ওয়াশিংটন বৈঠকে কী অর্জন করতে পারলো বাংলাদেশ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১১ ০৯:৫৩:৫৮
ওয়াশিংটন বৈঠকে কী অর্জন করতে পারলো বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে চলমান তিন দিনব্যাপী দ্বিতীয় দফার শুল্ক-বাণিজ্য আলোচনা বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে দ্বিতীয় দিনের বৈঠকের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়। আলোচনা শুরু হয় স্থানীয় সময় সকাল ১১টায়, যেখানে উভয় দেশের শীর্ষ বাণিজ্য কর্মকর্তারা অংশ নেন। আলোচনায় উঠে আসে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীনে নিযুক্ত বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। তিনি ওয়াশিংটনে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি (USTR) জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে মতবিনিময় করেন। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি, জ্বালানি, কপিরাইট, এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থার সিনিয়র কর্মকর্তারা অংশ নেন, যা বৈঠকটিকে আরও বহুমাত্রিক করে তোলে।

ঢাকা থেকে এই উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি ও টেলিযোগাযোগবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এছাড়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও বৈঠকে অংশ নেন। এতে প্রতীয়মান হয়, বাংলাদেশ সরকার আলোচনাকে কেবল বাণিজ্যিক নয়, বরং কৌশলগত ও প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্ব দিচ্ছে।

বৈঠকে উভয় পক্ষই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। আলোচনায় যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়, তার মধ্যে ছিল কৃষিপণ্যের বাজার প্রবেশাধিকার, পণ্য রফতানিতে শুল্ক কাঠামো সহজীকরণ, জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, বৌদ্ধিক সম্পত্তি সুরক্ষা এবং কপিরাইট আইন বাস্তবায়ন, ডিজিটাল ব্যবসা ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের সুযোগ ইত্যাদি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্যপণ্য, ওষুধ এবং আইটি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আলোচনা ভবিষ্যতে একটি কাঠামোবদ্ধ বাণিজ্য চুক্তির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী ও বহুমাত্রিক করে তুলবে। যুক্তরাষ্ট্র চায় দক্ষিণ এশিয়ায় একটি স্থিতিশীল ও উদার বাণিজ্যিক অংশীদার, যেখানে বাংলাদেশ তাদের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অবস্থানের জন্য বিশেষভাবে বিবেচিত। অন্যদিকে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে বড় বিনিয়োগের উৎস এবং রফতানি বাজার হিসেবে দেখতে চায়।

এই আলোচনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের বিষয়টি উল্লেখযোগ্যভাবে উপস্থাপন করেছে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসার ও গ্রিন টেকনোলজিতে সহযোগিতার আশাবাদও প্রকাশ করেছে।

এদিকে, আলোচনার পরবর্তী ধাপ হিসেবে শুক্রবার (১১ জুলাই) বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় আবারও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে দুই পক্ষ আরও কিছু অমীমাংসিত ইস্যুতে সমঝোতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখবে।

এই আলোচনাকে ঘিরে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ে ইতিবাচক মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়ানো শুধু রপ্তানি প্রবৃদ্ধির জন্য নয়, বরং দেশের সামগ্রিক কৌশলগত অবস্থান ও বৈদেশিক নীতি বিস্তারের ক্ষেত্রেও তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

বিশ্বের বাণিজ্য কাঠামো যখন বৈশ্বিক অস্থিরতা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রযুক্তিগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তির সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারিত্ব গড়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে পারে। এই আলোচনাই ভবিষ্যতের কৌশলগত সহযোগিতার এক নতুন অধ্যায় সূচনার দ্বার উন্মুক্ত করছে।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ