বঙ্গোপসাগরে ইলিশের বাম্পার উপস্থিতি, উপকূলজুড়ে খুশির হাওয়া

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ২১:৪৯:২২
বঙ্গোপসাগরে ইলিশের বাম্পার উপস্থিতি, উপকূলজুড়ে খুশির হাওয়া
কুয়াকাটা-আলীপুর-মহিপুর ইলিশে সয়লাব হয়ে গেছে। ছবি : কালবেলা

বঙ্গোপসাগরে ইলিশের রমরমা: উপকূলজুড়ে ফিরে এলো প্রাণচাঞ্চল্য

বঙ্গোপসাগরে ইলিশের আশাব্যঞ্জক উপস্থিতি জেলেদের মুখে হাসি ফিরিয়ে এনেছে। কুয়াকাটা, আলীপুর ও মহিপুরের মাছঘাটে প্রতিদিন ভিড়ছে ইলিশভর্তি ট্রলার। গত কয়েক দিনে এসব মোকামে শত শত মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে। এতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে উপকূলের মৎস্য পল্লীগুলোতে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঘাটে ঘাটে ভিড়ছে সারি সারি মাছভর্তি ট্রলার। জেলেরা মাছ নামাচ্ছেন, আড়তদাররা সেগুলো বিক্রি করছেন পাইকারদের কাছে। কেউ মাছের সাইজ অনুযায়ী বাছাই করছেন, কেউ বা ট্রাকে তোলার জন্য প্যাকেট করছেন। মোকামগুলো এখন কর্মচঞ্চল।

খুচরা বাজারেও ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। কুয়াকাটা-আলীপুর-মহিপুর মাছঘাট থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪৫-৫০ টন ইলিশ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। তবে বড় আকারের ইলিশের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। বাজারে ছোট ইলিশের দাম প্রতি মণ ৩০ হাজার টাকার আশেপাশে রয়েছে।

মৎস্যঘাটে দেখা গেছে, মঙ্গলবার ও বুধবার সন্ধ্যায় প্রায় ২০-২৫টি ট্রলার ঘাটে ফিরে আসে। প্রতিটি ট্রলারেই বিভিন্ন পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়েছে। যেমন—এফবি তামান্না ট্রলার ১০ মণ ইলিশ বিক্রি করেছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। এফবি আব্দুল্লাহ বিক্রি করেছে প্রায় ৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মাছ। এফবি মায়ের দোয়া ট্রলার পেয়েছে ১৩ লাখ ৫১ হাজার টাকার ইলিশ। আর এফবি জামাল ট্রলার পেয়েছে ৮০ মণের বেশি ইলিশ, যার বাজারমূল্য প্রায় ২৪-২৫ লাখ টাকা।

একজন জেলে হাসান জানান, সাগরে প্রচুর ইলিশ থাকলেও ঢেউয়ের কারণে জাল ফেলতে সমস্যা হচ্ছে। ঢেউয়ের তোড়ে জাল ছিঁড়ে যাচ্ছে। পূর্ণিমার জো কমলেই আবার মাছ ধরতে যাবেন বলে জানান তিনি।

আলীপুরের আড়তদার আ. জলিল বলেন, বর্তমানে মাছের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা কমেছে। বড় সাইজের (প্রতি কেজি) ইলিশের মণ ৬৫-৭০ হাজার টাকা, মাঝারি সাইজের (৭০০-৮০০ গ্রাম) ৪৫-৫০ হাজার টাকা এবং ছোট ইলিশ ২৫-৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জাটকা বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ হাজার টাকায়।

ট্রলারের মাঝি জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তারা দুই দিন সাগরে ফিশিং করে ছোট আকারের ১০ হাজার ইলিশ পেয়েছেন, যার পরিমাণ আনুমানিক ৮০-৮৫ মণ। এর বাজারমূল্য হতে পারে ২৪-২৫ লাখ টাকা।

অপর একজন মাঝি ইউনুচ মিয়া বলেন, ‘আমরা বড় ফাঁসের (৩.৫-৪ ইঞ্চি) জাল ব্যবহার করি। এতে ৬৫০টি বড় ইলিশ পেয়েছি, যা বিক্রি করেছি ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। ছোট ফাঁসের ট্রলিং জাল বন্ধ থাকলে আরও বেশি বড় মাছ ধরা যেত।’

আড়তদার ইউসুফ হাওলাদার বলেন, মাছের সরবরাহ ভালো থাকলেও জাটকা বেশি ধরা পড়ছে। জাটকা রক্ষায় নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা বাড়ানো হলে বড় ইলিশ আরও বেশি পাওয়া যাবে।

কলাপাড়ার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গোপসাগরে ইলিশের ঘাটতি দেখা দিলেও এখন আবার বড় সংখ্যায় ধরা পড়ছে। বৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকলে ইলিশের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ