শিশুর অতিরিক্ত জেদ: কী করবেন?

জীবনয়াপন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১০ ০৮:১৩:২০
শিশুর অতিরিক্ত জেদ: কী করবেন?

সত্য নিউজ: শিশুদের মধ্যে জেদ একটি সাধারণ আচরণ, যা অনেক অভিভাবকই একসময় মোকাবেলা করেন। শিশুদের মধ্যে জেদ থাকা তাদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের একটি প্রাকৃতিক অংশ হতে পারে, তবে অতিরিক্ত জেদ কখনো কখনো সমস্যায় পরিণত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের প্রয়োজন, যাতে তারা শিশুর এই আচরণটি সঠিকভাবে বুঝতে পারে এবং সমাধান করতে সক্ষম হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত জেদের কারণ বিভিন্ন হতে পারে। এতে সন্তানদের আবেগ, পরিবেশগত চাপ, পারিবারিক সম্পর্ক, শৈশবের অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। শিশুর জেদ বেশিরভাগ সময় অতিরিক্ত মনোযোগের জন্য, অথবা তাদের চাহিদা পূরণ না হওয়ার কারণে হতে পারে। তাই শিশুর জেদ নিয়ন্ত্রণ করতে কিছু কার্যকর উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে।

১. শান্ত ও ধৈর্যশীল হওয়া

শিশু যখন জেদ করছে, তখন অভিভাবকদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে শান্ত ও ধৈর্যশীল থাকা। তার খারাপ আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসাবে চিৎকার বা রাগ করা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তোলে। বরং, ধীরে ধীরে এবং মৃদু স্বরে শিশুকে বোঝানো দরকার। আপনি যদি শান্ত থাকেন, তবে শিশুও ধীরে ধীরে শান্ত হবে।

২. শিশুর অনুভূতি বুঝে নেওয়া

অনেক সময় শিশুর জেদ তার অভ্যন্তরীণ অনুভূতি বা প্রয়োজনের প্রতিফলন হয়। তাকে শুনুন এবং তার অনুভূতি বুঝতে চেষ্টা করুন। এটি শিশুকে বলার সুযোগ দেয় যে তার অনুভূতিগুলি গুরুত্ব পাচ্ছে, যার ফলে সে কিছুটা শান্ত হতে পারে। এটি তার আত্মবিশ্বাস এবং আবেগিক সমর্থন তৈরি করতে সাহায্য করবে।

৩. বিকল্প প্রদান করা

শিশুরা সাধারণত তাদের চাহিদা পূর্ণ না হলে জেদ দেখায়। আপনি যদি শিশুকে বিকল্প প্রদান করেন, তাহলে সে তার আগ্রহের বিষয়টি অন্যভাবে পেতে পারে। যেমন, “তুমি যদি এই খেলনা নিতে না চাও, তবে তুমি কি অন্য খেলনাটি খেলতে চাও?” এই ধরনের বিকল্প শিশুর মনোযোগ অন্যদিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে এবং তার জেদ কমাতে পারে।

৪. নিয়ম ও সীমারেখা তৈরি করা

শিশুদের জন্য পরিষ্কার নিয়ম এবং সীমারেখা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জানানো দরকার যে কোন আচরণ গ্রহণযোগ্য এবং কোনটা নয়। যখন আপনি নিয়ম প্রয়োগ করবেন, শিশু জানবে যে কিছু বিষয় কখনোই বদলাবে না, এটি তাকে ধৈর্য ধরতে শেখাবে। এটি তার মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং সহনশীলতা তৈরি করবে।

৫. ইতিবাচক পুরস্কার দেওয়া

শিশুকে তার ভালো আচরণের জন্য পুরস্কৃত করা উচিত, যাতে সে বুঝতে পারে যে তার সঠিক আচরণ তার জন্য ইতিবাচক ফল নিয়ে আসে। এভাবে, শিশুর মধ্যে ভালো আচরণের প্রবণতা বাড়বে এবং জেদের পরিমাণ কমবে। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত পুরস্কৃত না করে, তা যেন সঠিক সময়ে এবং যথাযথভাবে করা হয়।

৬. শিশুকে সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করা

শিশুকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে অনুমতি দিন। যেমন, "তুমি কি এই রংয়ের শার্টটি পরতে চাও, না ওইটি?" এটি শিশুর আত্মবিশ্বাস এবং স্বাধীন চিন্তা শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা তাকে বর্ধিত আত্মসম্মান এবং আত্মবিশ্বাস দেবে, যা তার জেদ কমাতে সাহায্য করবে।

৭. দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খোঁজা

শিশুর অতিরিক্ত জেদের জন্য যদি দীর্ঘমেয়াদী কোনো মানসিক বা শারীরিক সমস্যা থাকে, তাহলে তার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন। অনেক সময় অতিরিক্ত চাপ, মানসিক অস্থিরতা বা পারিবারিক সমস্যা শিশুর আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

৮. অভিভাবক হিসেবে নিজেকে পর্যালোচনা করা

কখনো কখনো শিশুর জেদ প্রভাবিত হয় অভিভাবকের আচরণ থেকে। তাই নিজেকে পর্যালোচনা করা উচিত। আপনার যদি অতিরিক্ত কঠোর বা অনিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়া থাকে, তাহলে তা শিশুর মধ্যে আরও বেশি জেদের সৃষ্টি করতে পারে। তাই অভিভাবকদেরও মাঝে মাঝে নিজেদের শান্ত ও সমঝোতাপূর্ণ মনোভাব শোধরানোর চেষ্টা করা উচিত।

শিশুর অতিরিক্ত জেদ প্রাকৃতিক একটি আচরণ হতে পারে, তবে এটি অভিভাবকদের দক্ষতা এবং ধৈর্যের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। প্রতিটি শিশু আলাদা, তাই তার আচরণের প্রতি সঠিক মনোযোগ এবং যত্ন নেওয়া উচিত। শিশুর অনুভূতি ও প্রয়োজন বুঝে তার সাথে আচরণ করতে পারলে, আপনি তার জেদ কমাতে এবং সঠিকভাবে তার বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হবেন।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত