বিনিয়োগকারীদের নজরে বাংলাদেশের ডেনিম

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৩ ০৯:০৯:৫২
বিনিয়োগকারীদের নজরে বাংলাদেশের ডেনিম

সত্য নিউজ: বাংলাদেশে ডেনিম শিল্প ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের পথে। বিশ্ববাজারের চাহিদা ও ক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আগ্রহ দেখাচ্ছে টেকসই উপকরণ, প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন এবং পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়ার প্রতি। এ প্রবণতার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’-তে।

সোমবার পূর্বাচলের আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় শুরু হয় দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী। টানা কয়েক দিনের তীব্র দাবদাহ শেষে ভোরের বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরে এলেও তা প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারীদের আগ্রহে কোনো ভাটা আনতে পারেনি। বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ (বিএই) ১২ বছর ধরে নিয়মিতভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে। এবারে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের ৫৮টি প্রতিষ্ঠান। আয়োজক সংস্থা জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে উভয় দেশের অন্তত ২০টি প্রতিষ্ঠান শেষ মুহূর্তে অংশ নিতে পারেনি।

প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী নারায়ণগঞ্জের আজলান ডেনিম লিমিটেড বর্তমানে মাসে ১৫ লাখ গজ ডেনিম কাপড় উৎপাদন করে। ক্রয়াদেশ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানোর কাজ শুরু করেছে। আগামী জুলাইয়ের মধ্যেই উৎপাদন বাড়িয়ে ২৫ লাখ গজে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আজলান ডেনিমের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের নির্বাহী পরিচালক সানাউল হক জানান, তারা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে ক্রেতাদের সামনে তাদের পণ্যের বৈচিত্র্য তুলে ধরছেন এবং একই সঙ্গে অন্য প্রতিযোগীদের প্রযুক্তি ও মান নিয়েও অবগত হচ্ছেন।

ডেনিম খাতে সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান আরগন ডেনিম এ প্রদর্শনীতে টেকসই উপকরণে তৈরি পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছে। তাদের মাসিক উৎপাদনক্ষমতা ২২ লাখ গজ, যার প্রতি গজের গড় মূল্য ২ ডলার ৮০ সেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক ইয়াসিন আল ফয়সাল বলেন, বর্তমানে টেকসই ডেনিমের প্রতি চাহিদা বাড়ছে এবং এর ফলে প্রতি গজে ১০–১৫ সেন্ট বেশি মূল্য পেলেও ইউরোপীয় বাজারে এর বিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে।

প্রদর্শনীতে সর্বোচ্চ ৩৬টি প্রতিষ্ঠান এসেছে চীন থেকে। তাদের মধ্যে অন্যতম ব্ল্যাক পিওনি টেক্সটাইল কোম্পানি, যাদের ঢাকায় নিজস্ব অফিস রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ব্যবস্থাপক চাও জি বলেন, বাংলাদেশে উচ্চমূল্যের ডেনিম পোশাকের চাহিদা বাড়ছে এবং এটি একটি সম্ভাবনাময় বাজার। তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি তাদের ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলছে না, কারণ তারা পণ্য রপ্তানি করে বিভিন্ন বাজারে, শুধু একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে নয়।

প্রদর্শনীতে আরও অংশ নিয়েছে আমেরিকান অ্যান্ড ইফার্ড বাংলাদেশ, আজগার্ড নাইন, বেস্ট টেক্স কেমিক্যালস, ওয়াইকেকে বাংলাদেশ, খান এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং, ব্লুসাইন টেকনোলজিস এজি, সিলিক্যান্ট, চেরি বাটন, কালার সেন্টার এসএ, ড্যানিস ও ডেনিম সলিউশনসসহ নানা প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, টেকসই পণ্যের দিকে ধাবিত হওয়া নিঃসন্দেহে ইতিবাচক প্রবণতা, তবে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে দাম নিয়ে। তিনি বলেন, ‘ক্রেতারা এখনো টেকসই পোশাকের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে চান না। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে টেকসই ফ্যাশনই ভবিষ্যৎ।’

ডেনিম এক্সপোর চিত্র বলছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প এখন কেবল সাশ্রয়ী মূল্যের সরবরাহকারী নয়, বরং টেকসই প্রযুক্তি ও মানসম্পন্ন উৎপাদনের মাধ্যমে বৈশ্বিক ডেনিম বাজারে নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যেই অগ্রসর হচ্ছে।


১২১তম ১০০ টাকা প্রাইজবন্ড ড্র, প্রথম পুরস্কার ৬ লাখ টাকা

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ১৯:৪১:২৭
১২১তম ১০০ টাকা প্রাইজবন্ড ড্র, প্রথম পুরস্কার ৬ লাখ টাকা
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রাইজবন্ডের ১০০ টাকা মূল্যমানের ১২১তম ড্র সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ড্রয়ে প্রথম পুরস্কার হিসেবে ৬ লাখ টাকা পেয়েছে নম্বর ০১০৮৩৩১। দ্বিতীয় পুরস্কার ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা পাওয়া নম্বর হলো ০১৫৬৮৯৭। এছাড়া তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ১ লাখ টাকা করে দুটি নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে—০০৫৬৩৬২ ও ০৪৫৩৬৬৮। চতুর্থ পুরস্কার ৫০ হাজার টাকার জন্য নির্বাচিত নম্বর হলো ০৯১২৪৪৪ ও ০৯৮৩৫৭২।

রোববার (২ নভেম্বর) ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে এই ড্র অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ড্রে পঞ্চম পুরস্কারের জন্য ১০ হাজার টাকার ৪০টি নম্বর ঘোষণা করা হয়েছে। সেগুলো হলো:০০১৩৩৮৬, ০০১৪৯৯২, ০০২৮১৮৩, ০০৫৩২২৬, ০১১৯০৬৯, ০১৬৮৮৭৩, ০২৪৪০৭৪, ০২৫৭৫৯৪, ০২৬৫৯৩৮, ০২৯২৯৪১, ০২৯৬৪২৯, ০৩২৭৯১০, ০৩৪০৪০৭, ০৩৪৯৩১৫, ০৩৫৫২০৬, ০৩৬৭৫২৯, ০৩৬৯১১৭, ০৪১৭৭২৮, ০৪২৫৬৮৩, ০৫০১০৪৩, ০৫১৫৫৪২, ০৫৪৯৫২১, ০৫৬৫৯৩৬, ০৬০২২৬৫, ০৬২০২৫৯, ০৬২৪৭১৮, ০৬৭৪৩৪৪, ০৭১২৭৪০, ০৭৫৯০৫৯, ০৭৬৯৩৯২, ০৭৮২৭২৮, ০৭৯১৪২৮, ০৭৯৯৭৩২, ০৮২১৬৭৭, ০৮৬৫১২২, ০৯০৩৩৯২, ০৯০৪৩৫২, ০৯২২১৮০, ০৯৩৬৬১৭, ০৯৮৫৯৫২।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, মোট ৩,৮১৮টি প্রাইজবন্ডের মধ্যে ৪৬টি টিকিট পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। সঞ্চয় অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, ড্রয়ের ৬০ দিনের মধ্যে বিজয়ীরা তাদের পুরস্কার দাবি করতে পারবেন। উল্লেখ্য, নির্ধারিত সময়সীমার পর প্রাইজবন্ডের দাবিগুলি গ্রহণযোগ্য হবে না।

২০২৩ সালে প্রবর্তিত সংশোধিত নীতিমালার অধীনে, প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের অর্থের ওপর ২০ শতাংশ কর প্রযোজ্য।


বেসরকারি ব্যাংক ঘিরে প্রবাসী রেমিট্যান্সের মূল প্রবাহ

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ১৮:৫১:০৯
বেসরকারি ব্যাংক ঘিরে প্রবাসী রেমিট্যান্সের মূল প্রবাহ
ছবি: সংগৃহীত

অক্টোবর মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে পাঠিয়েছেন মোট ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার, যা বর্তমান বিনিময় হার ১২২ টাকা প্রতি ডলার ধরে ৩১,২৭৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকার সমতুল্য। এটি দৈনিক গড়ে প্রায় ৮ কোটি ২৬ লাখ ডলার বা প্রায় ১,০০৮ কোটি টাকার প্রবাসী আয় হিসেবে গণনা করা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই মাসে সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের মিলিতভাবে ৭টি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে বলা হয়েছে, অক্টোবরের মোট রেমিট্যান্সের মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো মাধ্যমে এসেছে ৪৭ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার। বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৪ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলো মাধ্যমে এসেছে সর্বাধিক ১৮৩ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এছাড়া, বিদেশি ব্যাংকগুলো মাধ্যমে এসেছে ৭৭ লাখ ডলারের বেশি।

এই তথ্য থেকে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থ পাঠানোর মূল ধারা বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে কিছু ব্যাংক কোনো রেমিট্যান্স গ্রহণ করতে না পারা বা শূন্য থাকতে থাকা প্রভাবকে কেন্দ্র করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান দেখা দিতে পারে।

প্রবাসী আয় দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বাড়ানো, অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও বৈদেশিক লগ্নি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অক্টোবর মাসের এই পরিসংখ্যান অর্থনীতিবিদদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।


ডলারের যুগের অবসান? পাঁচ শতাব্দীর আর্থিক ইতিহাসে পুনরাবৃত্ত পতনের ছন্দ

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ১২:০৬:২০
ডলারের যুগের অবসান? পাঁচ শতাব্দীর আর্থিক ইতিহাসে পুনরাবৃত্ত পতনের ছন্দ

কল্পনা করুন, সময়টা ১৯৪৪ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখনও শেষ হয়নি। ৪৪টি মিত্র দেশের প্রতিনিধিরা সমবেত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের পাহাড়ি শহর ব্রেটন উডসের মনোরম মাউন্ট ওয়াশিংটন হোটেলে। সেই বৈঠকে তাঁরা এমন এক সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন, যা পরবর্তী আশি বছরের জন্য পৃথিবীর অর্থনীতির ভাগ্য নির্ধারণ করবে। সভাকক্ষের ভেতরে ইতিহাস যেন থমকে আছে। ব্রিটেন, যে দেশ একসময় পৃথিবীর আর্থিক হৃদস্পন্দন ছিল, এখন প্রায় নিঃস্ব। তার জাতীয় ঋণ জিডিপির ২৪৯ শতাংশে পৌঁছেছে। পরপর দুটি বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কায় সাম্রাজ্যটির অর্থনীতি প্রায় মুমূর্ষু অবস্থায়। যে দেশ শতাব্দীর পর শতাব্দী সমুদ্রপথ শাসন করেছিল, তার রিজার্ভ শেষ, ব্যাংক শূন্য এবং জনগণ ক্লান্ত। সেই মুহূর্তে উপস্থিত সবাই বুঝেছিল, এক যুগের অবসান ঘনিয়ে এসেছে।

তখন ঘটে ইতিহাসে বিরল এক ঘটনা। বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রার মুকুট এক সাম্রাজ্য থেকে অন্য সাম্রাজ্যের হাতে হস্তান্তরিত হয়। ব্রিটিশ পাউন্ড, যা দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব বাণিজ্যের মেরুদণ্ড ছিল, হারায় তার মর্যাদা। সেই শূন্যস্থান পূরণ করে মার্কিন ডলার। তবে এটি কেবল আর্থিক হস্তান্তর নয়। এটি ছিল মানবসভ্যতার আর্থিক ইতিহাসে বারবার পুনরাবৃত্ত এক চক্রের ধারাবাহিকতা। এই চক্রের চারটি ধাপ উত্থান, শিখর, অতিবিস্তার এবং পতন যুগে যুগে সাম্রাজ্য থেকে সাম্রাজ্যে পুনরাবৃত্ত হয়েছে। ইতিহাসে পর্তুগাল, স্পেন, নেদারল্যান্ডস এবং ব্রিটেন সবাই এই একই ধাপের মধ্য দিয়ে গেছে। আজ মার্কিন ডলার সেইসব পূর্বসূরির মতোই একই সতর্ক সংকেত দেখাতে শুরু করেছে।

এই চক্রটি বুঝতে হলে ফিরে যেতে হবে অতীতে, প্রায় ছয় শতাব্দী পেছনে, ইউরোপের পশ্চিম উপকূলে, পর্তুগালের উত্থানের কাহিনিতে।

পর্তুগালের রিয়াল ও আবিষ্কারের যুগ

১৪৫০ সালের দিকে পর্তুগিজ রিয়াল হয়ে ওঠে বিশ্বের প্রথম প্রকৃত রিজার্ভ মুদ্রা। পরবর্তী আশি বছর পর্তুগাল ছিল বৈশ্বিক বাণিজ্যের অবিসংবাদিত নেতা। তাদের সাফল্যের রহস্য ছিল নৌচালনা ও বৈদেশিক বাণিজ্যে উদ্ভাবন। ১৪৫৩ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের হাতে কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর প্রাচীন মশলার বাণিজ্যপথ বন্ধ হয়ে যায়। ইউরোপীয় বণিকদের জন্য এটি ছিল এক বিশাল ধাক্কা, কিন্তু পর্তুগাল খুঁজে পেল নতুন পথ। তারা আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্ত ঘুরে সমুদ্রপথে এশিয়ায় পৌঁছে দেয় বাণিজ্যের নতুন দ্বার, শুরু হয় আবিষ্কারের যুগ।

লিসবন তখন হয়ে ওঠে বিশ্বের বাণিজ্যকেন্দ্র। পর্তুগিজ রিয়াল ইউরোপ থেকে এশিয়া পর্যন্ত গৃহীত হতে শুরু করে। সাম্রাজ্য ছড়িয়ে পড়ে আফ্রিকা, ভারত, মালয়েশিয়া, জাপান এবং চীনের ম্যাকাও পর্যন্ত। কিন্তু ইতিহাসের চিরন্তন নিয়ম অনুযায়ী সাফল্যই হয়ে ওঠে পতনের সূচনা। চারটি মহাদেশে সামরিক ঘাঁটি রক্ষা করতে করতে তাদের ভাণ্ডার ফুরিয়ে যায়। প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি ডাচ, ফরাসি ও ব্রিটিশরা ক্রমে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ১৫৩০-এর দশকে রাজপরিবারে উত্তরাধিকার সংকট সৃষ্টি হলে দেশটি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ১৫৮০ সালে স্পেনের হাতে পর্তুগাল আত্মসমর্পণ করে, গঠিত হয় আইবেরিয়ান ইউনিয়ন। প্রায় আশি বছরের আধিপত্যের পর ইতিহাসের মঞ্চ থেকে হারিয়ে যায় পর্তুগালের রিয়াল। তার জায়গা নেয় স্প্যানিশ রূপা।

স্প্যানিশ রূপার সাম্রাজ্য

স্পেনের উত্থান শুরু হয় আন্দিজ পর্বতমালার কোলে বলিভিয়ার পোটোসি নামের এক পাহাড়ে বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ রূপার খনি আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। ১৫৪৫ সালে আবিষ্কৃত এই খনি ১৫৭৫ থেকে ১৬৩৫ সালের মধ্যে উৎপাদন করেছিল বিশ্বের প্রায় অর্ধেক রূপা। এই রূপা দিয়ে তৈরি হয় বিখ্যাত “পিস অফ এইট”, যা বিশ্বের প্রথম বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে পরিচিত হয়। এই স্প্যানিশ ডলার এতটাই নির্ভরযোগ্য ছিল যে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ মুদ্রা হিসেবে প্রচলিত ছিল।

স্পেনের আধিপত্য স্থায়ী হয় প্রায় ১১০ বছর। কিন্তু অতিবিস্তার ও ঋণের বোঝা তাদের পতন ডেকে আনে। রাজা চার্লস প্রথম রেখে যান ৩৬ মিলিয়ন ডুকাট ঋণ এবং প্রতি বছর এক মিলিয়ন ডুকাটের ঘাটতি। তাঁর পুত্র ফিলিপ দ্বিতীয় এই বোঝা সামলাতে গিয়ে চারবার দেউলিয়া ঘোষণা করেন ১৫৫৭, ১৫৬০, ১৫৭৫ এবং ১৫৯৬ সালে। রূপার অবিরাম প্রবাহ দেশে সৃষ্টি করে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি। ফিলিপ দ্বিতীয়ের রাজত্বকালে পণ্যের দাম চারগুণ বেড়ে যায়। ফিলিপ তৃতীয়ের আমলে রূপার সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসতেই অর্থনীতি ধসে পড়ে এবং ১৬০৭ সালে আবার দেউলিয়াত্ব ঘোষণা করতে হয়। ১৬৪১ সালে আইবেরিয়ান ইউনিয়ন ভেঙে যায়। স্পেনের রূপার রাজত্বের অবসান ঘটে এবং আর্থিক শক্তির মঞ্চে উঠে আসে ডাচ প্রজাতন্ত্র।

নেদারল্যান্ডসের সোনালি যুগ

১৭ শতকে নেদারল্যান্ডস হয়ে ওঠে বিশ্বের আর্থিক রাজধানী। আমস্টারডাম তখন বাণিজ্যের নতুন কেন্দ্র এবং ডাচ গিল্ডার ইউরোপের কার্যত রিজার্ভ মুদ্রা। আমস্টারডাম ব্যাংক প্রবর্তন করে আন্তর্জাতিক অর্থপ্রদানের আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা। ডাচ বণিকেরা প্রথম গঠন করে শেয়ারবাজার, সামুদ্রিক বীমা এবং শেয়ার কোম্পানির ধারণা।

১৬৪২ থেকে ১৭২০ পর্যন্ত, প্রায় আট দশক ধরে, বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ বাণিজ্য সম্পন্ন হতো ডাচ মুদ্রায়। কিন্তু একই চক্র পুনরায় দেখা দেয়। চতুর্থ ইংরেজ-ডাচ যুদ্ধের (১৭৮০ থেকে ১৭৮৪) ফলে দেশটি দেউলিয়া হয়ে পড়ে। বিশাল ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভেঙে যায়। এই শূন্যস্থান পূরণ করে ব্রিটেন, যে তখন শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিল।

ব্রিটিশ পাউন্ড ও শিল্পবিপ্লবের শতাব্দী

দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ব্রিটিশ পাউন্ড ছিল বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রধান মুদ্রা। শিল্পবিপ্লব, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও উপনিবেশ সাম্রাজ্যের শক্তিতে ব্রিটেন গড়ে তোলে পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থনীতি। ১৮১৬ সালের গ্রেট রিকয়েনেজের পর স্বর্ণমান প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পাউন্ডকে বিশ্বের সবচেয়ে স্থিতিশীল মুদ্রায় পরিণত করে। ১৯২২ সালের মধ্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য শাসন করত বিশ্বের এক চতুর্থাংশ ভূমি ও এক পঞ্চমাংশ জনসংখ্যা, প্রায় ৪৫৮ মিলিয়ন মানুষ।

তবে দীর্ঘস্থায়ী এই আধিপত্যের অবসান ঘটাতে শুরু করে দুটি বিশ্বযুদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ঋণ বেড়ে যায় ৬৫০ মিলিয়ন পাউন্ড থেকে ৭ বিলিয়নে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে সরকারি ঋণ দাঁড়ায় জিডিপির ২৭০ শতাংশে। ব্রিটেন যুদ্ধ জিতলেও হারায় তার আর্থিক নেতৃত্ব।

ব্রেটন উডস ও ডলারের যুগ

১৯৪৪ সালের জুলাই মাসে ৭০০ প্রতিনিধি জড়ো হন ব্রেটন উডসে। লক্ষ্য ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত বিশ্ব অর্থনীতির পুনর্গঠন। সেই সম্মেলন থেকেই জন্ম নেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) এবং বিশ্বব্যাংক (World Bank)। চুক্তি অনুযায়ী সব বড় মুদ্রা বাঁধা হয় মার্কিন ডলারের সঙ্গে, আর ডলার বাঁধা হয় স্বর্ণে প্রতি আউন্স ৩৫ ডলার দরে। এই মুহূর্তেই ব্রিটিশ পাউন্ডের যুগের সমাপ্তি ঘটে এবং সূচনা হয় আমেরিকান যুগের।

এরপরের পঁচিশ বছর ডলার রাজত্ব করে নিরঙ্কুশভাবে। ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ডলারের স্বর্ণ-রূপান্তরযোগ্যতা স্থগিত করেন এবং স্বর্ণমান বিলুপ্ত হয়। তবু ডলার ধসে পড়েনি। বরং খুঁজে নেয় নতুন ভিত্তি, তেল।

১৯৭৩ সালের ওপেক তেল সংকটের পর যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের সঙ্গে এক কৌশলগত চুক্তি করে। মার্কিন সামরিক সুরক্ষার বিনিময়ে সৌদি তেল বিক্রি হবে কেবল ডলারে। ১৯৭৫ সালের মধ্যে সব ওপেক সদস্য এই চুক্তি মেনে নেয়। জন্ম নেয় পেট্রো-ডলার ব্যবস্থা। তেল ছিল সবার প্রয়োজন, তাই ডলারও হয়ে ওঠে সবার প্রয়োজন। এই কৃত্রিম চাহিদা যুক্তরাষ্ট্রকে এমন বিশাল ঘাটতি বহনের সুযোগ দেয় যা অন্য কোনো দেশের পক্ষে অসম্ভব ছিল।

২০০০ সালের দিকে বিশ্বের বৈদেশিক রিজার্ভের ৭০ শতাংশ ছিল ডলারে। কিন্তু ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৫৭ দশমিক ৮ শতাংশে। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের সময় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মার্কিন ট্রেজারির অর্ধেকেরও বেশি ধারণ করত, অথচ ২০২৫ সালে তা নেমে আসে মাত্র ৩০ শতাংশে।

ডি-ডলারাইজেশনের দ্রুত অগ্রযাত্রা

একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী জোট ব্রিকস, যার সদস্য ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা, সম্প্রতি যুক্ত করেছে মিশর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। তারা গড়ে তুলছে ব্রিকস ব্রিজ, একটি পেমেন্ট নেটওয়ার্ক যা সেন্ট্রাল ব্যাংকের ডিজিটাল মুদ্রার মাধ্যমে লেনদেন করবে, ডলার ছাড়াই। ২০২৫ সাল নাগাদ এই জোট ও তাদের ১৩টি অংশীদার দেশ এই উদ্যোগে যুক্ত হচ্ছে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিজেই ঋণে ডুবে আছে। ২০২৫ সালের মার্চে মার্কিন সরকারের মোট ঋণ দাঁড়ায় ৩৬ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে, যা জিডিপির ১২৪ শতাংশ। এটি সেই একই সূচক যা ইতিহাসে প্রতিটি সাম্রাজ্যের পতনের আগে দেখা গেছে, অতিরিক্ত ঋণ, সামরিক অতিবিস্তার এবং উৎপাদনশীলতার পতন।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

পর্তুগাল, স্পেন, নেদারল্যান্ডস এবং ব্রিটেন সবাই একই পথে হেঁটেছে। তাদের রিজার্ভ মুদ্রার আয়ু ছিল ৭৮ থেকে ২২০ বছর পর্যন্ত, গড়ে প্রায় ৯৫। মার্কিন ডলার এখন ৮১ বছরে পা দিয়েছে। ইতিহাসের চক্র আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

প্রত্যেক রিজার্ভ মুদ্রার চারটি ধাপ থাকে। প্রথম ধাপ উত্থান, যখন একটি দেশ বাণিজ্য, অর্থনীতি বা সামরিক শক্তিতে উদ্ভাবনের মাধ্যমে নেতৃত্ব গড়ে তোলে। পর্তুগাল নৌচালনায় বিপ্লব ঘটায়, স্পেন রূপার জোগান নিয়ন্ত্রণ করে, ডাচরা আধুনিক অর্থব্যবস্থা তৈরি করে, ব্রিটেন শিল্পবিপ্লব ঘটায় এবং যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ-পরবর্তী শিল্পশক্তিতে উত্থান ঘটায়। দ্বিতীয় ধাপ শিখর, যখন সেই মুদ্রা হয়ে ওঠে বৈশ্বিক মানদণ্ড এবং বিশ্বের ৬০ শতাংশ বাণিজ্য এতে পরিচালিত হয়। তৃতীয় ধাপ অতিবিস্তার, যেখানে সামরিক ব্যয়, ঋণ এবং উৎপাদনশীলতার পতন দেখা দেয়। পর্তুগাল চার মহাদেশে সামরিক বোঝা বইতে পারেনি, স্পেন বারবার দেউলিয়া হয়েছে, ডাচরা ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধ করে নিঃশেষ হয়েছে, ব্রিটেনের ঋণ পৌঁছেছিল জিডিপির ২৭০ শতাংশে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ ১২৪ শতাংশ এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ব্যয় আট ট্রিলিয়ন ডলার। শেষ ধাপ পতন, যখন আস্থা হারিয়ে যায় এবং বৈশ্বিক ক্ষমতার কেন্দ্র সরে যায় অন্যত্র।

পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা: একমেরু না বহুমেরু

স্পেনের হাতে পতনের পর পর্তুগাল আর কখনো মাথা তুলতে পারেনি। স্পেন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ধুঁকেছে, নেদারল্যান্ডস ধনী থেকেও আঞ্চলিক শক্তিতে সীমিত হয়েছে, আর ব্রিটেনের সাম্রাজ্য ১৯৪৫-এর পর গলে গেছে। ১৯৫০-এর দশকে এখনও বিশ্বের ৫৫ শতাংশ রিজার্ভ ছিল স্টার্লিংয়ে, কিন্তু দুই দশকের মধ্যেই তা অর্ধেকে নেমে আসে। ব্রিটিশ শতাব্দী শেষ, শুরু হয় আমেরিকান শতাব্দী।

তবে এমন পরিবর্তন একদিনে ঘটে না। ব্রিটেনের পতন ছিল ধীর, যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে তাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল বহু আগেই, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে ডলার পাউন্ডকে প্রতিস্থাপন করে পরে। আজ একই ধীর রূপান্তর সম্ভবত আবার ঘটছে, এইবার চীনের দিকে, কিংবা একাধিক শক্তির সম্মিলিত নেতৃত্বে নতুন এক বহুমেরু বিশ্বব্যবস্থার দিকে।

ইতিহাসে রিজার্ভ মুদ্রার গড় আয়ু প্রায় ৯৫ বছর। মার্কিন ডলার সেই সীমার কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে। বৈশ্বিক রিজার্ভে ডলারের অংশীদারিত্ব কমছে, বিদেশি ট্রেজারি বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে, ব্রিকস বিকল্প গড়ে তুলছে, পেট্রো-ডলার ব্যবস্থা দুর্বল হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৩০ দেশে ৯০০ সামরিক ঘাঁটি ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। এই চিত্র যেন ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি, একই ছন্দে, নতুন মুখে।

তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে, এই পরিবর্তন কত দ্রুত ঘটবে এবং পরবর্তী আর্থিক যুগের নেতৃত্ব নেবে কে। এটি কি হবে ব্রিটেনের মতো ধীর অবসান, নাকি নেদারল্যান্ডসের মতো আকস্মিক পতন। একটি একক শক্তি কি আবার বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষে উঠবে, নাকি ভবিষ্যৎ হবে বহুমেরু, যেখানে কয়েকটি রিজার্ভ মুদ্রা ভাগাভাগি করবে বৈশ্বিক প্রভাব।

ইতিহাস কখনো ঠিক একরকম পুনরাবৃত্তি হয় না, কিন্তু তার ছন্দ ফিরে আসে। আর যদি সেই ছন্দ এবারও সত্য প্রমাণিত হয়, তবে পৃথিবী এখন দাঁড়িয়ে আছে এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে, ডলারের আধিপত্যের শেষ অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে।


জ্বালানি বাজারে পরিবর্তন ও বৈশ্বিক প্রভাব প্রকাশ

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ১১:২৪:৩৩
জ্বালানি বাজারে পরিবর্তন ও বৈশ্বিক প্রভাব প্রকাশ
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারে চলমান পরিবর্তন এবং এর প্রভাব নিয়ে বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি একটি বিশদ বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বর্তমানে ৬৮ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। তেলের মূল্যে এ পতন বিশেষভাবে কৃষি ও খাদ্য খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আনুমানিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। মূলত চীনে তেলের চাহিদা স্থিতিশীল থাকায় বৈশ্বিকভাবে তেলের বাজারে অস্থিরতা সীমিত থাকবে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম হবে গত ৬ বছরে সর্বনিম্ন স্তরে, যা ক্রমাগত চতুর্থ বছর পতনের ইঙ্গিত বহন করছে। এর পেছনে দুর্বল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, তেলের উদ্বৃত্ত এবং নীতিগত অনিশ্চয়তা মূল ভূমিকা রাখছে। ২০২৫ এবং ২০২৬ সালে পণ্যের দাম উভয় বছর প্রায় ৭ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ২০২৫ সালে তেলের দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে আবার দাম প্রায় ৬ শতাংশ বাড়তে পারে। তেলের চাহিদার ধীরগতি এবং সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে ২০২৫ সালের শুরু থেকেই পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। বিশেষভাবে, চীনে তেলের ব্যবহার স্থবির হওয়ায় এবং বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহনের বিক্রয় বৃদ্ধির কারণে তেলের চাহিদা ধীরে ধীরে কমছে।

জ্বালানি খাতের দামের পতনের ফলে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পাচ্ছে। চাল ও গমের দাম কমার কারণে কিছু উন্নয়নশীল দেশে খাদ্য আরও সাশ্রয়ী হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দ্রমিত গিল মন্তব্য করেছেন, “তেলের দাম কমার ফলে ভোক্তা-মূল্য মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেছে। তবে এই স্বস্তি স্থায়ী হবে না। সরকারের উচিত তাদের আর্থিক খাতকে আরও সুশৃঙ্খল করা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে ত্বরান্বিত করা।”

খাদ্য ও কৃষি খাতে ২০২৫ সালে দাম আনুমানিক ৬.১ শতাংশ কমবে এবং ২০২৬ সালে আরও ০.৩ শতাংশ হ্রাস হবে। সয়াবিনের দাম ২০২৫ সালে কমছে, তবে আগামী দুই বছরে স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কফি ও কোকোর দামও ২০২৬ সালে কমতে পারে, কিন্তু সার বাজারে ২০২৫ সালে প্রায় ২১ শতাংশ বৃদ্ধি হবে, যা মূলত বাণিজ্য বিধিনিষেধের কারণে। এটি কৃষকদের লাভের মার্জিন ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং ভবিষ্যতের ফসল উৎপাদনের উপর উদ্বেগ বাড়াবে।

মূল্যবান ধাতুর বাজারেও বৈশ্বিক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০২৫ সালে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছাবে, যা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে চাহিদা বৃদ্ধির কারণে। বছরের শেষে সোনার দাম ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ২০২৬ সালে আরও ৫ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৫ সালে রূপার দামও গড়ে ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং ২০২৬ সালে আরও ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

বিশ্বব্যাংক আরও উল্লেখ করেছে, দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য উত্তেজনা ও নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি কম থাকলে পণ্যের দাম প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হ্রাস পেতে পারে। অতিরিক্ত তেল উৎপাদন এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের বৃদ্ধি ভবিষ্যতে তেলের চাহিদা আরও হ্রাস করতে পারে। বিপরীতে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সংঘাত তেলের দাম বাড়াতে পারে এবং নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনা ও রূপার চাহিদা বৃদ্ধি করতে পারে।

এছাড়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) সম্প্রসারণ এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে শক্তি ও বেসধাতুর দাম, যেমন অ্যালুমিনিয়াম ও তামা, বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশ্বব্যাংকের উপ-প্রধান অর্থনীতিবিদ আয়হান কোস বলেছেন, “তেলের দাম কমার ফলে উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য একটি সময়োপযোগী সুযোগ তৈরি হয়। ব্যয়বহুল জ্বালানি ভর্তুকি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি মানবসম্পদ ও অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ হিসেবে কাজে লাগতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।”

-শরিফুল


বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম আবারও বাড়ল, বাজুসের নতুন ঘোষণা

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ১০:২৩:৩৪
বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম আবারও বাড়ল, বাজুসের নতুন ঘোষণা
ছবি: সংগৃহীত

দেশের স্বর্ণবাজারে আবারও দেখা দিয়েছে মূল্যবৃদ্ধি। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) শনিবার (১ নভেম্বর) রাতে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছে, রবিবার (২ নভেম্বর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হচ্ছে। প্রতি ভরিতে স্বর্ণের দাম ১,৬৮০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজুস জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে বিশুদ্ধ স্বর্ণের (তেজাবি) মূল্য বৃদ্ধির কারণে এই সমন্বয় করা হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী প্রতি ভরির স্বর্ণের মূল্য নির্ধারিত হয়েছে:

  • ২২ ক্যারেট: ২,০১,৭৭৬ টাকা
  • ২১ ক্যারেট: ১,৯২,৫৯৬ টাকা
  • ১৮ ক্যারেট: ১,৬৫,০৮১ টাকা
  • সনাতন পদ্ধতি (পুরনো ভরিতে): ১,৩৭,১৮০ টাকা

বাজুস আরও জানিয়েছে, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে ৫% সরকারি ভ্যাট এবং ৬% ন্যূনতম মজুরি যোগ করতে হবে। তবে, গহনার ডিজাইন ও মান অনুসারে এই মজুরি ভিন্ন হতে পারে, যা খুচরা বিক্রেতার discretion অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।

স্থানীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি এবং দেশের ভেতরের চাহিদার চাপই এ মূল্যস্ফীতির মূল কারণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে গ্লোবাল মার্কেটে স্বর্ণের মূল্য যদি ওঠানামা করে, তবে দেশের বাজারেও দাম আরও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি বা হ্রাস পেতে পারে।


তীব্র আর্থিক সংকটে অন্তর্বর্তী সরকার

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০১ ১২:৩৫:৪৯
তীব্র আর্থিক সংকটে অন্তর্বর্তী সরকার
ছবিঃ সংগৃহীত

তীব্র আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। রাজস্ব আদায় প্রত্যাশিত হারে হ্রাস, বিগত সরকারের নেওয়া বিপুল অঙ্কের ঋণ পরিশোধের বোঝা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়ে যাওয়া—এই তিনটি কারণে মূলত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই সংকট মোকাবিলা করে সরকারের পরিকল্পিত চলতি ব্যয় মেটাতেও ঋণের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আর্থিক এই দুরবস্থার কারণে সরকার ইতোমধ্যে কৃচ্ছ্র সাধনের নীতি গ্রহণ করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তৈরি এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ঋণ প্রবাহের চিত্র

প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এর বিপরীতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়েনি, বরং কমেছে দশমিক ০৩ শতাংশ। আমদানি বাড়লেও রপ্তানি খাত, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে নেতিবাচক প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর এই মন্দা আরও প্রকট হয়।

দেশের মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের মাত্র ২৮ শতাংশ সরকারি খাতে গেলেও, কেবল সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ার কারণে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণপ্রবাহ সামান্য (দশমিক ৩৬ শতাংশ) বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, এই সরকারি ঋণ বৃদ্ধি উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে কোনো ভূমিকা রাখছে না, কারণ এই অর্থ মূলত পরিকল্পিত চলতি ব্যয় নির্বাহেই ব্যবহার করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে সরকারি খাতে ঋণ বৃদ্ধির জন্য তিনটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে

১. রাজস্ব আদায় ঘাটতি: সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। জুলাই-আগস্টে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বা ৬ হাজার ৫৭৭ কোটি ২৬ লাখ টাকার ঘাটতি হয়েছে।

২. বিগত সরকারের ঋণের বোঝা: ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দেশি-বিদেশি উৎস থেকে যে ব্যাপক ঋণ নিয়েছিল, ডলার ও টাকার সংকটে তা পরিশোধ করতে পারেনি। ফলে সুদ ও দণ্ড সুদ বেড়ে ঋণ পরিশোধের স্থিতিও বেড়েছে। দেশের সুনাম ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতে বর্তমান সরকার এখন সেই ঋণ পরিশোধ করছে।

৩. উচ্চ মূল্যস্ফীতি: মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ওপরে রয়েছে। দীর্ঘদিন উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকার কারণে পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়েছে, যার ফলে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়াতে গিয়ে সরকারের খরচ বেড়েছে।

নন-ব্যাংকিং খাতের ওপর নির্ভরতা

সরকার বর্তমানে ঋণ পরিশোধের জন্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কম সুদের ঋণের ওপর নির্ভর করছে। মাঝে মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায় ঋণ নিলেও তা স্বল্প সময়ের মধ্যেই পরিশোধ করে দিচ্ছে। মজার বিষয় হলো, সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ না নিয়ে বরং আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করছে (জুলাই-আগস্টে ২ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা পরিশোধ)।

তবে এর বিপরীতে সরকার উচ্চ সুদে (১১ থেকে পৌনে ১২ শতাংশ) নন-ব্যাংকিং খাত, যেমন সঞ্চয়পত্র ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এই ঋণ পরিশোধেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। এদিকে বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে গিয়ে চড়া দামে ডলার কিনতে হচ্ছে এবং কিস্তি স্থগিত করার কারণে সুদও বেশি দিতে হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক প্রতিবেদনে সরকারি খাতের ঋণ কমাতে এবং বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আইএমএফ বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের এই অব্যাহত নিম্নমুখিতাকে উদ্বেগজনক হিসাবে চিহ্নিত করেছে।

এদিকে, ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আমানত সামান্য বাড়লেও (১.৪৪ শতাংশ) তা তারল্যের জোগান বাড়াতে যথেষ্ট নয়। তবে মেয়াদি আমানত বাড়ায় ব্যাংক খাত দীর্ঘ মেয়াদে আমানত সংকট ঘোচানোর দিকে এগোচ্ছে।

সূত্র : যুগান্তর।


রেকর্ড বৃদ্ধি পরদিনই দরপতন শুক্রবার থেকে কার্যকর হবে নতুন স্বর্ণের মূল্য

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ৩০ ২১:৪০:১২
রেকর্ড বৃদ্ধি পরদিনই দরপতন শুক্রবার থেকে কার্যকর হবে নতুন স্বর্ণের মূল্য
ছবিঃ সংগৃহীত

দেশে সোনার বাজারে একদিন পরই বড় ধরনের সমন্বয় এনেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৬১৩ টাকা কমিয়ে ২ লাখ ৯৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নতুন দর আগামীকাল শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) থেকেই সারা দেশে কার্যকর হবে।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাতে বাজুস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে 'তেজাবি স্বর্ণের' (পিওর গোল্ড) মূল্য হ্রাস পাওয়ায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বর্ণের দাম কমানোর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী, দেশের বাজারে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম নিম্নরূপ

২২ ক্যারেট: ২ লাখ ৯৬ টাকা

২১ ক্যারেট: ১ লাখ ৯০ হাজার ৯৯৮ টাকা

১৮ ক্যারেট: ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭১৬ টাকা

সনাতন পদ্ধতি: ১ লাখ ৩৬ হাজার ১৪ টাকা

বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম ৬ শতাংশ মজুরি যোগ হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির হার ভিন্ন হতে পারে বলে জানিয়েছে বাজুস।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ গত ২৯ অক্টোবর বাজুস দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল। সেই সময় ভরিতে ৮ হাজার ৯০০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ২ হাজার ৭০৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা ৩০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছিল।

এই নিয়ে চলতি বছরে দেশের বাজারে মোট ৭২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হলো। এর মধ্যে দাম বাড়ানো হয়েছে ৪৯ বার এবং কমানো হয়েছে মাত্র ২৩ বার। গত বছর (২০২৪) মোট ৬২ বার সমন্বয়ের মধ্যে ৩৫ বার দাম বেড়েছিল এবং ২৭ বার কমেছিল।

স্বর্ণের দাম কমলেও দেশের বাজারে রুপার দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা ৪ হাজার ২৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৪ হাজার ৪৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৩ হাজার ৪৭৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপা ২ হাজার ৬০১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চলতি বছর রুপার দাম ৯ বার সমন্বয় করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬ বার বেড়েছে ও ৩ বার কমেছে।


বাংলাদেশি টাকার আজকের বিনিময় হার প্রকাশিত

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ৩০ ১২:২৩:৪৪
বাংলাদেশি টাকার আজকের বিনিময় হার প্রকাশিত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আজ ৩০ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রার সাথে বাংলাদেশি টাকার বিনিময় হার প্রকাশ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন ডলার (USD), ব্রিটিশ পাউন্ড (GBP) এবং ইউরো (EUR)-এর দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম এবং বৈদেশিক লেনদেনে প্রভাব ফেলতে পারে।

বিনিময় হার বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত হওয়ায় পরিবর্তনশীল। তাই নাগরিক ও ব্যবসায়ীদের জন্য সর্বশেষ এবং সঠিক তথ্য জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে।

আজকের কয়েকটি প্রধান মুদ্রার বিনিময় হার (বাংলাদেশি টাকায়) নিম্নরূপ:

মার্কিন ডলার (USD): ১২২.২৬ টাকা

ব্রিটিশ পাউন্ড (GBP): ১৬২.২৭ টাকা

ইউরো (EUR): ১৪২.৪৫ টাকা

সৌদি রিয়াল (SAR): ৩২.৪৩ টাকা

মালয়েশিয়ান রিংগিত (MYR): ২৯.১০ টাকা

সিঙ্গাপুর ডলার (SGD): ৯৪.২০ টাকা

দুবাই দেরহাম (AED): ৩৩.১২ টাকা

কুয়েতি দিনার (KWD): ৩৯৮.৯১ টাকা

ওমানি রিয়াল (OMR): ৩১৭.৪৮ টাকা

বাহারাইন দিনার (BHD): ৩২৫.৪৭ টাকা

জাপানি ইয়েন (JPY): ০.৭৯ টাকা

দক্ষিণ কোরিয়ান ওয়ন (KRW): ০.০৮ টাকা

চাইনিজ রেন্মিন্বি (CNY): ১৭.২১ টাকা

কানাডিয়ান ডলার (CAD): ৮৭.৭১ টাকা

আস্ট্রেলিয়ান ডলার (AUD): ৮০.১৬ টাকা

মালদ্বীপিয়ান রুপি (MVR): ৭.৯৫ টাকা

ইরাকি দিনার (IQD): ০.০৯ টাকা

সাউথ আফ্রিকান রেন্ড (ZAR): ৭.১০ টাকা

তুরস্ক লিরা (TRY): ২.৮১ টাকা

ভারতীয় রুপি (INR): ১.৩৮ টাকা

ব্রুনাই ডলার (BND): ৯৪.৫৩ টাকা

কাতারি রিয়াল (QAR): ৩৩.৬১ টাকা

লিবিয়ান দিনার (LYD): ২২.৫২ টাকা

এই তথ্য দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৈদেশিক মুদ্রার দর ও বিনিময় হারের যে ওঠানামা তা বাণিজ্যিক চুক্তি, আমদানি-রপ্তানি এবং ব্যক্তিগত লেনদেনে সরাসরি প্রভাব ফেলে, তাই নিয়মিত নজরদারি এবং সর্বশেষ তথ্যের ভিত্তিতে লেনদেন করা অত্যাবশ্যক।


বাজুস জানালো নতুন দাম: আজ থেকে কার্যকর স্বর্ণের নতুন মূল্য

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ৩০ ১০:২০:১১
বাজুস জানালো নতুন দাম: আজ থেকে কার্যকর স্বর্ণের নতুন মূল্য
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) দেশের স্বর্ণ বাজারে নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে। টানা চার দফা কমানোর পর এবার ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম এক লাফে বেড়ে গেছে। নতুন মূল্যে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণ ৮,৯০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ২ লাখ ২ হাজার ৭০৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম পুনরায় দুই লাখ টাকার সীমা অতিক্রম করল।

বাজুস বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাতে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের মূল্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নতুন দাম আজ বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে।

অন্য ক্যারেটের স্বর্ণের দামও পুনর্গঠন করা হয়েছে। বাজুসের ঘোষণায় ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারিত হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫০৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬২ টাকা, আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারিত হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪৫ টাকা।

বাজুস জানিয়েছে, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে সরকার নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং বাজুসের ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে, গহনার ডিজাইন ও মান অনুযায়ী মজুরির হার কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।

রূপার দামের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। নতুন মূল্যে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ৪,২৪৬ টাকায়, ২১ ক্যারেট রুপার দাম নির্ধারিত হয়েছে ৪,০৪৭ টাকা, ১৮ ক্যারেট রুপার দাম ৩,৪৭৬ টাকা, এবং সনাতন পদ্ধতির রুপা বিক্রি হচ্ছে ২,৬০১ টাকায়।

এর আগে, দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম টানা চার দফা হ্রাস পেয়েছিল, যার ফলে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের এক ভরির দাম মোট ২৩,৫৭৩ টাকা কমানো হয়েছিল। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে বাজুস ২২ ক্যারেট স্বর্ণের এক ভরি ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮০৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল।

-রাফসান

পাঠকের মতামত:

রাজনীতি, নির্বাসন ও নৈতিকতা: শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতাকে কোথায় নিচ্ছে

রাজনীতি, নির্বাসন ও নৈতিকতা: শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতাকে কোথায় নিচ্ছে

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। নির্বাসনে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকাকে... বিস্তারিত