:৪২:৩১
এমিরেটস ফ্লাইটে দেশে ফিরলেন সুদান সীমান্তে শহীদ ৬ বীর সেনা
ছবি : সংগৃহীত

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্বরত অবস্থায় সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় শাহাদতবরণকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় বীর সদস্যের মরদেহ আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দেশে এসে পৌঁছেছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে আজ বেলা ১১টা ৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে তাদের মরদেহ ঢাকায় আনা হয়। শহীদদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আগামীকাল রোববার (২১ ডিসেম্বর) ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে তাদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর যথাযথ সামরিক মর্যাদায় তাদের নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে হেলিকপ্টারে করে পাঠিয়ে দাফন সম্পন্ন করা হবে।

আইএসপিআর জানায় যে গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে বর্বরোচিত ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। এই নজিরবিহীন হামলায় ঘটনাস্থলেই ৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী শহীদ হন। আজ বিমানবন্দরে মরদেহগুলো গ্রহণ করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম। এ সময় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশে জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রতিনিধি এবং উর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মরদেহ গ্রহণের সময় উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যরা স্যালুট প্রদানের মাধ্যমে তাদের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করেন।

শহীদ হওয়া এই ছয় বীর শান্তিরক্ষী হলেন— করপোরাল মো. মাসুদ রানা (নাটোর), সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম (কুড়িগ্রাম), সৈনিক শামীম রেজা (রাজবাড়ী), সৈনিক শান্ত মন্ডল (কুড়িগ্রাম), মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ) এবং লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা)। এই সন্ত্রাসী হামলায় আরও ৯ জন শান্তিরক্ষী গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৮ জন বর্তমানে কেনিয়ার নাইরোবিতে অবস্থিত আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আইএসপিআর নিশ্চিত করেছে যে চিকিৎসাধীন সকল শান্তিরক্ষী বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত। বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের এই সূর্যসন্তানদের আত্মত্যাগ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক শোকাতুর ও গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।


ইনকিলাব মঞ্চের ২৪ ঘণ্টার চূড়ান্ত আলটিমেটাম

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২০ ১৮:২৪:০৪
ইনকিলাব মঞ্চের ২৪ ঘণ্টার চূড়ান্ত আলটিমেটাম
ছবি : সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং জুলাই বিপ্লবের অকুতোভয় নেতা শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদিকে শেষ বিদায় জানানোর পর রাজধানী শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার আগে এই সমাবেশ থেকে বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদাবক্স চৌধুরীর পদত্যাগের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ঘোষণা করেছেন যে আগামীকালের মধ্যে তাদের দাবি মানা না হলে রবিবার বিকেল সোয়া ৫টা থেকে পুনরায় শাহবাগ মোড় অবরোধ করা হবে।

এর আগে আজ দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণে শহীদ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার ঠিক আগে পরিবারের পক্ষ থেকে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও খোদাবক্স চৌধুরীর অপসারণ দাবি করে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন যে হাদির ওপর নৃশংস হামলার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মূল হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি প্রশাসন। এই সময় তিনি খোদাবক্স চৌধুরীকে বিগত এক সপ্তাহের তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জনগণকে স্পষ্ট তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানান।

শরিফ ওসমান হাদির জানাজা আজ এক বিশাল গণজমায়েতে পরিণত হয়। তার বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিকের ইমামতিতে অনুষ্ঠিত এই জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর প্রধানগণসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। জানাজা শেষে অত্যন্ত শোকাতুর পরিবেশে হাদির মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিয়ে আসা হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়েছে।

দাফন পরবর্তী সমাবেশে ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা শান্ত থেকে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচির ওপর নজর রাখার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। আবদুল্লাহ আল জাবের স্পষ্ট করে বলেন যে কোনো ধরনের সহিংসতার উসকানিতে পা দেওয়া যাবে না এবং ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকেই আন্দোলনের পরবর্তী সব সিদ্ধান্ত জানানো হবে। হাদি হত্যার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এবং প্রশাসনের ব্যর্থ কর্মকর্তাদের অপসারণ না করা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না বলে অঙ্গীকার করেন উপস্থিত ছাত্র-জনতা।


সংসদ ভবনে মানুষের ঢল: শহীদ হাদির জানাজায় লাখো মানুষের ভিড়

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২০ ১৩:৫১:১৩
সংসদ ভবনে মানুষের ঢল: শহীদ হাদির জানাজায় লাখো মানুষের ভিড়
শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মানুষের ঢল নেমেছে। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অকুতোভয় নেতা ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিতে আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর থেকেই জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় মানুষের ঢল নেমেছে। নির্ধারিত সময় দুপুর ২টা হলেও সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত এবং দেশের দূর-দূরান্তের জেলাগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ জানাজা স্থলে এসে জড়ো হতে থাকেন। সাধারণ মানুষের দাবি অনুযায়ী এই জানাজা হতে যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বৃহৎ এক গণজমায়েত। ভিড় সামাল দিতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরো এলাকা জুড়ে বিশেষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাধারণ জনতাকে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। ভিড় সামলাতে প্রতিটি প্রবেশপথে বসানো হয়েছে কড়া নিরাপত্তা চৌকি। জানা গেছে যে বিশেষ নিরাপত্তার স্বার্থে চীন থেকে আনা আটটি অত্যাধুনিক আর্চওয়ে গেট বসানো হয়েছে যার ভেতর দিয়ে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ছাত্র-জনতা জানাজা স্থলে প্রবেশ করছেন। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে জানাজা স্থলের চারপাশের উঁচু ভবনগুলো থেকেও বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বলছেন যে এই জানাজা কেবল একজন নেতার বিদায় নয় বরং এটি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক ঐক্যবদ্ধ শক্তির বহিঃপ্রকাশ।

এর আগে বেলা পৌনে ১১টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে হাদির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। সেখান থেকে মরদেহ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে গোসলের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এনএইচএ-এর সদস্য সচিব ডা. মো. আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন যে জানাজা শেষে শহীদ হাদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে সমাহিত করা হবে। উল্লেখ্য যে গত ১২ ডিসেম্বর বিজয়নগরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হওয়ার পর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গতকাল সন্ধ্যায় তার মরদেহ দেশে পৌঁছানোর পর থেকেই শোকের ছায়া নেমে আসে দেশজুড়ে।


হাদির জানাজা পড়াবেন বড় ভাই: সংসদ ভবনে শেষ বিদায়ের প্রস্তুতি

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২০ ১২:১৬:৪৩
হাদির জানাজা পড়াবেন বড় ভাই: সংসদ ভবনে শেষ বিদায়ের প্রস্তুতি
ছবি : সংগৃহীত

জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম রূপকার ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির শেষ বিদায়ের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজার নামাজে ইমামতি করবেন মরহুমের বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ও ন্যাশনাল হেলথ অ্যালায়েন্সের সদস্য সচিব ডা. মো. আব্দুল আহাদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জানাজা শেষে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।

শহীদ শরিফ ওসমান হাদির লাশের ময়নাতদন্ত আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তার মরদেহ মর্গে নেওয়া হয়। এ সময় সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের বিশেষ দল মর্গ এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। হাদির স্বজন ও সহযোদ্ধাদের পাশাপাশি ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষকে হাসপাতালের সামনে ভিড় করতে দেখা যায়। ময়নাতদন্ত শেষে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী গোসল ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সেরে মরদেহ সরাসরি সংসদ ভবনের জানাজা স্থলের অভিমুখে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

হাদির মৃত্যুতে আজ শনিবার পুরো বাংলাদেশে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে। দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। এছাড়া বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও হাদির স্মরণে পতাকা অর্ধনমিত রয়েছে। গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান হাদি। এরপর ঢাকা মেডিকেল ও এভারকেয়ার হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই তরুণ বিপ্লবী নেতা।


শরিফ ওসমান হাদি: একটি প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ও বিপ্লবের অমর উপাখ্যান

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২০ ১১:১৪:৩৩
শরিফ ওসমান হাদি: একটি প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ও বিপ্লবের অমর উপাখ্যান
ওসমান হাদির স্বপ্নে ছিল ইনসাফের বাংলাদেশ

শরিফ ওসমান হাদি কেবল একটি নাম নন বরং তিনি চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের এক জ্বলন্ত প্রতীক এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীনতার এক সাহসী কণ্ঠস্বর। ফ্যাসিবাদের চোখে চোখ রেখে সত্য উচ্চারণের যে সাহস তিনি দেখিয়েছিলেন তা সমকালীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত। জুলাইয়ের সেই উত্তাল দিনগুলোতে যখন চারদিকে আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা তখন হাদি হয়ে উঠেছিলেন অবদমিত মানুষের কণ্ঠস্বর। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সত্য বলার ঝুঁকি থাকলেও নিশ্চুপ থাকার দায় আরও বেশি ভয়াবহ। আধিপত্যবাদ ও শোষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবিচল থেকে তিনি লালন করেছিলেন এক নতুন ও ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশের স্বপ্ন।

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া হাদি ছিলেন ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। তার বাবা ছিলেন একজন মাদ্রাসা শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম। ঝালকাঠির এন এস কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন তিনি। ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থান তাকে রাজনীতির সম্মুখভাগে নিয়ে আসে। জুলাই শহীদদের অধিকার রক্ষা এবং আধিপত্যবাদবিরোধী অবস্থানে তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই তিনি গড়ে তুলেছিলেন ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ যা নিপীড়িত তরুণদের এক শক্তিশালী প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়।

হাদি প্রায়ই বলতেন যে ভয় পেলে চলবে না কারণ ইতিহাস ভীরুদের ক্ষমা করে না। তাকে দমাতে আসা অসংখ্য হুমকি বা শত্রুর ভয়কে তিনি তুচ্ছজ্ঞান করতেন। তিনি হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন যে বুলেট ছাড়া কেউ তাকে থামাতে পারবে না। সত্যিই গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্সকালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা ঘাতকের বুলেট তার মস্তিষ্ক ভেদ করে দেয়। আট দিনের দীর্ঘ লড়াই শেষে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো দেশে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাকে প্রতিবাদের এক ‘আইকন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন তাকে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার অকুতোভয় যোদ্ধা হিসেবে স্মরণ করেছেন।

শরিফ ওসমান হাদি আগামীর বাংলাদেশে এক নতুন ধারার রাজনীতির স্বপ্ন দেখতেন। তিনি গতানুগতিক পুরোনো রাজনীতির কঠোর সমালোচক ছিলেন এবং জনগণকে সরাসরি সম্পৃক্ত করতে ‘চা-শিঙাড়া’ আড্ডার মতো ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালন করতেন। তার রাজনৈতিক দর্শন ছিল কাঠামোগত পরিবর্তন এবং নৈতিক রাজনীতির প্রতিষ্ঠা। তিনি প্রশ্ন তুলতেন যে রাষ্ট্র কেন বারবার সাধারণ মানুষের বিপক্ষে দাঁড়ায়। আজ যখন বাংলাদেশ এক গভীর রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তখন হাদির সেই সাহসী প্রশ্নগুলো আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। হাদি চলে গেছেন ঠিকই কিন্তু তার রেখে যাওয়া স্বপ্ন ও আদর্শ এখন হাজারো তরুণের পাথেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শপথ নিয়েছেন যে প্রতিটি রাজপথে এখন থেকে হাজারো হাদি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখবে।


ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে হাদির মরদেহ: কড়া পাহারায় সেনাবাহিনী

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২০ ১১:০৩:২৩
ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে হাদির মরদেহ: কড়া পাহারায় সেনাবাহিনী
ছবি : সংগৃহীত

জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘর থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে মরদেহটি মর্গে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে রাখেন। হাদির স্বজন, সহকর্মী এবং রাজনৈতিক সহযোদ্ধারাও এই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

ভোর থেকেই প্রিয় এই নেতাকে শেষবারের মতো দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শত শত মানুষ হাসপাতালের সামনে ভিড় করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে যে ময়নাতদন্ত শেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার মরদেহ গোসল করানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর ধর্মীয় ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে কফিন নিয়ে যাওয়া হবে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে যে আজ দুপুর ২টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হবে যা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ সংলগ্ন এলাকাতেও সম্প্রসারিত হতে পারে।

জানাজা উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। যারা জানাজায় অংশগ্রহণ করবেন তাদের কোনো প্রকার ভারী ব্যাগ বা সন্দেহজনক বস্তু সাথে না আনার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থে সংসদ ভবন ও এর আশপাশের পুরো এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় সিঙ্গাপুর থেকে হাদির মরদেহ ঢাকায় পৌঁছানোর পর বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তা হিমাগারে রাখা হয়েছিল। ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে সংসদ ভবনে জানাজা শেষে বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশেই তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে।


বিজিবি এখন সীমান্ত নিরাপত্তায় আরও পেশাদার: প্রধান উপদেষ্টা

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২০ ০৯:০৯:৪০
বিজিবি এখন সীমান্ত নিরাপত্তায় আরও পেশাদার: প্রধান উপদেষ্টা
ছবি : সংগৃহীত

দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি সীমান্ত সুরক্ষায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবির ভূমিকার প্রশংসা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২৫’ উপলক্ষে দেওয়া এক বিশেষ বাণীতে তিনি বিজিবি সদস্যদের ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে অভিহিত করেন। চোরাচালান বন্ধ, মাদক নির্মূল এবং নারী ও শিশু পাচার রোধে বাহিনীর নিরলস পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন যে বিজিবি দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন যে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবি অত্যন্ত পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমন এবং পুশইন রোধসহ বিভিন্ন ধরনের জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় বাহিনীর সদস্যরা সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। বিজিবি দিবস উপলক্ষে তিনি বাহিনীর সকল স্তরের সদস্য ও তাদের পরিবারকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। ড. ইউনূস উল্লেখ করেন যে এই বাহিনী এ অঞ্চলের এক সুদীর্ঘ ইতিহাস ও অত্যন্ত গৌরবময় ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার বহন করছে।

মুক্তিযুদ্ধে বিজিবির অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন যে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে দুজন বীরশ্রেষ্ঠসহ এই বাহিনীর ১১৯ জন সদস্য খেতাব পেয়েছেন এবং ৮১৭ জন সদস্য দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। তাদের এই বিশাল আত্মত্যাগ বিজিবির ইতিহাসকে চিরকাল মহিমান্বিত করে রাখবে। তিনি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত থেকে বিভিন্ন সময়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। বাণীর শেষে তিনি বিজিবি দিবস-২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন এবং বাহিনীকে আরও গতিশীল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।


আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি: মূল্যস্ফীতির চাপে দিশাহারা সাধারণ মানুষ

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২০ ০৯:০৩:১৯
আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি: মূল্যস্ফীতির চাপে দিশাহারা সাধারণ মানুষ
ছবি : সংগৃহীত

উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের দ্বিমুখী চাপে গত তিন বছর ধরে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে পৌঁছানোর পর তা বিগত ১৫ মাসে কিছুটা কমলেও এখনো উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০২৫ সালের নভেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে যা আগের মাসের চেয়ে বেশি। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনো ৭ শতাংশের ওপরে থাকায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর সঞ্চয় শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং তারা ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে বাংলাদেশ বর্তমানে একটি ‘স্ট্যাগফ্লেশন’ বা স্থবিরতা ও মূল্যস্ফীতির ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। একদিকে দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী অন্যদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসছে। সরকারের সংকুচিত মুদ্রানীতি এবং নীতি সুদ হার ১০ শতাংশে উন্নীত করার ফলেও বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব খুব একটা দৃশ্যমান হচ্ছে না। এর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সরকারের দ্বৈত আচরণকে। একদিকে বাজারে অর্থের সরবরাহ কমাতে সুদ হার বাড়ানো হচ্ছে অন্যদিকে রুগ্ণ ব্যাংকগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ পরিচালন ব্যয় মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে উদারহস্তে অর্থ সরবরাহ ও ঋণ নেওয়া হচ্ছে। ফলে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না এবং মূল্যস্ফীতি উচ্চ স্তরেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

এরই মধ্যে দেশের শ্রমবাজারে বড় ধরনের ধস নেমেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, জ্বালানি সংকট এবং কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে শিল্পোদ্যোগ থমকে দাঁড়িয়েছে। এক হিসাবে দেখা যায় বর্তমানে দেশে প্রায় এক কোটি মানুষ বেকার যার মধ্যে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। গত দুই বছরে প্রায় ২০ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন এবং চলতি অর্থবছরে আরও আট লাখ মানুষ বেকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত বা গার্মেন্টস সেক্টরে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ থেকে কমে ৬ শতাংশে নেমে আসায় নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। এর বিপরীতে সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে যা বিনিয়োগের পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলছে।

সামগ্রিক এই অর্থনৈতিক অস্থিরতার ফলে দারিদ্র্যের হার আবারও বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের সতর্কবার্তা অনুযায়ী চলতি বছর দারিদ্র্যের হার ২১ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং প্রায় সোয়া ছয় কোটি মানুষ দারিদ্র্যের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে নেমে আসায় কৃষি ও শিল্প—উভয় উৎপাদনশীল খাতেই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে কেবল মুদ্রানীতি দিয়ে হবে না বরং উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজারে পণ্য সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে হবে। একই সঙ্গে সিন্ডিকেটের কারসাজি ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং সরকারের বিলাসজাত পরিচালন ব্যয় কমিয়ে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।


হাদি হত্যার বিচার দাবিতে উত্তাল দেশ: দিকে দিকে বিক্ষোভ

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২০ ০৮:৫০:১০
হাদি হত্যার বিচার দাবিতে উত্তাল দেশ: দিকে দিকে বিক্ষোভ
ছবি : সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে দেশজুড়ে নজিরবিহীন বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় প্রতিটি বড় শহরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে দিনভর ‘আগ্রাসনবিরোধী সমাবেশ’ করেছে ছাত্র-জনতা। সমাবেশের এক পর্যায়ে ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম ঘোষণা দেন যে এখন থেকে শাহবাগ মোড়ের নাম হবে ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’। সমাবেশ থেকে হাদির খুনিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

রাজধানীর উত্তাল পরিস্থিতির জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে যে স্থগিত পরীক্ষার নতুন সূচি শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তবে সার্বিক নিরাপত্তা এবং জুলাইবিরোধী শক্তির নাশকতার আশঙ্কায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম শাহবাগের অবস্থান কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দেন। তিনি এক বিবৃতিতে সাধারণ মানুষকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন যাতে জনগণের ক্ষোভকে ব্যবহার করে কোনো হঠকারী গোষ্ঠী অগ্নিকাণ্ড বা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে।

ঢাকার বাইরেও বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে। রাজশাহীতে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বুলডোজার দিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিয়েছে এবং ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন উচ্ছেদের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ঝিনাইদহে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু ও সাবেক চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাসের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বান্দরবানে সাবেক পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিংয়ের বাসভবনে আগুন দেওয়া হলে সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। এছাড়া গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘জয় বাংলা চত্বর’ এর নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ হাদি চত্বর’ নামকরণ করেছে।

দেশের প্রতিটি প্রান্তে এখন হাদি হত্যার বিচারের দাবি ও শোকের আবহ বিরাজ করছে। লক্ষ্মীপুর ও নওগাঁয় কফিন মিছিল বের করা হয়েছে এবং ফেনী, খুলনা, নীলফামারী, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলায় হাদির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর চার দফা দাবিতে স্মারকলিপি পেশ করেছে। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে হাদি হত্যার পরিকল্পনাকারীদের দ্রুত শনাক্তকরণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহি নিশ্চিত করা। হাতিয়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ঘেরাও করে খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীসহ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত রেখেছেন।

পাঠকের মতামত:

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

রাষ্ট্রের ধারণাটি একসময় কেবল প্রশাসনিক ক্ষমতা, আইনের শাসন এবং নিরাপত্তা প্রদানের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রের ভূমিকা এখন... বিস্তারিত