বিনিয়োগকারীদের নজরে বাংলাদেশের ডেনিম

অর্থ ও বাণিজ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৩ ০৯:০৯:৫২
বিনিয়োগকারীদের নজরে বাংলাদেশের ডেনিম

সত্য নিউজ: বাংলাদেশে ডেনিম শিল্প ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের পথে। বিশ্ববাজারের চাহিদা ও ক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আগ্রহ দেখাচ্ছে টেকসই উপকরণ, প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন এবং পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়ার প্রতি। এ প্রবণতার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’-তে।

সোমবার পূর্বাচলের আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় শুরু হয় দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী। টানা কয়েক দিনের তীব্র দাবদাহ শেষে ভোরের বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরে এলেও তা প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারীদের আগ্রহে কোনো ভাটা আনতে পারেনি। বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ (বিএই) ১২ বছর ধরে নিয়মিতভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে। এবারে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের ৫৮টি প্রতিষ্ঠান। আয়োজক সংস্থা জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে উভয় দেশের অন্তত ২০টি প্রতিষ্ঠান শেষ মুহূর্তে অংশ নিতে পারেনি।

প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী নারায়ণগঞ্জের আজলান ডেনিম লিমিটেড বর্তমানে মাসে ১৫ লাখ গজ ডেনিম কাপড় উৎপাদন করে। ক্রয়াদেশ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানোর কাজ শুরু করেছে। আগামী জুলাইয়ের মধ্যেই উৎপাদন বাড়িয়ে ২৫ লাখ গজে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আজলান ডেনিমের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের নির্বাহী পরিচালক সানাউল হক জানান, তারা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে ক্রেতাদের সামনে তাদের পণ্যের বৈচিত্র্য তুলে ধরছেন এবং একই সঙ্গে অন্য প্রতিযোগীদের প্রযুক্তি ও মান নিয়েও অবগত হচ্ছেন।

ডেনিম খাতে সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান আরগন ডেনিম এ প্রদর্শনীতে টেকসই উপকরণে তৈরি পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছে। তাদের মাসিক উৎপাদনক্ষমতা ২২ লাখ গজ, যার প্রতি গজের গড় মূল্য ২ ডলার ৮০ সেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক ইয়াসিন আল ফয়সাল বলেন, বর্তমানে টেকসই ডেনিমের প্রতি চাহিদা বাড়ছে এবং এর ফলে প্রতি গজে ১০–১৫ সেন্ট বেশি মূল্য পেলেও ইউরোপীয় বাজারে এর বিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে।

প্রদর্শনীতে সর্বোচ্চ ৩৬টি প্রতিষ্ঠান এসেছে চীন থেকে। তাদের মধ্যে অন্যতম ব্ল্যাক পিওনি টেক্সটাইল কোম্পানি, যাদের ঢাকায় নিজস্ব অফিস রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ব্যবস্থাপক চাও জি বলেন, বাংলাদেশে উচ্চমূল্যের ডেনিম পোশাকের চাহিদা বাড়ছে এবং এটি একটি সম্ভাবনাময় বাজার। তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি তাদের ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলছে না, কারণ তারা পণ্য রপ্তানি করে বিভিন্ন বাজারে, শুধু একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে নয়।

প্রদর্শনীতে আরও অংশ নিয়েছে আমেরিকান অ্যান্ড ইফার্ড বাংলাদেশ, আজগার্ড নাইন, বেস্ট টেক্স কেমিক্যালস, ওয়াইকেকে বাংলাদেশ, খান এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং, ব্লুসাইন টেকনোলজিস এজি, সিলিক্যান্ট, চেরি বাটন, কালার সেন্টার এসএ, ড্যানিস ও ডেনিম সলিউশনসসহ নানা প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, টেকসই পণ্যের দিকে ধাবিত হওয়া নিঃসন্দেহে ইতিবাচক প্রবণতা, তবে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে দাম নিয়ে। তিনি বলেন, ‘ক্রেতারা এখনো টেকসই পোশাকের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে চান না। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে টেকসই ফ্যাশনই ভবিষ্যৎ।’

ডেনিম এক্সপোর চিত্র বলছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প এখন কেবল সাশ্রয়ী মূল্যের সরবরাহকারী নয়, বরং টেকসই প্রযুক্তি ও মানসম্পন্ন উৎপাদনের মাধ্যমে বৈশ্বিক ডেনিম বাজারে নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যেই অগ্রসর হচ্ছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত