রয়টার্সের প্রতিবেদন
রয়টার্সের প্রতিবেদনঃ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ঘিরে বিক্ষোভ

গতকাল ২৬ মে, লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্স "নোবেল বিজয়ী ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ঘিরে বাংলাদেশজুড়ে বিক্ষোভ" শিরোনামে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি পাঠকের সুবিধার্থে বাংলায় ভাষান্তর করে উপস্থাপন করা হলোঃ
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে সোমবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে একযোগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে যোগ দেন।
গত আগস্টে প্রাণঘাতী ছাত্র আন্দোলনের ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ৮৪ বছর বয়সী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস ১৭ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার এই দেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন।
তবে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইউনুস নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে চাপের মুখে পড়তে হয়েছে — সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, রাজনৈতিক দল এমনকি সেনাবাহিনীর তরফ থেকেও। আগামী সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের উদ্দেশ্যে জাতিকে একটি ভঙ্গুর রাজনৈতিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে পরিচালনা করার চেষ্টায় সরকার একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।
রবিবার সরকার একটি অধ্যাদেশ জারি করে, যাতে সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে দীর্ঘ প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ছাড়াই বরখাস্তের সুযোগ রাখে। এ সিদ্ধান্ত আমলাতন্ত্রের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়।
এই অধ্যাদেশকে "দমনমূলক" আখ্যা দিয়ে সোমবার টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ চালিয়ে যান সরকারি কর্মচারীরা। একইসাথে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষক সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেন, তাঁদের প্রধান দাবি—বেতন বৃদ্ধির।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে সরকার রবিবার এনবিআর বিলুপ্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের নির্দেশনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। ফলে ঐ ধর্মঘট স্থগিত করা হয়।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হয়েছে যখন একজন শীর্ষ ছাত্রনেতা দাবি করেন, ইউনুস বলেছেন—যদি রাজনৈতিক দলসমূহ সংস্কার ও নির্বাচনী সময়সূচি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন।
তবে ইউনুসের মন্ত্রিসভার পরিকল্পনা উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ইউনুস পদত্যাগ করছেন না। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোথাও যাচ্ছি না। ইউনুস স্যার সব প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে সচেতন, তবে তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
সরকার একটি দ্বিধান্বিত অবস্থানে আছে—একদিকে দ্রুত নির্বাচন, অন্যদিকে কাঠামোগত সংস্কারের দাবি। ইউনুস বলেছেন, নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে হতে পারে, অন্যদিকে বিএনপি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, এই বছরের ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়।
গত সপ্তাহে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক বক্তৃতায় চলতি বছরের ডিসেম্বরেই নির্বাচন চেয়ে সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি করেন এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
এই পরিস্থিতিতে ইউনুস শনিবার জরুরি ভিত্তিতে তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক ডাকেন এবং সপ্তাহান্তে প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেন, যার মধ্যে রয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি এবং ছাত্র নেতৃত্বাধীন 'ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি'। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম রোববার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এখন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মধ্যে আছি। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর আমাদের অস্থিতিশীল করার নানা চেষ্টা চলছে। এ পরিস্থিতি থেকে অবশ্যই আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।”
এই মাসেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে, ফলে দলটি কার্যত আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ হারিয়েছে।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেয়ারবাজারে গেম্বলারদের দৌরাত্ম্য: আস্থা ফেরাতে চাই কঠোর শাস্তি ও কাঠামোগত সংস্কার
- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের দীর্ঘ ছুটি, চালু থাকবে জরুরি সেবা
- বাংলাদেশে সেনা-সরকার উত্তেজনা ও ‘কু’ এর গুঞ্জন: নেপথ্যে কি?
- নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে কারা টিকে থাকবে, কারা হারিয়ে যাবে?
- সেনাপ্রধানের বক্তব্য, জুলকারনাইন তাতে যা বললেন!
- নাহিদের স্পষ্ট বার্তা: এনসিপিতে নেই দুই উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ
- তারকা পরিচিতি: রক্ষাকবচ না কি সমাজবিমুখ অব্যাহতি?
- বিএনপির সালাউদ্দিনকে নিয়ে কি লিখলেন প্রেস সচিব শফিকুল?
- সড়ক দুর্ঘটনায় সেনা কর্মকর্তা নিহত
- বাংলাদেশে আন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে মৌলিক অধিকার হুমকিতে
- মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কেন অনিশ্চিত
- ডিসেম্বরে নির্বাচন চান সেনাপ্রধান
- "ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সব রাজনৈতিক দল অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে"
- তিন মাসে ১.১৮ লাখ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি, দেউলিয়াত্বের পথে ২০ ব্যাংক
- স্টারলিংক চালু, সরকারের দ্রুত সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কি?