সঞ্চয়পত্রে ভাটা, দ্বিগুণ হারে বাড়ছে বিল-বন্ডে বিনিয়োগ

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ১০:৩২:০২
সঞ্চয়পত্রে ভাটা, দ্বিগুণ হারে বাড়ছে বিল-বন্ডে বিনিয়োগ
ছবি: সংগৃহীত

দেশে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। একই সঙ্গে সঞ্চয়পত্র সংক্রান্ত নিয়মের জটিলতা, সুদহারের বিভ্রান্তি এবং সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে তুলনামূলকভাবে বেশি সুদের প্রাপ্তি—এই তিনটি কারণে মানুষ ক্রমেই সঞ্চয়পত্রের পরিবর্তে বিল-বন্ডের দিকে ঝুঁকছে।

সঞ্চয়পত্রে তিন বছর ধরে নেতিবাচক প্রবণতাজাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, গত তিন অর্থবছর ধরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিট বিক্রি ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা কমেছে, ফলে সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকায়। তার আগের দুই অর্থবছরেও যথাক্রমে ২১ হাজার ১২৪ কোটি এবং ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ কমেছিল।

একসময় বাজেট ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র ছিল সরকারের অন্যতম নির্ভরযোগ্য উৎস। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আগের বছর এটি ছিল ১৫ হাজার ৪০০ কোটি, যা সংশোধিত বাজেটে নেমে আসে ১৪ হাজার কোটিতে।

নিয়ম কঠোর হওয়ায় সঞ্চয়পত্রে আগ্রহ কমেছে বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৯ সালে ‘জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালুর ফলে সঞ্চয়পত্র কেনার প্রক্রিয়া কঠোর হয়ে যায়। একই নামে বড় অঙ্কের সঞ্চয়পত্র কেনা কঠিন হয় এবং এক লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে বাধ্যতামূলক হয় ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন)।

এ ছাড়া, প্রতি ছয় মাস অন্তর সুদহার পর্যালোচনার নিয়ম চালু হওয়ায় সর্বশেষ জুলাইয়ে সুদহার ৪৭ থেকে ৫৭ বেসিস পয়েন্ট কমেছে। বর্তমানে সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি ও কম বিনিয়োগের জন্য আলাদা সুদহার নির্ধারিত রয়েছে, যা অনেকের কাছে জটিল এবং অসুবিধাজনক মনে হচ্ছে।

বিকল্প হিসাবে বিল ও বন্ডে আস্থা বাড়ছেএই প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীরা বেশি আস্থা রাখছেন ট্রেজারি বিল ও বন্ডের ওপর। সেখানে ব্যাংক, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন ফান্ড এবং সাধারণ নাগরিকদের বিনিয়োগ প্রবলভাবে বাড়ছে। ২০২৩ সালের জুন শেষে এই খাতে মোট বিনিয়োগ ছিল ২৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। মাত্র দুই বছরে, ২০২৫ সালের জুন শেষে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ১৫৯ কোটি টাকায়—অর্থাৎ প্রায় পাঁচ গুণ বৃদ্ধি।

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, বর্তমানে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ মিলছে, যা করমুক্ত এবং ঝুঁকিমুক্ত। সময়মতো মুনাফা পাওয়া এবং সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রির সুযোগ থাকায় এটি ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় পন্থা হয়ে উঠেছে।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ