গুলশান কেলেঙ্কারিতে ছাত্রনেতা গ্রেপ্তার আরও ১

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০১ ১৩:১০:৩৮
গুলশান কেলেঙ্কারিতে ছাত্রনেতা গ্রেপ্তার আরও ১
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশানে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মি আহমেদের বাসা থেকে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি ও ১০ লাখ টাকা আদায়ের ঘটনায় আবারও নতুন মোড় নিয়েছে তদন্ত। সর্বশেষ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে গ্রেপ্তার করেছে। শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত জানে আলম অপু দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে এবং মামলার প্রেক্ষিতে অধিকতর তদন্ত চলছে।

এর আগে ২৬ জুলাই গুলশান থানা পুলিশ একই মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা সবাই সরাসরি ছাত্রনেতা হিসেবে সক্রিয় এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত। গ্রেপ্তাররা হলেন— ইব্রাহীম হোসেন মুন্না, মো. সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, মো. আমিনুল ইসলাম ও আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ। এদের মধ্যে মুন্না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক, সিয়াম ও সাদাব একই কমিটির সদস্য এবং রিয়াদ সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ জুলাই সকালে তারা গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে শাম্মি আহমেদের বাসায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে গিয়ে এক কোটি টাকা দাবি করেন। তারা হুমকি দেন, টাকা না দিলে সাবেক এমপিকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে আন্দোলনের নামে সামাজিকভাবে অপদস্থ করা হবে, এমনকি পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হবে বলে ভয় দেখান। প্রথম দফায় তারা ১০ লাখ টাকা আদায় করেন এবং কিছুদিন পর দ্বিতীয় দফা চাঁদা তুলতে গেলে পুলিশ তাদের আটক করে।

চাঁদা আদায়ের সেই সময়কার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে স্পষ্ট দেখা যায়, দুজন যুবক গেস্ট রুমে বসে টাকার বান্ডিল গ্রহণ করছেন। গুলশান থানার এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, ভিডিওটি শাম্মি আহমেদের বাসায় ধারণ করা হয়েছে।

এই ঘটনার পর থেকে রাজনৈতিক ও শিক্ষার্থী সংগঠনের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি চালানোর অভিযোগে নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়েছে তথাকথিত ‘বৈষম্যবিরোধী’ সংগঠনগুলো।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, এ চক্রটি কেবল শাম্মি আহমেদের ক্ষেত্রেই নয়, বিভিন্ন ব্যবসায়ী, সাবেক জনপ্রতিনিধি ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের কাছ থেকেও একই কায়দায় চাঁদা দাবি করত। সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করে জনমনে ভয় ও সামাজিক লজ্জার আশঙ্কা সৃষ্টি করে চাঁদা আদায়ের কৌশলই ছিল তাদের মূল পদ্ধতি।

এখন পর্যন্ত এই মামলায় ৬ জন গ্রেপ্তার হলেও তদন্তকারীরা বলছেন, এটি একটি বৃহৎ চক্রের অংশ এবং আরও অনেকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তদন্ত শেষে পুরো চক্রকে আইনের আওতায় আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে ডিবি। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত সামাজিক বা রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দাবি আরও জোরালোভাবে সামনে এসেছে।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ