চাপের মুখে রপ্তানি: যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক ও বন্দরে ফি বৃদ্ধির দ্বৈত আঘাত

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৯ ১০:০৪:১২
চাপের মুখে রপ্তানি: যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক ও বন্দরে ফি বৃদ্ধির দ্বৈত আঘাত
ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশের রপ্তানি ও বাণিজ্য খাত বর্তমানে এক গভীর সঙ্কটে নিপতিত হতে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান শুল্ক আলোচনার এখনো নিষ্পত্তি হয়নি, যার ফলে আগামী ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি রয়েছে। এর ফলে মোট শুল্ক হার বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৫০ শতাংশে, যা আমেরিকায় ব্যবসা করা বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য চরম প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।

এই চাপের মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে ৩০–৪০ শতাংশ পর্যন্ত সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত, যা অনেক ক্যাটাগরিতে প্রযোজ্য হবে। একই সময়ে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলো তাদের ম্যানেজমেন্ট ফি বাড়াচ্ছে ৩০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত। এই খরচ সরাসরি আমদানি ও রপ্তানিকারকদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে, যা ব্যবসায়িক ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়ে দেবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বশেষ সার্ভিস চার্জ হালনাগাদ করা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। প্রায় চার দশক পর এবার সমন্বয় হচ্ছে, যেখানে কিছু চার্জ কমলেও গড় বৃদ্ধির হার ৩০–৪০ শতাংশ। সরকারী গেজেট প্রকাশের পর নতুন চার্জ কার্যকর হবে। এতে বন্দরের রাজস্ব আদায়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ১৫০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত আয় তৈরি করতে পারে।

অন্যদিকে, প্রাইভেট কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন ইতোমধ্যে একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে, ১ সেপ্টেম্বর থেকে তাদের সার্ভিস চার্জ ৩০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হবে।

এমন এক সময় এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হচ্ছে, যখন দেশের অর্থনীতি বহুমুখী চাপে রয়েছে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, “ঝড়ের মধ্যে নৌকা ভাসানো যায় না। বাণিজ্য খাত এখন ঝড়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক-সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান এখনো হয়নি। এই সময়ে চার্জ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী।”

তিনি বলেন, “৩৯ বছর পর চার্জ বাড়ানো হচ্ছে, তাহলে আর ছয় মাস পর করলেও কী ক্ষতি হতো? এখন যারা বলছেন, ৮০–১০০ ডলার বাড়লেও কিছু আসে যায় না — তারা বুঝছেন না, এই সময় একটা কলাগাছও ডুবতে যাওয়া মানুষকে বাঁচাতে পারে।”

এহসান আরও বলেন, “সরকার একই সময়ে শ্রম আইন সংশোধনের উদ্যোগও নিচ্ছে, যার সময়ও এখন নয়। আইএলও সময় দিয়েছে মার্চ পর্যন্ত, তাহলে আগস্টেই কেন সব শেষ করতে হবে? এসব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “ক্ষতির মাত্রা আমরা এখনও নির্ধারণ করতে পারছি না, কিন্তু মানসিকভাবে বিনিয়োগকারীরা বিপর্যস্ত হবেন এটা নিশ্চিত। তাই এই সিদ্ধান্তগুলো আপাতত স্থগিত রাখা উচিত। আমরা আশা করছি, আগামী ছয় মাসে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে — তখন নতুন করে ভাবা যেতে পারে।”

-নাজমুল হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ