আয়ের উৎস নেই, কিন্তু সম্পদের পাহাড়!

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ০৮:৫২:২০
আয়ের উৎস নেই, কিন্তু সম্পদের পাহাড়!

প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী তারিক আহমেদ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ৬২ হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, দীর্ঘ ১৫ বছরে তিনি গোপনে গড়ে তুলেছেন এক বিশাল সম্পত্তির সাম্রাজ্য, যার সিংহভাগ জ্ঞাত আয়ের বাইরে।

২০০১ সালে সেনাবাহিনী থেকে দুর্নীতির দায়ে অপসারিত হন তারিক সিদ্দিক। সে সময় তিনি ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়ে মেজর জেনারেল হন এবংতৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান। সেই পদে থাকাকালীন সময়ে তিনি ছিলেন জনচক্ষুর অন্তরালে। সারা সময়ে তিনি কেবল একটি সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন, গণমাধ্যমের কাছ থেকেও দূরে ছিলেন সবসময়।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সময় তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ ছিল মাত্র ৭ লাখ ২৩ হাজার টাকা। অবসরের সময় তার ঘোষিত সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫২ লাখ টাকার মতো। কিন্তু সর্বশেষ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে হাজার কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ।

বিশেষ করে গাজীপুর এলাকায় ‘বাগান বিলাস’ ও ফাওকাল এলাকায় ডুপ্লেক্স বাড়ি, বারিধারায় সাততলা ভবন, পূর্বাচলে একাধিক প্লট, বসুন্ধরায় জমি, গুলশানে তিনটি ফ্ল্যাটসহ নানা জায়গায় বিপুল সম্পদ রয়েছে তারিক সিদ্দিক ও তার পরিবারের নামে। বারিধারা মডেল টাউনে সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাট, ডিওএইচএস এলাকায় প্রায় তিন হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটসহ ব্যাংকে এফডিআর মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার নগদ সম্পদেরও সন্ধান মিলেছে।

দুদকের হিসাব বলছে, তারিক সিদ্দিক এবং তার স্ত্রী শাহিন সিদ্দিকের নামে গাজীপুরেই রয়েছে ৫২ বিঘা জমি, যার বাজারমূল্য ২৬ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু তাদের বৈধ উপার্জন থেকে এসব জমি কেনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে গাজীপুরের এসব সম্পত্তি জব্দ করতে আদালতের অনুমোদন নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জেও রয়েছে ৪৮ বিঘা জমি, যার মালিকানা তারিক দম্পতির। গুলশানে সাততলা একটি ভবন, বসুন্ধরায় তিনটি প্লট, বারিধারায় চারটি ফ্ল্যাট ও এক ফ্ল্যাটের আংশিক মালিকানা ছাড়াও গাজীপুরে আরও একটি সাততলা ভবনের একাংশ তাদের মালিকানাধীন।

এদিকে, তারিক সিদ্দিক ৩ আগস্ট দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন বলে তথ্য রয়েছে। অথচ ৫ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে তিনি তার ভাই রফিক সিদ্দিকের স্ত্রী এবং শফিক আহমেদ সিদ্দিকের নামে থাকা একাধিক জমি বিক্রি করেন—যা আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ দলিলে স্বাক্ষরের সময় মালিকের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক, অথচ তার বিদেশে থাকার কথা নিশ্চিত হয়েছে।

গাজীপুর টাঁকশাল ও কালাইয়া এলাকার জমিগুলোতেও রয়েছে অনিয়মের ছাপ। ২২ বিঘার জায়গা দেখানো হয়েছে মাত্র ৫ বিঘা। রফিক সিদ্দিকের নামে থাকা একটি বাগানবাড়িও নথিতে ছোট দেখানো হলেও বাস্তবে এর আয়তন বহু গুণ বেশি। এমনকি শেখ রেহানার নামে পরিচিত এক বাড়িও রয়েছে, যা মূলত তারিক সিদ্দিক কিনে তাকে উপহার দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও তাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি।

দুদক জানায়, এখন পর্যন্ত পাওয়া সম্পদের পরিমাণ তারিক সিদ্দিকের প্রকৃত সম্পদের চেয়ে অনেক কম। অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে এবং নিত্যনতুন সম্পদের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ