ইসলাম ও বিজ্ঞান

কেন অজু করা উচিত: ইসলাম ও বিজ্ঞান কি বলে? 

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৭ ২১:৪৫:০২
কেন অজু করা উচিত: ইসলাম ও বিজ্ঞান কি বলে? 

✍️ বিশেষ প্রতিবেদনঃইসলামে নামাজ আদায়ের পূর্বশর্ত হিসেবে অজু অপরিহার্য। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্য দিনে কমপক্ষে পাঁচবার মুসলমানদের অজু করতে হয়। এই অনুশীলনটি কেবল ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নয়, বরং এর গভীরে রয়েছে একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থার প্রতিফলন, যেখানে শরীর, মন ও আত্মা—এই তিনের সুষম পরিচর্যার ব্যবস্থা রয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিদ্যার আলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অজু শুধুমাত্র একধরনের শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নয়, বরং এটি একটি পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি এবং মানসিক প্রশান্তি অর্জনের এক স্বীকৃত উপায়ও বটে।

ইসলাম বলছে, পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক। রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে বলেছেন, “যে ব্যক্তি অজু করে এবং তা সঠিকভাবে সম্পন্ন করে, তার গুনাহসমূহ তার দেহ থেকে ঝরে পড়ে, এমনকি নখের নিচ থেকেও।” (সহিহ মুসলিম)। এই বক্তব্য কেবল আধ্যাত্মিক নয়; বরং আত্মশুদ্ধি ও আচরণগত শৃঙ্খলার দিক থেকেও তা গুরুত্বপূর্ণ। অজু মানুষকে নামাজের পূর্বে একটি প্রস্তুতির মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এর ফলে ব্যক্তির মধ্যে মনোসংযোগ, স্বচ্ছতা এবং আধ্যাত্মিক শ্রদ্ধাবোধ বৃদ্ধি পায়।

বিজ্ঞানের আলোকে যদি আমরা অজুকে দেখি, তবে একে শুধু ধর্মীয় রিচুয়াল নয়, বরং একধরনের কার্যকর স্বাস্থ্য অনুশীলন হিসেবেও বিবেচনা করা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রায় ৮০ শতাংশ সংক্রামক রোগ মানুষের হাতের মাধ্যমে ছড়ায়। দিনে পাঁচবার হাত ধোয়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য রোগজীবাণু দূর হয়, তেমনি নিয়মিতভাবে মুখ, নাক ও কানের মতো সংবেদনশীল অঙ্গগুলোর পরিচর্যা নিশ্চিত হয়, যা শ্বাসতন্ত্রের রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

শুধু শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নয়, অজুর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুবৈজ্ঞানিক (neuroscientific) প্রভাবও। গবেষণায় দেখা গেছে, যখন মানুষ ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ, হাত, মাথা ও পা ধোয়, তখন শরীরে একটি স্নায়ু প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, যা স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রকে (autonomic nervous system) উদ্দীপিত করে। এর ফলে স্ট্রেস হরমোন ‘কর্টিসল’-এর মাত্রা হ্রাস পায় এবং ‘সেরোটোনিন’ ও ‘ডোপামিন’-এর মতো প্রশান্তিদায়ক হরমোন নিঃসরণ ঘটে। ফলে অজু মানুষকে মানসিকভাবে শিথিল করে, উদ্বেগ কমায় এবং মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

এর পাশাপাশি অজুর নিয়মিত অনুশীলন শরীরের জীববৃত্তীয় ঘড়ির (biological clock) সঙ্গেও সামঞ্জস্য রক্ষা করে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের অজু শরীরকে চাঙা করে তোলে; দুপুরে যোহরের অজু দিনের ক্লান্তি দূর করে; বিকেলে ও সন্ধ্যায় অজু মনকে সতেজ করে এবং রাতে এশার অজু ঘুমের প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে। এই সময়ভিত্তিক অজু জীববৃত্তীয় রুটিনকে সুনিয়ন্ত্রিত রাখে, যা মানুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্যরক্ষায় সহায়ক।

অজু একধরনের রিচুয়ালাইজড আচরণ, যা আধুনিক মনোবিজ্ঞানের ভাষায় “self-regulation technique” হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। মানুষের মানসিক ও আচরণগত শৃঙ্খলা রক্ষায় এমন নিয়মিত আচরণ অত্যন্ত কার্যকর। অজু করার সময় ব্যক্তি নিজের দেহ ও মনকে সচেতনভাবে পরিচালিত করে; প্রতিবার একটি অভিন্ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার ফলে তৈরি হয় ‘মাইন্ডফুলনেস’, যার মাধ্যমে ব্যক্তি তার চারপাশ ও নিজের আচরণের প্রতি সজাগ হয়। এমন সচেতনতা আত্মনিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য ও অন্তর্জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়ক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব অনুশীলন মানুষের মধ্যে রিচুয়াল এবং উদ্দেশ্যবোধ একত্রে তৈরি করে, তা মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। ইসলামের অজু প্রথা সেই ধারায় একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এখানে ধর্মীয় পবিত্রতার পাশাপাশি রয়েছে প্রমাণভিত্তিক শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা। এমনকি অজু মানুষের আত্মবিশ্বাস ও স্বস্তি তৈরিতে ভূমিকা রাখে, যা একজন ব্যক্তিকে দৈনন্দিন জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানসিকভাবে প্রস্তুত করে।

তথ্য ও গবেষণার আলোকে বলা যায়, ইসলামের নির্দেশিত অজু কেবল একটি ধর্মীয় রিচুয়াল নয়—এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার প্রতিফলন, যেখানে স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা, মানসিক প্রশান্তি ও আত্মিক উন্নয়নকে একত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সময়ের ব্যস্ততা, মানসিক চাপ এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যেও অজু হতে পারে সচেতনতার এক চর্চিত পথ। ইসলাম এখানে শুধু বিশ্বাস নয়, বরং প্রাত্যহিক জীবনযাপনের জন্যও একটি কার্যকর জীবনধারা উপহার দিয়েছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত