যে কারণে হাসিনার কন্যা পুতুলকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠালো WHO

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১২ ০৯:১০:৩৯
যে কারণে হাসিনার কন্যা পুতুলকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠালো WHO

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। ১১ জুলাই, শুক্রবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। WHO-এর মহাপরিচালক ডা. টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস এক অভ্যন্তরীণ ইমেইলে সংস্থার স্টাফদের বিষয়টি অবহিত করেন। পুতুলের অনুপস্থিতিতে আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক ডা. ক্যাথরিনা বোহমি, যিনি ১৫ জুলাই নয়াদিল্লিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সায়মা ওয়াজেদ WHO-র আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে শুরু থেকেই তার নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। অভিযোগ রয়েছে, তার মা শেখ হাসিনা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তাকে এ গুরুত্বপূর্ণ পদে বসান। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এবং স্বাস্থ্যনীতি-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থাগুলো এ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। হেলথ পলিসি ওয়াচসহ একাধিক আন্তর্জাতিক মিডিয়া জানায়, তার নিয়োগ ছিল অস্বচ্ছ এবং প্রভাবিত।

চলতি বছরের শুরুতেই সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরপর গত চার মাসে তার বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার সময় তিনি নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) সম্মানসূচক পদে থাকার মিথ্যা দাবি করেছেন। দুদকের আরও অভিযোগ, তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রভাব কাজে লাগিয়ে তার ব্যক্তি মালিকানাধীন সংস্থা ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’-এর নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন, যা প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার।

এই অভিযোগ ও মামলার কারণে তার কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ে। WHO এর নীতিগত দায়বদ্ধতা ও প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রক্ষায় তাকে ছুটিতে পাঠানো হয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য মহলে এই সিদ্ধান্তকে স্বাস্থ্য প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও নৈতিকতা রক্ষায় একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে এটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য বড় ধরনের ইমেজ সংকট তৈরি করতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

এই ঘটনা WHO-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতৃত্বে রাজনৈতিক প্রভাব, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার গুরুত্ব নতুন করে সামনে এনেছে। এখন দেখার বিষয়, সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে চলমান মামলা ও তদন্ত কী পরিণতি নেয় এবং তিনি ভবিষ্যতে আবারও আন্তর্জাতিক প্রশাসনিক অঙ্গনে ফিরে আসতে পারবেন কি না।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ