খাবার থেকে বৃষ্টির পানি—সবখানে ছড়িয়েছে ক্ষতিকর রাসায়নিক

পরিবেশ ও জলবায়ু ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ০৯:০২:৪৫
খাবার থেকে বৃষ্টির পানি—সবখানে ছড়িয়েছে ক্ষতিকর রাসায়নিক
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী রাসায়নিক দূষণের হুমকি এখন এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের মতোই মানবজাতি ও প্রকৃতির জন্য একটি বড় সংকটে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিবেদনে এ বিষয়ে গুরুতর সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে, এ নিয়ে এখনো পর্যাপ্ত জনসচেতনতা তৈরি হয়নি, এবং গৃহীত পদক্ষেপও রয়েছে খুবই সীমিত।

গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ইতিমধ্যে ১০ কোটির বেশি নতুন রাসায়নিক পদার্থ উদ্ভাবিত হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার থেকে সাড়ে তিন লাখ পর্যন্ত রাসায়নিক বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ রাসায়নিকের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জানাশোনা খুবই কম।

ডিপ সায়েন্স ভেঞ্চার্স (ডিএসভি) নামের গবেষণা সংস্থাটি জানায়, আমাদের প্রতিদিনকার ব্যবহৃত পানি, বাতাস, খাবার, সাবান, শ্যাম্পু এবং অন্যান্য গৃহস্থালি সামগ্রীতে এমন অনেক রাসায়নিক রয়েছে, যেগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে কোনো পরীক্ষাই করা হয়নি। এসব রাসায়নিক পদার্থ মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদি বিপর্যয় ডেকে আনছে।

গবেষণায় উঠে এসেছে, খাদ্য প্যাকেজিং ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত প্রায় ৩ হাজার ৬০০ ধরনের রাসায়নিক মানুষের শরীরে পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্তত ৮০টি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। বিশেষভাবে উদ্বেগের বিষয় হলো—পিএফএএস (PFAS) নামের ‘ফরএভার কেমিক্যালস’ নামে পরিচিত এক শ্রেণির রাসায়নিক, যা একবার শরীরে প্রবেশ করলে সহজে বের হয় না। বিশ্বজুড়ে মানুষের শরীর এবং এমনকি বৃষ্টির পানিতেও এর উপস্থিতি ধরা পড়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর ৯০ শতাংশ মানুষ এমন বায়ু গ্রহণ করছে, যার দূষণের মাত্রা সহনীয় সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এই রাসায়নিকগুলোর কারণে মানুষের প্রজনন সক্ষমতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, স্নায়ুতন্ত্র, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, যকৃত ও কিডনি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গবেষণাটি আরও জানায়, কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধ্যাত্ব, গর্ভপাত এবং গর্ভধারণে জটিলতার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এমনকি হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলা কিছু রাসায়নিক অতি সামান্য মাত্রাতেও ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যা প্রচলিত পরীক্ষায় ধরা পড়ে না।

এই গবেষণা প্লাস্টিক দূষণকেও একইভাবে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছে। ডিএসভি মনে করে, এখনই রাসায়নিক নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। তারা প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবন ও সমাধানের মাধ্যমে এই সংকট উত্তরণে কাজ করে যাচ্ছে।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান


টেকসই উন্নয়নে নতুন জাতীয় বিদ্যুৎনীতির ওপর জোর দিলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস

পরিবেশ ও জলবায়ু ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২১ ১৪:৫৫:৪৬
টেকসই উন্নয়নে নতুন জাতীয় বিদ্যুৎনীতির ওপর জোর দিলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস
ছবিঃ সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে হলে বাংলাদেশকে দ্রুত পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী জ্বালানি সমাধানের দিকে অগ্রসর হতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিশ্বের অন্যতম জনবহুল ও জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আর দীর্ঘ সময় জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল থাকতে পারে না।

অ্যানথ্রোপোসিন ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান কার্ল পেইজ ও তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে অংশ নিয়ে অধ্যাপক ইউনুস বলেন, “এখনই সময় বাংলাদেশকে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি বিকল্পগুলো নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবার, বিশেষ করে বৃহৎ পরিসরে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।”

কার্ল পেইজ এ সময় পরবর্তী প্রজন্মের পারমাণবিক প্রযুক্তি ও হাইব্রিড সিস্টেমের সাম্প্রতিক অগ্রগতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বার্জ-মাউন্টেড পারমাণবিক রিঅ্যাক্টরগুলো ব্যয়সাশ্রয়ী, কম রক্ষণাবেক্ষণপ্রয়োজনীয় এবং দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শিল্প খাতের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে সক্ষম।

তিনি আরও জানান, পারমাণবিক বিদ্যুৎ এখন আর আন্তর্জাতিক অর্থায়ন সংস্থাগুলোর কাছে বিতর্কিত নয়। বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থাও এসব প্রযুক্তিতে অর্থায়ন করতে আগ্রহী। ইতিমধ্যে ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো এ ধরনের প্রযুক্তি গ্রহণ শুরু করেছে।

কার্ল পেইজের মতে, উদ্ভাবনী সক্ষমতা ও উদ্যোক্তা মনোভাবের জন্য বাংলাদেশ এ খাতে নেতৃত্ব দিতে পারে। এর ফলে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জ্বালানির মূল্য স্থিতিশীলতা এবং শিল্পখাতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। “বাংলাদেশ উদীয়মান প্রযুক্তির কৌশলগত কেন্দ্র এবং শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক উদ্ভাবনের নেতৃত্ব দিতে পারে,” তিনি যোগ করেন।

অধ্যাপক ইউনুস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্প্রতি নতুন জাতীয় বিদ্যুৎনীতি ঘোষণা করেছে, যেখানে সৌরশক্তি উৎপাদন ত্বরান্বিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, পারমাণবিক বিকল্পের ক্ষেত্রে বিস্তারিত গবেষণা ও বাস্তবতা যাচাই অপরিহার্য।

তিনি বলেন, “আমরা অবশ্যই এসব সুযোগ নিয়ে কাজ করব, কিন্তু আগে গভীর গবেষণা করতে হবে। কোনো সন্দেহ নেই—বাংলাদেশকে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা ব্যাপকভাবে কমাতে হবে।”

ভার্চুয়াল বৈঠকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং সিনিয়র সচিব ও এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মরশেদও উপস্থিত ছিলেন।

-নাজমুল হাসান


“জলবায়ু বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব: COP30-এর আগে গুতেরেসের হুঁশিয়ারি”

পরিবেশ ও জলবায়ু ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২০ ১০:০৮:২০
“জলবায়ু বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব: COP30-এর আগে গুতেরেসের হুঁশিয়ারি”
ছবিঃ সংগৃহীত

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, প্রাক-শিল্পযুগের গড় তাপমাত্রার তুলনায় বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রচেষ্টা ভেঙে পড়ার পথে। শুক্রবার এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতি ও জলবায়ু প্রভাবশালী দেশগুলোর জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (NDCs) বা জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি।

গুতেরেস বলেন, “আমরা একেবারে এই লক্ষ্য হারানোর দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। আমাদের জরুরি ভিত্তিতে এমন কর্মপরিকল্পনা দরকার, যা পুরো অর্থনীতি ও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকে কাভার করবে এবং ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।”

বিলম্বে সংকট ঘনীভূত

প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ২০৩৫ সালের জন্য নতুন লক্ষ্য বা NDC ঘোষণার কথা ছিল কয়েক মাস আগে। কিন্তু ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন, বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংকট এই প্রক্রিয়াকে ধীর করেছে। এমন পরিস্থিতিতে গুতেরেসের মতে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বৈশ্বিক নির্গমন ব্যাপকভাবে কমানো না গেলে এই লক্ষ্য আর টিকবে না।

চীন-ইইউর নীরবতা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে

ব্রাজিলে আসন্ন COP30 শীর্ষ সম্মেলনের আগে বহু দেশই এখনো তাদের জলবায়ু পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি। বিশেষত চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো প্রধান শক্তিগুলোর নীরবতা জলবায়ু কূটনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। গুতেরেস আশা করছেন, নিউইয়র্কে আয়োজিত জাতিসংঘের জলবায়ু সপ্তাহ এবং ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সঙ্গে তার যৌথ নেতৃত্বাধীন জলবায়ু শীর্ষ বৈঠক এই প্রচেষ্টাকে নতুন গতি দেবে।

বিজ্ঞানীদের কঠিন পূর্বাভাস

আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেল (IPCC)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, উষ্ণতা যত বাড়বে, ততই ঘন ঘন তীব্র তাপদাহ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এবং চরম আবহাওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। ১.৫ ডিগ্রি সীমায় উষ্ণতা আটকে রাখতে পারলে এসব ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে অনেক কম হবে।

মহাসচিবের বার্তা: আতঙ্ক নয়, দৃঢ়তা দরকার

গুতেরেস বলেন, “এটি আতঙ্কিত হওয়ার বিষয় নয়, বরং দৃঢ় সংকল্পের সময়। দেশগুলোকে চাপ দিয়ে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করাই এখন প্রধান কাজ।” তিনি মনে করিয়ে দেন, ২০২৪ সাল রেকর্ডকৃত সবচেয়ে উষ্ণ বছর হিসেবে ইতিহাসে নথিভুক্ত হয়েছে—যা এই সংকটের গভীরতা স্পষ্ট করে।

-এম জামান


জলবায়ু ইস্যুতে গণমাধ্যমের দায়িত্ব বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন পিকেএসএফ চেয়ারম্যান

পরিবেশ ও জলবায়ু ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১০ ১৯:৪৯:৪৪
জলবায়ু ইস্যুতে গণমাধ্যমের দায়িত্ব বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন পিকেএসএফ চেয়ারম্যান
ছবিঃ বি এস এস

বাংলাদেশের অন্যতম বড় উন্নয়ন সংস্থা পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সাংবাদিকদের আরও গভীরতর প্রতিবেদন প্রকাশ করা প্রয়োজন।

আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিকেএসএফ ভবনে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী সাংবাদিক প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন,“বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। যদি বিস্তারিত ও বিশ্লেষণধর্মী জলবায়ু প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জলবায়ু ক্ষতিপূরণের জন্য বাংলাদেশের দাবি আরও শক্তিশালী হবে।”

তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জলবায়ু ন্যায়বিচার (Climate Justice) নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমকর্মীদের আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

পিকেএসএফ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) যৌথভাবে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে। প্রশিক্ষণের লক্ষ্য ছিল সাংবাদিকদের জলবায়ু পরিবর্তন ও এর অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে আরও দক্ষ করে তোলা, যাতে তারা সঠিক তথ্যভিত্তিক সংবাদ তৈরি করতে পারেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম থেকে ৬০ জন সাংবাদিক এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন।

জাকির আহমেদ খান জানান, বর্তমানে পিকেএসএফ দেশের দুই কোটির বেশি নিম্নআয়ের পরিবারের সঙ্গে কাজ করছে। তিনি বলেন,“আমরা জনগণের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছি যাতে তারা পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন এখন টিকে থাকার অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাংবাদিকরা যদি জলবায়ু পরিবর্তনের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক দিকগুলো বিশ্লেষণ করে উপস্থাপন করেন, তবে দেশ-বিদেশে নীতি নির্ধারক মহলে বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর আরও শক্তিশালী হবে।

-সুত্রঃ বি এস এস


কপ-৩০ ঘিরে ব্রাজিলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার অঙ্গীকার বাংলাদেশের

পরিবেশ ও জলবায়ু ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৮ ১১:১৩:১১
কপ-৩০ ঘিরে ব্রাজিলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার অঙ্গীকার বাংলাদেশের
ছবিঃ বি এস এস

বাংলাদেশের পরিবেশ ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আজ বলেছেন, আগামী নভেম্বরে ব্রাজিলের বেলেম শহরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন (কপ-৩০) বৈশ্বিক জলবায়ু এজেন্ডা নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আশ্বাস দেন, বাংলাদেশ উচ্চাভিলাষী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ফলাফলের জন্য ব্রাজিলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

ঢাকায় ব্রাজিলের স্বাধীনতার ২০৩তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফের্নান্দো দিয়াস ফেরেস আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। কূটনৈতিক মহল, রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বন সংরক্ষণে অনুচ্ছেদ ৬ অনুযায়ী কার্বন বাজার অনুসন্ধানে আগ্রহী। তবে মনে রাখতে হবে, কার্বন বাজার কখনোই জলবায়ু অর্থায়নের বিকল্প নয়। পরিবেশের সুরক্ষা ও ন্যায্যতার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতেই হবে।”

তিনি ব্রাজিলকে লাতিন আমেরিকায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন। ২০২৪ সালে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ব্রাজিলীয় তুলা দিয়ে তৈরি বাংলাদেশি পোশাকের জন্য বাড়তি প্রবেশাধিকার, জুট পণ্যের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার, ওষুধ নিবন্ধনের জটিলতা সহজীকরণ এবং যৌথ উদ্যোগ সম্প্রসারণের আহ্বান জানান তিনি। ইতিমধ্যে ব্রাজিলের একটি ওষুধ কোম্পানি বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানের পণ্য অনুমোদন দিয়েছে, যা তিনি ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে তুলে ধরেন।

রিজওয়ানা হাসান ব্রাজিলের গণতন্ত্র, ন্যায়, জলবায়ু নেতৃত্ব ও বহুপাক্ষিকতার ভূমিকাকে প্রশংসা করে বলেন, ব্রাজিল ১৯৭২ সালের মে মাসে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দক্ষিণ আমেরিকান দেশগুলোর একটি। সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌরো ভিয়েরা’র ঢাকা সফর (এপ্রিল ২০২৪) এবং নারীর ক্ষমতায়নবিষয়ক জি২০ মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি জানান, কৃষি, প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া খাতে চারটি সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত হয়েছে। আরও ১১টি খসড়া আলোচনার পর্যায়ে আছে, যার মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও বাণিজ্য সংলাপ রয়েছে।

বাংলাদেশের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা, আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি সমর্থন জানানোয় ব্রাজিলকে ধন্যবাদ জানান এবং দেশটিকে ন্যায় ও সমতার অনুপ্রেরণাদায়ী অংশীদার হিসেবে অভিহিত করেন।

জ্বালানি ও কৃষি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্রাজিলের বায়োফুয়েল ও টেকসই কৃষি অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে চায় এবং একই সঙ্গে দুর্যোগ সহনশীলতা বিষয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে প্রস্তুত।

অবশেষে তিনি উল্লেখ করেন, দুই দেশের জনগণের সম্পর্কের এক অনন্য সেতুবন্ধন হলো ফুটবল। বাংলাদেশের মানুষ ব্রাজিলীয় ফুটবলের প্রতি যে আবেগ বহন করে, তা দুই দেশের বন্ধুত্বকে আরও দৃঢ় করে তুলেছে।

-সুত্রঃ বি এস এস


১২০ বার পেছালো সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার শুনানি

২০২৫ আগস্ট ১১ ২১:৪২:৩৫
১২০ বার পেছালো সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার শুনানি
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি। পুরোনো ছবি

ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে ২০১২ সালে নির্মমভাবে নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় আদালত এ মামলার তারিখ ১২০ বার পিছিয়েছে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআইর অতিরিক্ত এসপি মো. আজিজুল হক আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। এর ফলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমান ১৪ সেপ্টেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতের দিকে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় গলাকেটে হত্যা হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মেহেরুন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আটজনকে আসামি করা হয়। বাকি আসামিরা হলেন বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ (হুমায়ুন কবির), রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু (বারগিরা মিন্টু/মাসুম মিন্টু), কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ।

প্রাথমিকভাবে মামলার তদন্তভার ছিল শেরেবাংলা নগর থানার একজন উপ-পরিদর্শকের (এসআই) কাছে। চার দিন পর এই হত্যা মামলার তদন্তভার ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিবি দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করেও রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলার তদন্তভার র‌্যাবের কাছে দেওয়া হয়।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট নির্দেশ দেন, মামলার তদন্তে বিভিন্ন বাহিনীর অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। এর পর ১৮ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পিবিআই প্রধানকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করে এবং তদন্ত শেষ করার জন্য ছয় মাসের সময় দেয়। তবে এখন পর্যন্ত ওই টাস্কফোর্স তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।

/আশিক


ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে সংকটে নাসার জলবায়ু পর্যবেক্ষণ মিশন

পরিবেশ ও জলবায়ু ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ১১:৫৮:৩৪
ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে সংকটে নাসার জলবায়ু পর্যবেক্ষণ মিশন
ছবিঃ সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বৈজ্ঞানিক লড়াইয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ ধাক্কা লাগতে চলেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ নাসা মিশনের জন্য অর্থ বরাদ্দ বন্ধের প্রস্তাব করেছে। এই দুই মিশন—অরবিটিং কার্বন অবজারভেটরি (OCO-2) স্যাটেলাইট এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে স্থাপিত একটি উন্নত যন্ত্র—পৃথিবীর কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ ও শোষণের নিখুঁত মানচিত্র তৈরি এবং উদ্ভিদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কৃষি ও পরিবেশ গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

নাসা এক বিবৃতিতে জানায়, এই মিশন দুটি তাদের “প্রাথমিক সময়সীমা পার করেছে” এবং সেগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত “রাষ্ট্রপতির বাজেট ও নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ”। তবে এই মিশনগুলো এখনো বিশ্বের সবচেয়ে সংবেদনশীল এবং নিখুঁত পর্যবেক্ষণক্ষমতা সম্পন্ন প্রযুক্তি বহন করছে, যা বিকল্পহীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক ‘জাতীয় সম্পদ’ হিসেবে বিবেচিত—এমনটাই জানিয়েছেন এই মিশনের প্রধান রূপকার, নাসার প্রাক্তন বিজ্ঞানী ডেভিড ক্রিস্প।

এই মিশনগুলোর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা যেমন আবিষ্কার করেছেন যে অ্যামাজন বন এখন নিঃসরণকারী বনভূমিতে পরিণত হয়েছে, তেমনি তারা দেখতে পেয়েছেন যে কানাডা ও রাশিয়ার বরফময় অঞ্চলগুলো এবং পারমাফ্রোস্ট গলে যাওয়া এলাকা বেশি কার্বন শোষণ করছে। শুধু তাই নয়, এই প্রযুক্তির সাহায্যে উদ্ভিদের আলোকসংশ্লেষণের “জীবন্ত আলো” শনাক্ত করা যায়, যা খরা, খাদ্য সংকট এবং সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ বা সামাজিক অস্থিরতা আগাম অনুমান করতে সাহায্য করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ‘দূরদর্শিতাবিহীন’। ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের জলবায়ু বিজ্ঞানী জোনাথন ওভারপেক বলেন, "এই স্যাটেলাইটগুলোর পর্যবেক্ষণ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বহু অঞ্চলের জন্য।"

কংগ্রেসের দিকে তাকিয়ে আশার আলো

বর্তমানে এই মিশনগুলো সেপ্টেম্বর ৩০ পর্যন্ত তহবিল পাবে। প্রেসিডেন্টের প্রস্তাব অনুযায়ী হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এর বাজেট বিল এই মিশন বাতিলের পক্ষে হলেও, সিনেট ভার্সন এখনো মিশনগুলো টিকিয়ে রাখার পক্ষে। কংগ্রেস বর্তমানে বিরতিতে থাকায় নতুন বাজেটের অনুমোদন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যদি বাজেট অনুমোদিত না হয়, তবে কংগ্রেস একটি অস্থায়ী ফান্ড রেজোলিউশনের মাধ্যমে বিদ্যমান অর্থায়ন অব্যাহত রাখতে পারে। তবে কিছু আইনপ্রণেতা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো সেই তহবিলও আটকে রাখতে পারে।

ডেমোক্র্যাট নেতারা সম্প্রতি এনাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক শন ডাফিকে সতর্ক করে বলেছেন, কংগ্রেস অনুমোদিত অর্থ আটকে রাখা বা মিশন বন্ধ করা বেআইনি হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত জলবায়ু বিজ্ঞানকে দমিয়ে দেওয়ার একটি বড় পদক্ষেপ। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানী মাইকেল মান বলেন, “এই নীতির মূল কথা যেন এমন—যদি আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের পরিমাপ বন্ধ করি, তবে সেটা আমেরিকানদের চিন্তা থেকে মুছে যাবে।”

বিকল্প পরিকল্পনা: আন্তর্জাতিক সহায়তার খোঁজে

ডেভিড ক্রিস্প ও তাঁর সহকর্মীরা এখন আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই যন্ত্র ও স্যাটেলাইট চালু রাখার সম্ভাবনা খুঁজছেন। নাসা ২৯ আগস্ট পর্যন্ত বাইরের সংস্থাগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব গ্রহণ করছে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের যন্ত্রটি বিদেশি অংশীদারদের হাতে তুলে দেওয়ার সুযোগ থাকলেও, OCO-2 উপগ্রহটিকে হয়ত ভূপতিত করে ধ্বংস করা হবে। ক্রিস্প বলেন, “আমরা ধনকুবেরদের, ফাউন্ডেশনগুলোর কাছে যাচ্ছি। কিন্তু এটি এমন এক প্রযুক্তি যা বেসরকারি ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেওয়া বাস্তবসম্মত বা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।”

এই সিদ্ধান্ত জলবায়ু গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে এক অন্ধকার অধ্যায় রচনা করতে পারে—এমনটাই আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

-আকরাম হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক


উষ্ণতা থামেনি, রূপ বদলেছে: নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে বিশ্ব

পরিবেশ ও জলবায়ু ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ১০:৩৫:০০
উষ্ণতা থামেনি, রূপ বদলেছে: নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে বিশ্ব
ছবিঃ সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় গত জুলাই মাসটি ছিল ইতিহাসের তৃতীয় উষ্ণতম জুলাই। যদিও টানা রেকর্ড ভাঙা গরমের ধারা এবার কিছুটা থেমেছে, কিন্তু ইউরোপীয় জলবায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘কোপার্নিকাস’ জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে চরম আবহাওয়ার ধ্বংসযজ্ঞ এখনো অব্যাহত। বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি, বিধ্বংসী বন্যা, দাবানল ও ভয়াবহ তাপপ্রবাহের সাক্ষী হয়েছে বিশ্ববাসী।

গত মাসে পাকিস্তান ও উত্তর চীন জুড়ে অতিভারী বৃষ্টিপাতে বন্যা সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে কানাডা, স্কটল্যান্ড ও গ্রিসে দাবানলের বিস্তার রুখতে হিমশিম খেতে হয় স্থানীয় প্রশাসনকে। দীর্ঘ খরার কারণে দাবানল আরও মারাত্মক রূপ নিয়েছে। এশিয়া ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার অনেক দেশেই জুলাই মাসে নতুন সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।

কোপার্নিকাস পরিচালক কার্লো বুয়োনতেম্পো বলেন, "২০২৩ ও ২০২৪ সালে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার পর এবারের জুলাই একটু কম উষ্ণ ছিল। তবে এটি ভ্রান্ত ধারনা দিচ্ছে যে জলবায়ু পরিবর্তন থেমে গেছে। বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা এখনো একটি উত্তপ্ত বিশ্বের পরিণতি দেখে চলেছি।"

এই জুলাইয়ে গড় তাপমাত্রা শিল্পপূর্ব যুগের (১৮৫০-১৯০০) চেয়ে ১.২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। যদিও এটি ২০২৩ ও ২০২৪ সালের তুলনায় কিছুটা কম, তথাপি প্যারিস চুক্তির ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্যসীমার কাছাকাছি। বিজ্ঞানীদের মতে, এই সামান্য পার্থক্যই যথেষ্ট হয়ে উঠছে ঝড়, তাপপ্রবাহ ও বন্যার মতো চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব দ্বিগুণ করে তুলতে।

মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চল, ইরাক এবং প্রথমবারের মতো তুরস্কেও তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। স্পেনে শুধু জুলাই মাসেই তাপপ্রবাহ-সম্পর্কিত কারণে মৃত্যু হয়েছে এক হাজারের বেশি মানুষের।

জলবায়ু পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করেছেন জীবাশ্ম জ্বালানি—তেল, কয়লা ও গ্যাস পোড়ানোকে। বুয়োনতেম্পো সতর্ক করেছেন, "যতক্ষণ না আমরা বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা স্থিতিশীল করতে পারছি, ততক্ষণ নতুন রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়া এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাত্রা বাড়তেই থাকবে।"

বিশ্বব্যাপী উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অন্তত ১১টি দেশ গত জুলাইয়ে তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। চীন, জাপান, উত্তর কোরিয়া, তাজিকিস্তান, ভুটান, ব্রুনেই ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর তালিকায় এই রেকর্ড যুক্ত হয়েছে। ফিনল্যান্ডে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা একটানা ২০ দিন ছিল, যা দেশটির ইতিহাসে নজিরবিহীন।

তবে অন্যদিকে, আমেরিকার উত্তর ও দক্ষিণ অংশ, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার কিছু অংশ এবং অ্যান্টার্কটিকায় স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা ঠান্ডা আবহাওয়া ছিল।

সাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধিও ছিল আশঙ্কাজনক। গত জুলাই ছিল সমুদ্রপৃষ্ঠে উষ্ণতার দিক থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ মাস। বিশেষ করে নরওয়েজিয়ান সাগর, উত্তর সাগরের কিছু অংশ ও উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে।

আর্কটিক অঞ্চলের বরফের বিস্তার ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় ১০ শতাংশ কম, যা গত ৪৭ বছরের মধ্যে জুলাই মাসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। বরফ গলে যাওয়ার ফলে সূর্যের তাপ প্রতিফলিত না হয়ে সমুদ্রে শোষিত হয়, ফলে উষ্ণতা আরও বেড়ে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীর অতিরিক্ত তাপের প্রায় ৯০ শতাংশই শোষিত হয় সাগরের দ্বারা, যা ভবিষ্যতের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ।

-এম জামান, নিজস্ব প্রতিবেদক


জলবায়ু হুমকিতে রাষ্ট্র, অর্থের খোঁজে নাগরিকত্ব বেচাকেনা

পরিবেশ ও জলবায়ু ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ১০:২১:০৬
জলবায়ু হুমকিতে রাষ্ট্র, অর্থের খোঁজে নাগরিকত্ব বেচাকেনা
ছবিঃ সংগৃহীত

প্রশান্ত মহাসাগরের এক নিঃসঙ্গ, ঊষর ও ক্ষয়িষ্ণু দ্বীপ রাষ্ট্র—নাউরু। একসময় বিশ্বের মাথাপিছু আয়ে অন্যতম শীর্ষে থাকা এই রাষ্ট্রটি এখন জলবায়ু বিপর্যয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পথে হেঁটেছে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা এবং জলবায়ু অভিযোজন প্রকল্পে অর্থ জোগাড় করতে শুরু করেছে পাসপোর্ট বিক্রি। ‘ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স সিটিজেনশিপ প্রোগ্রাম’ নামক এই প্রকল্পে ১ লাখ ৫ হাজার মার্কিন ডলারে বিক্রি হচ্ছে এক একটি ‘সোনালী পাসপোর্ট’।

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির প্রথম বছরেই ৬৬টি পাসপোর্ট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে নাউরু সরকার। তবে প্রথম ছয় মাসে বিক্রি হয়েছে মাত্র ছয়টি—দুইটি পরিবার ও চারজন ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে নতুন নাগরিকত্ব। এর মাধ্যমে সরকারের প্রত্যাশিত আয় ছিল প্রথম বছরেই ৫ মিলিয়ন ডলার। তবুও হতাশ নন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডেভিড অ্যাডেয়াং। তিনি বলেন, “আমাদের নতুন নাগরিকদের স্বাগত জানাই, যাদের বিনিয়োগ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই ও সমৃদ্ধ একটি পথ তৈরি করবে।”

তবে এই পরিকল্পনাকে ঘিরে রয়েছে উদ্বেগ ও সন্দেহ। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, ২০০৩ সালে নাউরু যখন এ ধরনের নাগরিকত্ব বিক্রির চেষ্টা করেছিল, তখন আল-কায়েদার সদস্যরাও সে সুযোগ নিয়েছিল—যা শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা হুমকির দিকে গড়ায়। এবারও একটি আবেদন বাতিল করতে হয়েছে নিরাপত্তা যাচাইয়ে ‘নেগেটিভ ফাইন্ডিংস’ পাওয়ার পর। এর নেতৃত্বে থাকা এডওয়ার্ড ক্লার্ক জানিয়েছেন, আবেদনটি প্রত্যাহার করা না হলে তা নিশ্চিতভাবেই বাতিল করা হতো।

প্রথম পর্যায়ে যে ছয়টি পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে একটি ডুবাইয়ে বসবাসরত জার্মান এক পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। ক্লার্ক জানান, তারা ‘প্ল্যান বি’ হিসেবে দ্বিতীয় নাগরিকত্ব চেয়েছিল বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষিতে। উল্লেখযোগ্য যে, নাউরুর এই পাসপোর্টধারীরা যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও হংকংসহ ৮৯টি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণ সুবিধা পান।

বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশ বর্তমানে বিনিয়োগের বিনিময়ে অভিবাসনের সুযোগ দিচ্ছে বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার লোই ইনস্টিটিউট। প্যাসিফিক অঞ্চলের সামোয়া, টোঙ্গা ও ভানুয়াতুও পাসপোর্ট বিক্রির পথে হেঁটেছে ইতিপূর্বে।

নাউরু একটি ২১ বর্গকিলোমিটার ছোট্ট দ্বীপ—প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ক্ষুদ্র এক ফসফেটের পাহাড়। একসময় এর অত্যন্ত বিশুদ্ধ ফসফেট সম্পদ দেশটিকে বিশ্বসেরা ধনী রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। তবে সেই সম্পদ এখন ফুরিয়ে এসেছে এবং গবেষকরা বলছেন, আজ প্রায় ৮০ শতাংশ ভূমি খননের কারণে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বাকি যেটুকু আছে, সেটিও সাগরের অগ্রাসনে হুমকির মুখে।

বৈশ্বিক গড় হারের চেয়ে ১.৫ গুণ দ্রুত হারে নাউরুতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে দেশটির ৯০ শতাংশ মানুষকে স্থানান্তর করতে হতে পারে। প্রথম পর্যায়ের এই পূনর্বাসন প্রক্রিয়ার সম্ভাব্য ব্যয় ৬০ মিলিয়ন ডলার।

বস্তুত, অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এই নগণ্য ও বিপন্ন দ্বীপ রাষ্ট্র এখন নাগরিকত্বের বিনিময়ে হাত বাড়িয়েছে বৈশ্বিক ধনী ও নিরাপত্তা সন্ধানীদের দিকে। কিন্তু এই ‘প্ল্যান বি’ আর ‘সোনালী পাসপোর্ট’ সত্যিই নাউরুকে বাঁচাতে পারবে কিনা—সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

-এম জামান, নিজস্ব প্রতিবেদক


যে সাত জেলায় ঝোড়ো হাওয়া, নদীবন্দরে সতর্কতা

পরিবেশ ও জলবায়ু ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৬ ১০:১৬:৫১
যে সাত জেলায় ঝোড়ো হাওয়া, নদীবন্দরে সতর্কতা

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আবহাওয়া পরিস্থিতি আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে। বুধবার (১৬ জুলাই) ভোর ৫টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের জন্য আবহাওয়া অধিদপ্তর যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে সাতটি জেলার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে। এ অবস্থায় এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এই সতর্কতা দেশের সাগর নয়, অভ্যন্তরীণ নদীপথের জন্য জারি করা হয়েছে, যা নৌ-চলাচলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে এসব এলাকার নৌযান চলাচল ও পণ্য পরিবহনে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্থানীয় প্রশাসন ও নৌচালকদেরকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনাও রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার (১৮ জুলাই) এবং শনিবার (১৯ জুলাই) পর্যন্ত প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একই ধরনের আবহাওয়া বিরাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী তিন দিনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছে।

টানা বৃষ্টিপাতের এই পূর্বাভাস দেশের কৃষি, যোগাযোগ ও নগরজীবনে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে নিচু এলাকা, পাহাড়ি অঞ্চল ও সড়কপথে জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে পাহাড়ধসের ঝুঁকি এবং ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে যানজট ও জনদুর্ভোগ বাড়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সবাইকে সর্বশেষ আবহাওয়ার হালনাগাদ তথ্য অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে নৌপথে চলাচলরত যাত্রী ও জেলেদের জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে, যেন কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা ক্ষয়ক্ষতি না ঘটে।

ট্যাগ: আবহাওয়া

পাঠকের মতামত: