আকাশে আতঙ্ক, মাটিতে স্বস্তি: উড্ডয়নের পর চাকা খুলে পড়া বিমান যেভাবে অবতরণ করল

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৬ ১৫:৪৯:১৯
আকাশে আতঙ্ক, মাটিতে স্বস্তি: উড্ডয়নের পর চাকা খুলে পড়া বিমান যেভাবে অবতরণ করল

নিজস্ব প্রতিবেদক:কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট মাঝ আকাশে চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছিল, যখন উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই উড়োজাহাজটির পেছনের একটি চাকা খুলে নিচে পড়ে যায়। শিশুসহ ৭১ জন যাত্রী নিয়ে আকাশে থাকা বিজি-৪৩৬ ফ্লাইটটি শেষ পর্যন্ত চরম দক্ষতায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে জরুরি অবতরণ করতে সক্ষম হয়। এই ঘটনা শুধু যাত্রীদের জন্যই নয়, গোটা দেশের জন্য ছিল এক উত্তেজনাকর মুহূর্ত। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এবিএম রওশন কবীর নিশ্চিত করেছেন, বিকেল ২টা ২২ মিনিটে ড্যাশ ৮-৪০০ মডেলের উড়োজাহাজটি নিরাপদে অবতরণ করে এবং যাত্রীরা সবাই অক্ষত অবস্থায় বিমান থেকে নামেন।

বিমানটি দুপুর ১টা ২০ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই পাইলট ক্যাপ্টেন বিল্লাল ঢাকার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে (এটিসি) জরুরি বার্তা পাঠিয়ে জানান, পেছনের একটি চাকা খুলে পড়ে গেছে এবং তিনি জরুরি অবতরণ করতে চান। বার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়, রানওয়ের পাশে প্রস্তুত রাখা হয় ফায়ার সার্ভিস ও মেডিকেল টিম। এরপর অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিমানটি এক চাকা হারিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করে সফলভাবে অবতরণ করে।

বিমানে থাকা যাত্রীদের একজন জানান, “বিমান যখন নামছিল, আমরা ভয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ করে ছিলাম। কিন্তু মাটিতে নামার পর মনে হলো যেন দ্বিতীয় জীবন ফিরে পেলাম।” বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ইঞ্জিনিয়ারিং টিম এ ঘটনায় যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি কোনো রক্ষণাবেক্ষণজনিত ত্রুটি হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক চাকা হারালেও অভিজ্ঞ পাইলটের মাধ্যমে নিরাপদ অবতরণ সম্ভব, তবে তা খুবই জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ।

বাংলাদেশ বিমানের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। কখনো ধোঁয়া ওঠা, কখনো যান্ত্রিক ত্রুটি কিংবা হাইজ্যাকের চেষ্টার মতো ঘটনা পেছনের রেকর্ডে রয়েছে। এসব ঘটনা বিমান বাংলাদেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে তুলেছে। একাধিক বিশ্লেষক বলছেন, বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত না করলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ঘটনায় ভাগ্য ভালো ছিল বলেই বড় বিপর্যয় এড়ানো গেছে। তবে এটিকে শুধু সৌভাগ্য হিসেবে না দেখে এটি থেকে শিক্ষা নিয়ে অবিলম্বে তদন্ত, স্বচ্ছতা, এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় কাঠামোগত পরিবর্তন আনার আহ্বান জানান তারা। একটি রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজে চাকা খুলে পড়ে যাওয়ার ঘটনা কোনোভাবেই হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন বিমানের পাইলট ও নিয়ন্ত্রণকক্ষের সক্ষমতার প্রমাণ মিলেছে, তেমনি রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা আরও একবার স্পষ্ট হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীদের শনাক্ত ও ভবিষ্যতের জন্য কার্যকর সুপারিশ বাস্তবায়ন করলেই কেবলমাত্র যাত্রীদের আস্থা ফিরে আসবে। অন্যথায়, আকাশে প্রতিটি যাত্রাই হয়ে উঠবে এক একটি অনিশ্চয়তার গল্প।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত