‘শেখ হাসিনার পথেই আশ্রয় চেয়েছি’-ভারতে বিতর্কিত স্বীকারোক্তি সোহেলের

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৯ ১০:৩৯:৫৬
‘শেখ হাসিনার পথেই আশ্রয় চেয়েছি’-ভারতে বিতর্কিত স্বীকারোক্তি সোহেলের

নজরুল ইসলাম সোহেল পাবনা জেলা পরিষদের প্যানেল মেয়র ছিলেন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। তবে দলীয় অভ্যন্তরীণ বিরোধ, প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে তিনি বাংলাদেশেই দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন বলে ভারতের তদন্তকারীদের জানিয়েছেন।

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল দাবি করেন, বাংলাদেশে থাকলে তার জীবন ঝুঁকির মুখে ছিল। ‘আমাকে মেরে ফেলা হতো’ এই ভাষায় নিজের প্রাণরক্ষার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি সম্প্রতি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেন।

সোহেল জানিয়েছেন, তার সীমান্ত অতিক্রমের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করা। তিনি দাবি করেন, “শেখ হাসিনা যেহেতু ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, আমিও সেই পথেই এসেছি নিজের প্রাণ বাঁচাতে।”

সোহেলের এই বক্তব্য ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কারণ শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের সঙ্গে তার সরকারের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ। সোহেলের বক্তব্য তার রাজনৈতিক অবস্থান ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।

একজন রাজনৈতিক নেতার এভাবে অবৈধ অনুপ্রবেশ পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত প্রশাসনে তাৎক্ষণিক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। রানিতলা থানা পুলিশ, জেলা প্রশাসন এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (IB) ও সিআইডি (CID) নজরুল ইসলাম সোহেলের রাজনৈতিক পরিচয়, অতীত কার্যক্রম এবং ভারতে তার অবস্থানের প্রকৃত উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী রাজনৈতিক পরিচয়ধারী ব্যক্তিদের তৎপরতা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনার বিষয়। তবে পাবনার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার এই গ্রেফতার অনুপ্রবেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি ও রাজনৈতিক অভিঘাতকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।

সোহেলের বিরুদ্ধে ভারতের ফরেনার্স অ্যাক্ট ১৪ ধারা, পাসপোর্ট আইনসহ সংশ্লিষ্ট অপরাধমূলক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে তার দীর্ঘদিন ধরে ভারতে থাকার বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

পাশাপাশি রাজনৈতিক আশ্রয়ের যে আবেদন বা আকাঙ্ক্ষা তিনি ব্যক্ত করেছেন, তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কারণ, ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয় নীতিমালা অত্যন্ত জটিল এবং এটি কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যাপ্ত প্রমাণ, রাজনৈতিক নিপীড়নের রেকর্ড এবং আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া সাধারণভাবে গৃহীত হয় না।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানা না গেলেও, নজরুল ইসলাম সোহেলের গ্রেফতার ও তার বিতর্কিত মন্তব্য বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক মহলে আলোচনা তৈরি করেছে।

বিশেষ করে তিনি ক্ষমতাসীন সরকারের নেতাকর্মী হওয়া সত্ত্বেও ‘জীবনের নিরাপত্তাহীনতার’ কথা বলে ভারতে আশ্রয়প্রার্থীর ভূমিকা গ্রহণ করায় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভ্রান্তি এবং স্পষ্ট বার্তার অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

নজরুল ইসলাম সোহেলের গ্রেফতার ঘটনা শুধু একটি আইন-শৃঙ্খলা বিষয় নয়, বরং এটি দুই দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা, রাজনৈতিক অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন এবং আন্তর্জাতিকভাবে রাজনৈতিক আশ্রয়ের নীতিমালাকে কেন্দ্র করে জটিল প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ