শাহজালালে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং: প্রযুক্তির ভবিষ্যত

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১১ ১৯:৫৩:৪৬
শাহজালালে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং: প্রযুক্তির ভবিষ্যত

সত্য নিউজ: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের প্রতি আগ্রহ একসময় ছিল মাত্র কিছু শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত আগ্রহের বিষয়। তবে, আজ এই আগ্রহের মধ্যে বিকাশিত হয়েছে একটি শক্তিশালী গবেষণা ক্লাব, যার নাম “কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সাস্ট।” ক্লাবটির সদস্যরা শুধু দেশের বিভিন্ন কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন না, বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের বিষয়ে আগ্রহ ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একযোগভাবে কাজ করছেন।

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং কি?

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এমন একটি প্রযুক্তি যা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়ম অনুসারে কম্পিউটেশন সম্পন্ন করে। যেখানে প্রচলিত কম্পিউটার ০ এবং ১—এর মাধ্যমে তথ্য ধারণ করে, সেখানে কোয়ান্টাম কম্পিউটারে কিউবিট ব্যবহার করা হয়, যা একই সময়ে ০ এবং ১—উভয় অবস্থাতেই থাকতে পারে (সুপারপজিশন)। এই কারণে কোয়ান্টাম কম্পিউটার একসঙ্গে বহু সম্ভাব্য সমাধান পরীক্ষা করতে সক্ষম, যা ক্ল্যাসিক্যাল কম্পিউটারগুলো একে একে করতে পারে। এর সঙ্গে রয়েছে এনট্যাঙ্গলমেন্ট (যেখানে একাধিক কিউবিট একে অপরের সঙ্গে এমনভাবে সম্পর্কিত থাকে যে একটির অবস্থা জানলেই অন্যটির অবস্থাও জানা যায়)।

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সাস্টের উত্থান

২০২১ সালে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিবুল ইসলাম, ইসতিয়াক রহমান, মুবাসসিরা তাসনিম, রাহুল দেব শর্মা, এবং এম এইচ তানভীর—এঁরা মিলিত হয়ে "কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সাস্ট" ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন। তারা উদ্দেশ্য করে এই ক্লাবের মাধ্যমে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের বিষয়ে পাঠদান, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে।

শাকিবুল ইসলামের যাত্রা

ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা শাকিবুল ইসলাম কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন ২০২১ সালের দিকে, যখন তিনি তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের সিনিয়রদের একটি পোস্টে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের বিষয়ে গভীরভাবে শিখতে এক বছর পড়াশোনায় বিরতি নেন এবং আন্তর্জাতিক অধ্যাপকদের সঙ্গে গবেষণায় যুক্ত হন। সেই সময়ে তিনি কোয়ান্টাম এরর কারেকশন, কোয়ান্টাম ডট, এবং সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস ডিজাইন বিষয়ে কাজ করেছেন।

ক্লাবের সাফল্য ও ভবিষ্যৎ

ক্লাবটি প্রতিষ্ঠার পর দ্রুতই সাফল্য অর্জন করেছে। ২০২২ সালে, ভারতের একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রতিযোগিতায় তারা দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। একই বছরে, কিউব্রেইড আই ও এমআইটি আইকিউহ্যাক-এ তারা যথাক্রমে ১৩তম ও ১৭তম স্থান লাভ করে। এছাড়াও, ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা শাকিবুল ইসলাম ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি আবুধাবি আয়োজিত ১৩তম আন্তর্জাতিক হ্যাকাথনে অংশগ্রহণ করেন এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।

ক্লাবের অন্য সদস্যরা কোয়ান্টাম এরর কারেকশন, মেজারমেন্ট–বেজড কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, এবং কোয়ান্টাম ডটের মতো গবেষণায় সক্রিয় রয়েছেন। ইসতিয়াক রহমান ফিনল্যান্ডে কোয়ান্টাম টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনার জন্য বৃত্তি পেয়েছেন, যা তার জন্য একটি বড় অর্জন।

সহায়তা ও চ্যালেঞ্জ

যদিও শিক্ষকেরা ক্লাবের সদস্যদের সহায়তা করছেন, তবুও ক্লাবটি সীমিত অবকাঠামো এবং সম্পদ নিয়ে কাজ করছে। শাকিবুল ইসলাম বলেন, "আমার সব গবেষণা প্রকল্পই নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হয়," যা তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, ক্লাবের সদস্যরা তাদের উদ্যমের মাধ্যমে গবেষণা চালিয়ে যেতে এবং দেশের কোয়ান্টাম কম্পিউটিং খাতে নতুন মাত্রা যোগ করতে আশাবাদী।

সারা দেশে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের প্রসার

ক্লাবের সদস্যরা আশা করছেন, তারা কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের সম্ভাবনা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবেন এবং একদিন বাংলাদেশের গবেষণা এবং প্রযুক্তি খাতে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের বিষয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পারবেন।

এভাবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যম ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ভবিষ্যতের প্রতি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করেছেন এবং প্রযুক্তির দুনিয়ায় বাংলাদেশের স্থান আরও শক্তিশালী করতে তাদের পথচলা অব্যাহত থাকবে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত