গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি চান? বদলে ফেলুন খাবার আর অভ্যাস!

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২২ ১৩:১০:৫৫
গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি চান? বদলে ফেলুন খাবার আর অভ্যাস!

গ্যাস্ট্রিক- এমন একটি স্বাস্থ্যসমস্যা যা প্রায় প্রতিটি পরিবারে দেখা যায়। এটি কখনো কখনো অস্বস্তিকর ব্যথা, বুক জ্বালাপোড়া কিংবা পেট ফাঁপার মতো উপসর্গ তৈরি করে, যা দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত করে। তবে কিছু কার্যকর খাবার এবং অভ্যাস অনুসরণ করলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলে মত দিয়েছেন পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকেরা।

গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে সহায়ক খাবারসমূহ

১. শাকসবজি:

পালং শাক, বাঁধাকপি, গাজর, কুমড়া ইত্যাদি আঁশযুক্ত সবজি পাকস্থলির এসিড নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এসব সবজি হজমপ্রক্রিয়া সহজ করে এবং পেটের ভেতর অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি হওয়া থেকে রক্ষা করে।

২. উপকারী ফলমূল:

কলা, আপেল, পেঁপে ও অ্যাভোকাডো এই ফলগুলোতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅ্যাসিড উপাদান। বিশেষ করে পেঁপেতে থাকা এনজাইম প্যাপেইন হজমে সহায়তা করে এবং পেটের অস্বস্তি কমায়।

৩. আস্ত শস্যদানা:

ভুট্টা, ওটস, বার্লি এবং ব্রাউন রাইসের মতো ফাইবারসমৃদ্ধ শস্য হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। এগুলো পাকস্থলিতে এসিডের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং অতিরিক্ত গ্যাস জমতে দেয় না।

৪. কম ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত দ্রব্য:

দুধ, দই, পনির তবে অবশ্যই কম ফ্যাটযুক্ত এসব খাবার গ্যাস্ট্রিকের উপসর্গ লাঘব করে। দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া হজমতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে।

৫. আদা ও জিরা:

আদা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে জিরা হজমে সহায়তা করে এবং গ্যাস কমায়। প্রতিদিনের রান্নায় এই উপাদান দুটি ব্যবহার করলে গ্যাস্ট্রিকের ঝুঁকি কমে।

৬. পুদিনা পাতা ও ডাবের পানি:

পুদিনার ঠান্ডা প্রভাব পাকস্থলির জ্বালাপোড়া কমায় এবং ডাবের পানি শরীরকে হাইড্রেট ও ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে, যা অ্যাসিডিটির প্রতিরোধে কার্যকর।

গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে জীবনযাপনে যে পরিবর্তন জরুরি

১. ধীরে খাওয়া ও ভালোভাবে চিবানো:

তাড়াহুড়ো করে খাবার খেলে তা পেটে সঠিকভাবে হজম হয় না, ফলে গ্যাস ও এসিড তৈরি হয়। ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি দিতে পারে।

২. ছোট পরিমাণে বারবার খাওয়া:

অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার একবারে খাওয়া না করে, দিনে ৫-৬ বার অল্প অল্প করে খাওয়ার অভ্যাস হজমের জন্য উপকারী।

৩. পর্যাপ্ত পানি পান:

শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে ও হজমের গতি বজায় রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করা জরুরি।

৪. হালকা ব্যায়াম:

প্রতিদিন নিয়মিত হালকা হাঁটা বা ব্যায়াম গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি হজম শক্তি বাড়ায় এবং পাকস্থলিতে গ্যাস জমতে দেয় না।

৫. মানসিক চাপ কমানো:

দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস পাকস্থলিতে অতিরিক্ত অ্যাসিড নিঃসরণ ঘটায়। নিয়মিত মেডিটেশন বা মনোযোগ চর্চা মানসিক শান্তি আনে, যা হজমতন্ত্রের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৬. পর্যাপ্ত ঘুম:

প্রতিদিন রাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা বিশ্রাম হজমক্ষমতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৭. ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ:

এ দুটি অভ্যাস পাকস্থলির এসিডিক পরিবেশকে বাড়িয়ে তোলে, যা গ্যাস্ট্রিক বাড়ায়। ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করলে অনেকাংশেই সমস্যাটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

৮. খাওয়ার পরপরই শোয়া নয়:

খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি বা বসে থাকার অভ্যাস গ্যাস্ট্রিক কমাতে সহায়ক। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়লে পাকস্থলির এসিড খাদ্যনালীতে চলে যেতে পারে।

৯. অতিরিক্ত তেল-মসলা এড়ানো ও ক্যাফিন নিয়ন্ত্রণ:

ঝাল ও অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার গ্যাস্ট্রিক বাড়ায়। একইভাবে অতিরিক্ত চা, কফি বা ক্যাফিনসমৃদ্ধ পানীয় এসিডের মাত্রা বাড়ায়, যা হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে।

গ্যাস্ট্রিক একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হলেও সঠিক খাদ্য নির্বাচন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার মাধ্যমে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। একদিকে যেমন খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ফলমূল, প্রাকৃতিক উপাদান ও ফাইবারসমৃদ্ধ শস্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, তেমনি অভ্যাসগত পরিবর্তন যেমন ধীরে খাওয়া, স্ট্রেস কমানো ও পর্যাপ্ত ঘুম সমান গুরুত্বপূর্ণ।

তবে গ্যাস্ট্রিক যদি নিয়মিত অসহনীয় ব্যথা, পেটে ফাঁপা বা বমিভাব সৃষ্টি করে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম। নিজ দায়িত্বে ওষুধ গ্রহণের পরিবর্তে প্রতিদিনকার অভ্যাস ও খাদ্যে সচেতনতা গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধের সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর উপায়।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

লেনদেনের শীর্ষ দশে যেসব শেয়ার

লেনদেনের শীর্ষ দশে যেসব শেয়ার

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (২১ জুলাই) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ছিল কিছুটা চাঙা। এই দিনে লেনদেনের... বিস্তারিত