প্রধান উপদেষ্টা: "জুলাই শহীদদের স্বপ্নই হবে আমাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের ভিত্তি"

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৫ ১৪:৪৯:০৭
প্রধান উপদেষ্টা: "জুলাই শহীদদের স্বপ্নই হবে আমাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের ভিত্তি"
ছবিঃ প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ

৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ তখনই সার্থক হবে, যখন বাংলাদেশকে একটি প্রকৃত জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে রূপান্তর করা যাবে।” দেশব্যাপী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়। তিনি আরও বলেন, “এই দিন শুধু একটি তারিখ নয়, এটি আমাদের জাতির এক ঐতিহাসিক প্রতিজ্ঞার প্রতীক, যা ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে জাতীয় ঐক্য ও নতুন পথের সূচনা করেছিল।”

প্রধান উপদেষ্টা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের, যাদের আত্মত্যাগে অর্জিত হয়েছে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। তবে দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও দেশের মানুষ প্রকৃত ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও সমানাধিকারের অধিকার পায়নি। তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে দেশে বৈষম্য, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, হতাশ হয়ে পড়েছে। মেধাবী তরুণদের অনেকেই চাকরির আশায় অপেক্ষা করে থেকেছেন, কিন্তু দুর্নীতি, ঘুষ ও তদবিরের কারণে তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন।

সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থাকে “দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির হাতিয়ার” হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, এই ব্যবস্থার কারণে হাজার হাজার যোগ্য তরুণ চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যাঁরা ঘুষ দিতে পারেননি বা রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদ পাননি, তাঁরা পিছিয়ে পড়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত ১৬ বছরে দেশের প্রতিটি খাতে — প্রশাসন, শিক্ষা, অর্থনীতি, বিচার ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মিডিয়া ও সংস্কৃতি — একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল, যারা স্বৈরশাসনের পক্ষে কাজ করেছে। “তাদের সহযোগিতায় দেশজুড়ে একটি ‘মাফিয়া ব্যবস্থা’ গড়ে ওঠে, যা জনগণের অর্থ লুট করে নিজেদের পকেট ভরিয়েছে,” বলেন তিনি।

তিনি জানান, যারা সরকারের অন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে পুলিশ ও দলীয় ক্যাডার বাহিনী। অনেকে গুম হয়েছেন, অনেকে হয়রানির শিকার হয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “গত বছরের ২৪ জুলাই দেশজুড়ে ছাত্র, তরুণ ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে বলেছিল—এইবার ফ্যাসিবাদ যাবে।”

তিনি অভিযোগ করেন, সরকার তখন আন্দোলন দমন করতে গুলি চালায়, ইন্টারনেট বন্ধ করে তথ্য গোপন করার চেষ্টা করে এবং আহতদের হাসপাতালে ভর্তি না নেওয়ার নির্দেশ দেয়। অনেক আহত ব্যক্তি চিকিৎসার অভাবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন বা পঙ্গু হয়ে গেছেন।

জুলাই শহীদদের স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমি তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। যারা আহত, পঙ্গু বা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও গভীর শ্রদ্ধা জানাই। এই জাতি আপনাদের অবদানের কথা কোনোদিন ভুলবে না।”

তিনি বলেন, সরকার শহীদ ও আহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে কাজ করছে। এরই মধ্যে ৭৭৫ শহীদ পরিবারের মাঝে প্রায় ৯৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ও মাসিক ভাতার চেক বিতরণ করা হয়েছে। বাকি পরিবারগুলোও অচিরেই এই সহায়তা পাবে। পাশাপাশি, ১৩ হাজার ৮০০ জন আহতকে তিনটি ধাপে প্রায় ১৫৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ৭৮ জন গুরুতর আহতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে, যেখানে চিকিৎসা বাবদ ব্যয় হয়েছে ৯৭.৫ কোটি টাকা। এছাড়া, সব সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালে তাঁদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আজ আমরা শুধু অতীত স্মরণ করতে আসিনি, আমরা একটি শপথ নিতে এসেছি—এই দেশে যেন আর কোনো দমন-পীড়ন না থাকে, যেন আমরা একটি জবাবদিহিমূলক, মানবিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গড়তে পারি।” তিনি দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেন, “জুলাই শহীদদের স্বপ্নই হবে আমাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নির্মাণরেখা। তাঁদের আত্মত্যাগই হবে আমাদের চলার অনুপ্রেরণা।”

-সুত্রঃ বি এস এস

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ