‘জুলাই সনদ ছাড়া নির্বাচন নয়’: মাগুরায় নাহিদ ইসলামের হুঁশিয়ারি

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১০ ১৬:৪১:৩৩
‘জুলাই সনদ ছাড়া নির্বাচন নয়’: মাগুরায় নাহিদ ইসলামের হুঁশিয়ারি

বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দেশজুড়ে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করেছে। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) মাগুরা শহরে এক বিশাল পদযাত্রা ও পথসভা আয়োজন করে দলটি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনকে বেগবান করার পাশাপাশি আগাম নির্বাচনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

দুপুর আড়াইটার দিকে মাগুরার ভায়না মোড়ে পথসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, “সংস্কার ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না।” তিনি উল্লেখ করেন, এক বছর আগে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান ঘটেছে। “ছাত্ররা রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনের পতনের জন্য। এই দেশে আর কোনো দখলদার, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ কিংবা বিদেশি প্রভুদের দোসরদের শাসন করার সুযোগ দেওয়া হবে না,” বলেন তিনি। তার মতে, দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য এখনই প্রয়োজন একটি নৈতিক, জনভিত্তিক এবং সংস্কারমুখী রাজনৈতিক রূপান্তর।

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, জুলাই সনদ ঘোষণার আগে যেকোনো ধরনের জাতীয় নির্বাচন জনগণ এবং ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না। “যদি কেউ আগে নির্বাচন দেওয়ার পাঁয়তারা করে, তাহলে আবারও আমরা বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তুলবো। আগে বিচার হবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার, বিচার হবে খুনিদের, এরপর হবে কাঠামোগত সংস্কার, আর তারপরই নির্বাচন,” এই ভাষ্য ছিল তার বক্তব্যের অন্যতম জোরালো অংশ।

এই কর্মসূচি শুরু হয় দুপুর দেড়টার দিকে মাগুরা শহরের উপজেলা চত্বর থেকে। পদযাত্রাটি শহরের চৌরঙ্গী মোড় ও ঢাকা রোড অতিক্রম করে ভায়না মোড়ে এসে পথসভায় মিলিত হয়। পথে পথে সাধারণ মানুষের বিপুল উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মিছিলটিতে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের হাতে দেখা যায় নানা স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার যার মধ্যে অন্যতম ছিল: “জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করো”, “দখলদার শাসনের অবসান চাই”, “ফ্যাসিবাদের বিচার চাই” ইত্যাদি। এ সময় শহরের বিভিন্ন জায়গায় জনসাধারণ মিছিলের প্রতি উৎসাহ ও সংহতি প্রকাশ করে।

পথসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা, যারা বক্তব্যে বলেন, জুলাই সনদ কেবল একটি রাজনৈতিক দলীয় প্রস্তাব নয়; এটি একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপুনর্গঠনের রূপরেখা, যেখানে বিচারহীনতা, বৈষম্য, রাজনৈতিক দখলদারিত্ব এবং প্রশাসনিক দুর্নীতির অবসান ঘটিয়ে একটি ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার রয়েছে।

এদিন সকালে ঝিনাইদহ সফর শেষ করে দুপুর ১২টার দিকে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বহর মাগুরায় পৌঁছে। সেখান থেকে পদযাত্রা ও পথসভা শেষে তারা নড়াইলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। পুরো সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকী উপলক্ষে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন এবং এনসিপির ঘোষিত সংস্কার রূপরেখা তুলে ধরা।

এনসিপি নেতাদের মতে, দেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণে প্রয়োজন একটি আদর্শিক এবং অংশগ্রহণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা। এ জন্য তারা জনগণকে “আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ে” যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। তারা দাবি করেন, নতুন রাষ্ট্রের ভিত্তিপ্রস্তর হবে জনগণের অংশগ্রহণে রচিত ‘জুলাই সনদ’ যা ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক, স্বনির্ভর এবং জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করবে।

এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সরকারি বা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এনসিপির পদযাত্রা ও বক্তব্য সম্পর্কে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জুলাই গণআন্দোলনের পরবর্তী তরঙ্গ যদি সঠিকভাবে সংগঠিত হয়, তবে তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ