তালেবান সরকারের সঙ্গে ভারতের ফোনালাপ! কিসের ইঙ্গিত?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৭ ১০:৪৫:১৩
তালেবান সরকারের সঙ্গে ভারতের ফোনালাপ! কিসের ইঙ্গিত?

দীর্ঘ বিরতির পর আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গে ভারতের প্রথম উচ্চপর্যায়ের সংলাপ দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন কূটনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে ফোনালাপে অংশ নেন। ভারতের প্রধানধারার সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, এটি তালেবান সরকারের সঙ্গে নয়াদিল্লির প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক আলোচনা।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সংলাপ নিছক সৌজন্য নয় বরং দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং পাকিস্তানকে কৌশলগতভাবে চাপে রাখার একটি সচেতন উদ্যোগ। এমন সময়ে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হলো, যখন তালেবান সরকার কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে যা অনেকের চোখে পাকিস্তানের প্রতি একপ্রকার কূটনৈতিক বার্তা।

ফোনালাপের পর এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে জয়শঙ্কর লিখেছেন, “আজ আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকির সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। পেহেলগাম হামলার নিন্দার জন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই।” তিনি আরও বলেন, “সম্প্রতি কিছু ভিত্তিহীন সংবাদ ভারত-আফগান সম্পর্ক নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে, যেগুলো আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।”

তালেবানের যোগাযোগবিষয়ক পরিচালক হাফিজ জিয়া আহমেদ জানান, আলোচনায় চিকিৎসা ভিসা সহজীকরণ, আফগান বন্দিদের মুক্তি, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং চাবাহার বন্দর উন্নয়নসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে।

কৌশলগত মাত্রা ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা

ভারতের এই কূটনৈতিক পদক্ষেপ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত ২৭ এপ্রিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আনন্দ প্রকাশ তালেবান সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কাবুলে বৈঠক করেন। এটি ভারতের ধারাবাহিকভাবে আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের প্রক্রিয়ার অংশ। যদিও ভারত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি, তবুও ধারাবাহিক কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা ভবিষ্যতের কৌশলগত পরিকল্পনারই প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পাকিস্তানের জন্য চাপের বার্তা?

বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা বাড়লে তা সরাসরি পাকিস্তানের কৌশলগত অবস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে। ভারতের এই কূটনৈতিক উত্তরণ শুধু আফগানিস্তান বা চাবাহার বন্দরের প্রেক্ষাপটে নয় বরং এটি একটি বৃহত্তর কৌশল, যেখানে পাকিস্তানের চারপাশে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীদের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক গড়ে তোলা একটি প্রধান অঙ্গ।

দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক মানচিত্রে এই পরিবর্তন ভারতকে যেমন একটি সক্রিয় ও প্রতিক্রিয়াশীল পরাশক্তি হিসেবে তুলে ধরছে, তেমনি পাকিস্তানের কৌশলগত গতিপথকে সীমিত করে দিচ্ছে।

বিশ্লেষণ ও মতামত:

এটি শুধু ভারত-আফগান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতি নয় এটি বৃহৎ পরিসরে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে ভারতের সক্রিয় ও সমন্বিত পুনঃপ্রবেশের প্রতিফলন। একদিকে তালেবানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কোন্নয়ন, অন্যদিকে চীন-পাকিস্তান করিডরের বাস্তবতায় ভারত তার কৌশলগত বিকল্পগুলো উন্মোচন করছে। এতে দক্ষিণ এশিয়ার ভারসাম্য নতুন করে বিন্যাসিত হতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ