আইএমএএফ এর ঋণের অর্থ ছাড়, যা জানা গেল

অর্থ ও বাণিজ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৩ ১৭:২২:০২
আইএমএএফ এর ঋণের অর্থ ছাড়, যা জানা গেল

সত্য নিউজ:বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী বিনিময় হার নির্ধারণে আরও নমনীয় নীতির পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমে আইএমএফের বহুল আলোচিত ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় আটকে থাকা অর্থ ছাড়ের পথ উন্মুক্ত হলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হয়ে সংস্থাটি আগামী জুন মাসের মধ্যেই দুই কিস্তিতে বাংলাদেশকে ১৩০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ডলারের বাজার-নির্ধারিত বিনিময় হারের প্রতি আরও খোলামেলা অবস্থান গ্রহণ করা হচ্ছে। বর্তমানে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতির আওতায় ডলারের দামের সীমিত উত্থান-পতনের সুযোগ থাকলেও ভবিষ্যতে আরও নমনীয়তা আনার পথ তৈরি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা

আগামীকাল (বুধবার) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দুবাই থেকে ভার্চ্যুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হবেন। সেখানে আইএমএফের ঋণ ছাড় ও বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হতে পারে বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাজার-চাহিদা অনুযায়ী বিনিময় হার ওঠানামা করলেও ‘ক্রলিং পেগ’ ব্যবস্থায় তা একটি নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকবে। বর্তমানে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১১৯ টাকা মূল্যের ওপর ২.৫ শতাংশ বাড়া-কমার সুযোগ থাকায় সর্বোচ্চ হার এখন ১২৩ টাকা।

বহুমুখী দর-কষাকষির পর অর্জিত সমঝোতা

আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড় নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল। মুদ্রানীতি, রিজার্ভ হিসাব, বিনিময় হারসহ বিভিন্ন বিষয়ে শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হলেও কাঙ্ক্ষিত সমঝোতা হচ্ছিল না।

গত এপ্রিলের প্রথমার্ধে আইএমএফের একটি টিম ঢাকা সফর করে, এরপর আলোচনার ধারা গড়ায় ২১–২৬ এপ্রিল ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বসন্তকালীন বৈঠকে। সেখানেও বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায়, ৫ ও ৬ মে দুই দিনব্যাপী ভার্চ্যুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনার ফলেই বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিনিময় হারে আরও নমনীয়তা আনতে সম্মত হয়, যা আইএমএফের অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল।

আইএমএফ ঋণ ও বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি

২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ ও বাংলাদেশের মধ্যে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয়। গত দেড় বছরে প্রথম তিন কিস্তিতে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৩১ কোটি ডলার। বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার। চলমান চতুর্থ কিস্তি ছাড়ে বিলম্ব হওয়ায় সরকারের তরফে বলা হয়েছিল, জুন মাসে একসঙ্গে দুটি কিস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মুদ্রানীতি সংস্কার, রিজার্ভ হিসাবের স্বচ্ছতা, রাজস্ব আদায়ে সংস্কার এবং বিনিময় হার ব্যবস্থাপনায় বাজার-ভিত্তিক কাঠামো চালু করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এবার বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যত আইএমএফের অন্যতম কঠোর শর্ত মেনে নিয়েছে।

শর্ত মানার বিনিময়ে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা?

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিনিময় হার ব্যবস্থাপনায় নমনীয়তা আনার মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদে আমদানি ব্যয় কিছুটা বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদে এতে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে বিনিময় হার ব্যবস্থাপনায় আর্থিক খোলামেলা নীতি গ্রহণ করলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চাপও হ্রাস পাবে।

তবে বাজারকে অতিমাত্রায় ছেড়ে দিলে মুদ্রাস্ফীতির নতুন চাপ সৃষ্টি হতে পারে—এমন উদ্বেগও রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ থাকবে—স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণের ভারসাম্য রক্ষা করে ধাপে ধাপে বিনিময় হারে বাজারঘেঁষা কাঠামো বাস্তবায়ন করা।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত