চীনের হারানো ব্যবসা ধীরে ধীরে জায়গা নিচ্ছে বাংলাদেশে

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ০৯:৩৪:৩২
চীনের হারানো ব্যবসা ধীরে ধীরে জায়গা নিচ্ছে বাংলাদেশে

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন—এই ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৫ শতাংশ, যা শীর্ষ ১০ সরবরাহকারীর মধ্যে সর্বোচ্চ। একই সময় চীনের রপ্তানি কমেছে ১১১ কোটি ডলার। এ প্রবণতা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কনীতির কারণে তৈরি হয়েছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র চীনসহ বিভিন্ন দেশের আমদানি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। নতুন শুল্কহার অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ, ভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যে ৩০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হচ্ছে। তবে রাশিয়ার জ্বালানি তেল কেনার কারণে ভারতের পণ্যে বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায়, তাদের মোট শুল্কহার দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অধীনস্থ অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস (OTEXA)-এর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি-জুন সময়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৪২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ে এই রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৪০ কোটি ডলার। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫.১৩ শতাংশ।

শুধু রপ্তানি বৃদ্ধিই নয়, বাজারে বাংলাদেশের হিস্যাও বেড়েছে। গত বছর এটি ছিল ৯.২৬ শতাংশ, যা ২০২৫ সালের জুন শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশে।

অন্যদিকে, এই সময়ে চীনের রপ্তানি ৫৭৩ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ কম। ফলে দেশটির মার্কেট শেয়ারও কমে দাঁড়িয়েছে ১৮.৮৮ শতাংশে। বিপরীতে ভিয়েতনাম ৭৭৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে ১৯.৭৯ শতাংশ বাজার দখল করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক চাপ এবং পাল্টা শুল্কের কারণে ক্রয়াদেশ ধীরে ধীরে স্থানান্তর হচ্ছে। একাধিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মতে, গত ৬-৮ মাস ধরে চীনের হারানো অর্ডার ধীরে ধীরে বাংলাদেশে আসছে। বিশেষ করে কম মূল্যের পোশাকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে।

তুসুকা গ্রুপের চেয়ারম্যান আরশাদ জামাল জানান, সেপ্টেম্বর থেকে গ্রীষ্মকালীন পোশাকের অর্ডার আসতে শুরু করবে। তিনি বলেন, "আমরা তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে আছি। শুধু মার্কিন নয়, ইউরোপীয় ক্রেতারাও বাড়তি অর্ডার দিচ্ছেন।"

ভবিষ্যতে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান আরও মজবুত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, "চীন থেকে স্থানান্তরিত অর্ডার বাংলাদেশে আসছে এবং এই ধারা চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসায় ভালো সম্ভাবনা তৈরি হবে। তবে আমরা সদস্যদের মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে শুল্ক ভাগাভাগি না করার নির্দেশনা দিয়েছি।"

ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের রপ্তানিও এ সময় বেড়েছে। ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি হয়েছে ২২৬ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ১৮ শতাংশ। ভারত রপ্তানি করেছে ২৮৪ কোটি ডলারের পোশাক, প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ।

সামগ্রিকভাবে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে তৈরি পোশাক আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৭৬ শতাংশ বেশি। এই বৃদ্ধির পেছনে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ