জলবায়ু পরিবর্তন

উষ্ণতা থামেনি, রূপ বদলেছে: নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে বিশ্ব

পরিবেশ ও জলবায়ু ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৭ ১০:৩৫:০০
উষ্ণতা থামেনি, রূপ বদলেছে: নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে বিশ্ব
ছবিঃ সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় গত জুলাই মাসটি ছিল ইতিহাসের তৃতীয় উষ্ণতম জুলাই। যদিও টানা রেকর্ড ভাঙা গরমের ধারা এবার কিছুটা থেমেছে, কিন্তু ইউরোপীয় জলবায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘কোপার্নিকাস’ জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে চরম আবহাওয়ার ধ্বংসযজ্ঞ এখনো অব্যাহত। বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি, বিধ্বংসী বন্যা, দাবানল ও ভয়াবহ তাপপ্রবাহের সাক্ষী হয়েছে বিশ্ববাসী।

গত মাসে পাকিস্তান ও উত্তর চীন জুড়ে অতিভারী বৃষ্টিপাতে বন্যা সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে কানাডা, স্কটল্যান্ড ও গ্রিসে দাবানলের বিস্তার রুখতে হিমশিম খেতে হয় স্থানীয় প্রশাসনকে। দীর্ঘ খরার কারণে দাবানল আরও মারাত্মক রূপ নিয়েছে। এশিয়া ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার অনেক দেশেই জুলাই মাসে নতুন সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।

কোপার্নিকাস পরিচালক কার্লো বুয়োনতেম্পো বলেন, "২০২৩ ও ২০২৪ সালে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার পর এবারের জুলাই একটু কম উষ্ণ ছিল। তবে এটি ভ্রান্ত ধারনা দিচ্ছে যে জলবায়ু পরিবর্তন থেমে গেছে। বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা এখনো একটি উত্তপ্ত বিশ্বের পরিণতি দেখে চলেছি।"

এই জুলাইয়ে গড় তাপমাত্রা শিল্পপূর্ব যুগের (১৮৫০-১৯০০) চেয়ে ১.২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। যদিও এটি ২০২৩ ও ২০২৪ সালের তুলনায় কিছুটা কম, তথাপি প্যারিস চুক্তির ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্যসীমার কাছাকাছি। বিজ্ঞানীদের মতে, এই সামান্য পার্থক্যই যথেষ্ট হয়ে উঠছে ঝড়, তাপপ্রবাহ ও বন্যার মতো চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব দ্বিগুণ করে তুলতে।

মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চল, ইরাক এবং প্রথমবারের মতো তুরস্কেও তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। স্পেনে শুধু জুলাই মাসেই তাপপ্রবাহ-সম্পর্কিত কারণে মৃত্যু হয়েছে এক হাজারের বেশি মানুষের।

জলবায়ু পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করেছেন জীবাশ্ম জ্বালানি—তেল, কয়লা ও গ্যাস পোড়ানোকে। বুয়োনতেম্পো সতর্ক করেছেন, "যতক্ষণ না আমরা বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা স্থিতিশীল করতে পারছি, ততক্ষণ নতুন রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়া এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাত্রা বাড়তেই থাকবে।"

বিশ্বব্যাপী উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অন্তত ১১টি দেশ গত জুলাইয়ে তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। চীন, জাপান, উত্তর কোরিয়া, তাজিকিস্তান, ভুটান, ব্রুনেই ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর তালিকায় এই রেকর্ড যুক্ত হয়েছে। ফিনল্যান্ডে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা একটানা ২০ দিন ছিল, যা দেশটির ইতিহাসে নজিরবিহীন।

তবে অন্যদিকে, আমেরিকার উত্তর ও দক্ষিণ অংশ, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার কিছু অংশ এবং অ্যান্টার্কটিকায় স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা ঠান্ডা আবহাওয়া ছিল।

সাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধিও ছিল আশঙ্কাজনক। গত জুলাই ছিল সমুদ্রপৃষ্ঠে উষ্ণতার দিক থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ মাস। বিশেষ করে নরওয়েজিয়ান সাগর, উত্তর সাগরের কিছু অংশ ও উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে।

আর্কটিক অঞ্চলের বরফের বিস্তার ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় ১০ শতাংশ কম, যা গত ৪৭ বছরের মধ্যে জুলাই মাসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। বরফ গলে যাওয়ার ফলে সূর্যের তাপ প্রতিফলিত না হয়ে সমুদ্রে শোষিত হয়, ফলে উষ্ণতা আরও বেড়ে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীর অতিরিক্ত তাপের প্রায় ৯০ শতাংশই শোষিত হয় সাগরের দ্বারা, যা ভবিষ্যতের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ।

-এম জামান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ