চেয়ারম্যানসহ পুরো বোর্ড অপসারণের চিন্তা করেছিল সরকার

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৯ ১০:২৭:৩৫
চেয়ারম্যানসহ পুরো বোর্ড অপসারণের চিন্তা করেছিল সরকার

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এ চলমান আন্দোলন এবং প্রশাসনিক অচলাবস্থাকে ঘিরে যে সংকট তৈরি হয়েছিল, তার কেন্দ্রে ছিলেন চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। একদিকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের লাগাতার আন্দোলন, অন্যদিকে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে তার প্রতি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের চাপ এই দুই ধারার মাঝে পড়ে তিনি পড়েন গভীর সংকটে। যদিও তিনি আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের পথ খুঁজতে চেয়েছিলেন, বাস্তবতা ছিল অনেকটাই ভিন্ন। আন্দোলনের বিস্তার এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, যেখানে সরকারের হস্তক্ষেপ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।

সরকারের শীর্ষ মহলের অসন্তোষ এতটাই প্রবল ছিল যে, একপর্যায়ে এনবিআর চেয়ারম্যানসহ পুরো বোর্ডকে অপসারণের বিষয়েও আলোচনা হয়। গত ৩ মে অনুষ্ঠিত পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এই প্রস্তাব উঠে আসে। বৈঠকে উপস্থিত একজন সদস্য বলেন, আন্দোলন দমন করতে না পারার দায়ে চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্যকে অপসারণের চিন্তা ছিল সরকারের। তবে এনবিআরের মতো একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের পুরো বোর্ড একসঙ্গে সরিয়ে দিলে কার্যক্রমে ভয়াবহ অচলাবস্থা তৈরি হবে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করায় ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার।

যদিও সরকার শক্ত অবস্থান নিতে চেয়েছিল, এনবিআর চেয়ারম্যান ছিলেন আপসহীন দ্বন্দ্ব নিরসনের পক্ষে। তিনি সময় চেয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ দেখান। কিন্তু মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা ছিল আরও জটিল। আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে আমদানি-রপ্তানির মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে, যা দেশের অর্থনীতিকে কার্যত স্তব্ধ করে দেয়।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার নিজ দপ্তর ছেড়ে ঢাকায় এসে আন্দোলনে যোগ দেন, যা প্রশাসনিক শৃঙ্খলার নজিরবিহীন ব্যত্যয় হিসেবে দেখা হয়। উপদেষ্টা কমিটির এক সদস্য একে ব্যঙ্গ করে বলেন, “এটা মনে হয় বাপের দিনের আড়তদারি।” সংশ্লিষ্ট ওই কমিশনারকে ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

আন্দোলন নিয়ে সরকারের অবস্থান ছিল অত্যন্ত কড়াকড়িভিত্তিক। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গঠিত হয় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি, যার নেতৃত্ব দেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির। এই কমিটি এনবিআরের বিভিন্ন ক্যাডার ও বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে এবং আন্দোলনের নেপথ্য কারণ অনুসন্ধান করে।

সূত্র জানায়, ওই বৈঠকগুলোতে এনবিআরের কর্মকর্তাদের আচরণ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। অনেকের আচরণকে সরাসরি ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে তুলনা করে বলা হয় এটা একটা প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান, এখানে ঐক্য পরিষদ স্টাইলে দাবি আদায়ের জায়গা নেই।

সরকার ইতোমধ্যে এনবিআরের তিনজন সদস্যকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা, দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের মতো কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। একইভাবে একজন কর কমিশনারও অবসরে পাঠানো হয়েছে।

দুদক ইতোমধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। এনবিআর সূত্র বলছে, আন্দোলনে যারা সক্রিয় ছিলেন, তাদের তালিকা তৈরি হচ্ছে এবং এদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর ফলে এনবিআর-এ ভয় এবং অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।

চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান যদিও সাংবাদিকদের বলেছেন, “দায়িত্বশীলদের ভয় নেই, সীমা লঙ্ঘনকারীদের বিষয়ে ভিন্নভাবে ভাবা হচ্ছে”, কিন্তু এটা পরিষ্কার যে সরকার আন্দোলনে জড়িতদের ছাড় দিতে নারাজ।

আন্দোলনে জড়িত অনেক কর্মকর্তা ইতোমধ্যে চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ক্ষমা চেয়েছেন এবং তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করেছেন। যদিও চেয়ারম্যান ব্যক্তি পর্যায়ে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তবে বিষয়টি এখন সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে।

বিশেষ করে যেসব কর্মকর্তা আন্দোলনের সময় শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করেছেন, তাদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে শুধু চেয়ারম্যানের ক্ষমা যথেষ্ট হবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।

সরকার এনবিআরের এই আন্দোলনকে নিছক কর্মবিরতি হিসেবে দেখছে না। বরং এর পেছনে রাজনৈতিক বা প্রাতিষ্ঠানিক অসন্তোষ থাকতে পারে এমন ধারণাও সরকারপক্ষে রয়েছে। বিশেষ করে যখন আইএমএফের ঋণচুক্তির শর্ত পূরণের জন্য সরকার এনবিআর সংস্কারে মনোযোগী হয়ে ওঠে, তখন এই আন্দোলন শুরু হয়।

আইএমএফের একটি প্রধান শর্ত ছিল এনবিআরকে বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ গঠন করা। সরকার যখন এই লক্ষ্য নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করল, তখনই আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। ফলে এই আন্দোলনের টাইমিং এবং উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সরকারের অনেক মহল।

২৮ জুন থেকে শাটডাউন কর্মসূচিতে যায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। সরকারের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারির পর দ্বিতীয় দিনেই ঐক্য পরিষদ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়। রাতেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক সমঝোতা বৈঠকের মাধ্যমে কর্মসূচি স্থগিত হয়।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক


জাল টাকার প্রচলন রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৫ ২১:৪৭:৩০
জাল টাকার প্রচলন রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
ফাইল ছবি

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ দেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে ‘বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ জাল নোট প্রবেশ করছে’—এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ দেখা দেওয়ায় নগদ অর্থ লেনদেনে জনগণকে আরও সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই তথ্য জানিয়েছে।

বিবৃতি ও সতর্কতা

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, প্রকাশিত প্রতিবেদনটি জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, জাল নোট তৈরি, বহন এবং লেনদেন করা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জাল টাকার প্রচলন রোধে নিয়মিতভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে তৎপর।

এ প্রেক্ষিতে নগদ লেনদেনে জনসাধারণকে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন এবং জাল নোট প্রচলন প্রতিরোধে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে:

১. নিরাপত্তা যাচাই: নোট গ্রহণের সময় নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য যাচাই করুন। যেমন—জলছাপ, অসমতল ছাপা, নিরাপত্তা সুতা, রং পরিবর্তনশীল কালি ও ক্ষুদ্র লেখা।

২. ব্যাংকিং চ্যানেল: বড় অঙ্কের লেনদেনে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করুন।

৩. ডিজিটাল পেমেন্ট: নগদ লেনদেনের ক্ষেত্রে সম্ভব হলে ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করুন।

৪. সন্দেহজনক নোট: সন্দেহজনক নোট পেলে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথবা ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করুন।

বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানায়, ‘আসল নোট চিনুন, নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত করুন’—এই মূলমন্ত্রে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আসল নোটের বৈশিষ্ট্য জানতে প্রতিটি ব্যাংক শাখায়ও পোস্টার টানানো আছে।


সবুজ শিল্পে নতুন মাইলফলক: আরও পাঁচটি কারখানা পেল লিড সার্টিফিকেশন

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৫ ১৫:৩৭:৪০
সবুজ শিল্পে নতুন মাইলফলক: আরও পাঁচটি কারখানা পেল লিড সার্টিফিকেশন
ছবিঃ বি এস এস

সবুজ শিল্পায়নের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আরও এক ধাপ এগিয়েছে। নতুন করে পাঁচটি তৈরি পোশাক কারখানা পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ‘লিড’ (LEED) সার্টিফিকেশন, যা দেশটিকে আবারও বিশ্বের শীর্ষ সবুজ পোশাক উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে সুদৃঢ় করেছে।

সর্বশেষ এই পাঁচটি কারখানা যুক্ত হওয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ২৬৮টি এলইইডি-সার্টিফায়েড পোশাক কারখানা রয়েছে—যার মধ্যে ১১৪টি প্লাটিনাম এবং ১৩৫টি গোল্ড সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত। সংখ্যার বিচারে এটি বিশ্বের সর্বাধিক সবুজ কারখানার মালিকানা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

একইসঙ্গে, বিশ্বের শীর্ষ ১০০ উচ্চমানের এলইইডি-সার্টিফায়েড কারখানার মধ্যে ৬৮টি এখন বাংলাদেশে অবস্থিত, যা পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ও জ্বালানি দক্ষতায় দেশের পোশাক শিল্পের ধারাবাহিক অগ্রগতি ও অঙ্গীকারের প্রমাণ বহন করে।

সর্বশেষ এলইইডি স্বীকৃতি পাওয়া পাঁচটি কারখানা হলো—

পাকিজা নিট কম্পোজিট লিমিটেড, সাভার, ঢাকা — O+M: Existing Buildings v4.1 ক্যাটাগরিতে ৮৭ পয়েন্টে প্লাটিনাম সার্টিফিকেশন অর্জন।

ফ্যাশন পালস লিমিটেড, বিসিক শিল্পনগরী, ঢাকা — BD+C: New Construction v4 ক্যাটাগরিতে ৮৭ পয়েন্টে প্লাটিনাম সার্টিফিকেশন।

গাভা প্রাইভেট লিমিটেড, প্লট ১১৪-১২০, ঢাকা — BD+C: New Construction v4 ক্যাটাগরিতে ৮৭ পয়েন্টে প্লাটিনাম সার্টিফিকেশন।

ভিজ্যুয়াল নিটওয়ার্স লিমিটেড, চট্টগ্রাম — O+M: Existing Buildings v4.1 ক্যাটাগরিতে ৭৬ পয়েন্টে গোল্ড সার্টিফিকেশন।

ট্যালিসম্যান পারফরম্যান্স লিমিটেড, সিইপিজেড, চট্টগ্রাম — BD+C: New Construction v4 ক্যাটাগরিতে ৬২ পয়েন্টে গোল্ড সার্টিফিকেশন।

এই অর্জন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্পের সবুজ রূপান্তরের ধারাবাহিক সফলতার প্রতিফলন। গত এক দশকে দেশের পোশাক খাত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরিবেশবান্ধব মানদণ্ড মেনে একটি ‘গ্রিন রেভলিউশন’-এর সূচনা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (USGBC) কর্তৃক প্রদত্ত এই এলইইডি সার্টিফিকেশন পাওয়া যায় জ্বালানি ও পানি ব্যবহারে দক্ষতা, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও কর্মীদের জন্য উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কঠোর মানদণ্ড পূরণের পর।

শিল্প বিশ্লেষকদের মতে, এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে উদ্যোক্তাদের সচেতন উদ্যোগ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর সক্রিয় ভূমিকা এবং সরকারের সহায়ক নীতি—যা সবুজ শিল্পায়ন ও টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করেছে।

বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সবুজ কারখানার এই সাফল্য শুধু দেশের পোশাকশিল্পকে একটি “দায়িত্বশীল সোর্সিং ডেস্টিনেশন” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে না, বরং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের দিকেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

-সুত্রঃ বি এস এস


শায়খ আহমাদুল্লাহর কণ্ঠে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে স্বচ্ছতার আহ্বান

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৪ ২০:৫০:০৯
শায়খ আহমাদুল্লাহর কণ্ঠে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে স্বচ্ছতার আহ্বান
ছবি : কালবেলা

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য শরিয়াহভিত্তিক বাড়ি ও গাড়ি কেনার ঋণ চালুর পরামর্শ দিয়েছেন দেশের খ্যাতনামা ইসলামী আলোচক ও আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, যারা ইসলামী নীতিমালা মেনে চলতে চান, এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বর্তমানে এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীতে বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত পবিত্র সীরাতুন্নবী (সা.) মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি এই আহ্বান জানান।

বিকল্প পথ ও নৈতিক দায়িত্ব

শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন, তারা হাউস লোন বা গাড়ি লোনের ক্ষেত্রে শরিয়াহ অনুসরণ করতে চান। কিন্তু বর্তমানে তেমন কোনো পদ্ধতি বা টুলস না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে সুদনির্ভর লোন গ্রহণ করেন।”

তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে। তিনি বলেন:

“আমরা কাউকে বাধ্য করতে বলছি না, বরং বলছি, যারা শরিয়াহভিত্তিক পথে লেনদেন করতে চান, তাদের জন্য বিকল্প একটি পথ থাকা উচিত। এটি শুধু ধর্মীয় দায় নয়, নৈতিক দায়িত্বও বটে।”

তিনি উল্লেখ করেন, অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা, যেমন বিসিএস কর্মকর্তারা, সরকার নির্ধারিত নীতিমালায় ইসলামী ব্যাংক থেকে হাউজিং সুবিধা নিচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের জন্যও এই সুযোগ থাকা উচিত।

ইসলামী ব্যাংকিং ও আইন

শায়খ আহমাদুল্লাহ ইসলামী ব্যাংকগুলোর জবাবদিহিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বিকাশে সবচেয়ে প্রয়োজন একটি শক্তিশালী ‘ইসলামী ব্যাংকিং আইন’। অনেক ব্যাংক ইসলামী নামে প্রচলিত থাকলেও প্রকৃত শরিয়াহ মেনে চলছে কি না, তা জানার সুযোগ নেই। আইনের মাধ্যমে নিয়ম-নীতিনির্ধারণ করা হলে প্রতারণা ও অনিয়ম কমবে।

তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকগুলোর শরিয়াহ বোর্ড নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। অনেক বোর্ডে এমন ব্যক্তিদের রাখা হয়, যাদের ব্যাংকিং বা শরিয়াহ বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি মান নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা তৈরি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিগত সরকারের আমলে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ইসলামী ধারা যুক্ত করার দাবি জানানো হলেও তা গৃহীত হয়নি, তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে—এটা ইতিবাচক উদ্যোগ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. জাকির হোসেন চৌধুরী।


২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৩ ২১:৩০:৫৩
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড
ছবিঃ সংগৃহীত

দেশের বাজারে আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে স্বর্ণের দাম। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) এবার ভরিতে ৪ হাজার ৬১৮ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৯ টাকা নির্ধারণ করেছে। এটি দেশের ইতিহাসে মূল্যবান এই ধাতুর সর্বোচ্চ দাম।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস এই তথ্য জানিয়েছে। নতুন এই দাম মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) থেকেই কার্যকর হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের এই নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।


জ্বালানি সংকট সৃষ্টি করেছেন রাজনীতিবিদেরা: বিস্ফোরক মন্তব্য জ্বালানি উপদেষ্টার

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১১ ১৬:৫০:৩২
জ্বালানি সংকট সৃষ্টি করেছেন রাজনীতিবিদেরা: বিস্ফোরক মন্তব্য জ্বালানি উপদেষ্টার
ছবিঃ সংগৃহীত

দেশের স্বল্পমেয়াদি জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় এলপিজির দাম নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, বর্তমানে সিলিন্ডারের বাজার মূল্য ১২০০ টাকার বেশি হওয়ায় শিল্প ও গৃহস্থালি ব্যবহারকারীরা যথাযথ সুবিধা পাচ্ছেন না। অথচ এর দাম ১ হাজার টাকার মধ্যে হওয়া উচিত।

শনিবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে এলপিজি: অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক পলিসি কনক্লেভে তিনি এসব কথা বলেন।

ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের সমালোচনা

উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বাজারে বাড়তি দামে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বিক্রি বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে অভিযান চালানো হবে বলেও জানিয়েছেন।

তিনি বলেন:

“১২০০ টাকার এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হয় ১৪০০ টাকায়। এটার দায় নিতে হবে ব্যবসায়ীদের। অতিরিক্ত মুনাফা করে সম্পদের পাহাড় গড়ে বিদেশে টাকা পাচার করার মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।”

তিনি জ্বালানি সংকটের জন্য এক শ্রেণির রাজনীতিবিদ ও তাদের সহযোগী ব্যবসায়ীদের দায়ী করেন। তিনি অভিযোগ করেন, জ্বালানি নিশ্চিত না করেই চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে এবং গ্যাস খাতে অসংখ্য অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়েছে—এসব অপকর্ম করেছেন রাজনীতিবিদেরা।

চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

এলপিজি অপারেটরদের জবাব: এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লোয়াব) সভাপতি মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, এলপিজির মূল্য নির্ধারণ করে বিইআরসি। তিনি প্রশ্ন করেন, “১ হাজার টাকায় এলপিজি দিতে চান উপদেষ্টা। তিনি আমদানিকারকদের ৭ শতাংশ মুনাফা দিয়ে যদি ওই দামে বিক্রি করতে পারেন, করে দেন।”

ঘাটতি মোকাবিলা: জ্বালানি অনুসন্ধানের কাজ বাড়ানো হয়েছে এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানির (বাপেক্স) জন্য নতুন রিগ কেনা হচ্ছে। এলএনজি রূপান্তরের সক্ষমতা বাড়াতে নতুন এফএসআরইউ-এর চেষ্টা করা হচ্ছে।

সাবেক মন্ত্রীর মত: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, সবাইকে দোষারোপের কিছু নেই। বাংলাদেশের গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে। এ ঘাটতি কীভাবে পূরণ করা হবে, তার পরিকল্পনা এখন থেকেই করতে হবে।

এলপিজি খাতে নিরাপত্তা ঝুঁকি

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, এ বছর গ্যাস খাতে মোট অগ্নি দুর্ঘটনা দেড় হাজারের বেশি, যার মধ্যে ৫৮০টি এলপিজি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য ম. তামিম জানান, দেশে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে এখন দিনে ১৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি আছে। শিল্পে গ্যাস সংকট কাটাতে এলপিজি ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ডিজেলের চেয়ে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ খরচ কমাতে পারে।


মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে ৫০টির বেশি জাহাজ, বাংলাদেশের আমদানি-সংক্রান্ত উদ্বেগ

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১১ ১৩:৫৪:৩০
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে ৫০টির বেশি জাহাজ, বাংলাদেশের আমদানি-সংক্রান্ত উদ্বেগ
ছবিঃ সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরে ইরানি তেল ও এলপিজি পরিবহন এবং এর উৎস গোপনের সঙ্গে জড়িত বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও নৌবাহিনীর ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। ভেসেল-ট্র্যাকিং তথ্য অনুযায়ী, ইরান-সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলো এখনো চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করা অবস্থায় রয়েছে। যদিও নিষেধাজ্ঞার তালিকায় কোনো বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের নাম সরাসরি নেই, তবে এই ধরনের চালান ও লেনদেনের মাধ্যমে বাংলাদেশও এখন ওয়াশিংটনের সম্প্রসারিত নজরদারি ও বাস্তবায়ন ব্যবস্থার আওতায় ধরা হচ্ছে।

দীর্ঘ আলোচনার পর চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর জাহাজগুলোকে পুনরায় গ্যাস স্থানান্তরের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। মার্কিন আইনে বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ লেনদেনে জড়িত বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো ‘সেকেন্ডারি স্যাংশন’-এর ঝুঁকিতে থাকে।

চীনা রিফাইনারি ও ‘ছায়া নৌবহর’

চলতি বছরের চতুর্থ দফার এই নিষেধাজ্ঞা বিশেষভাবে চীনের রিফাইনারি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের লক্ষ্য করেছে। মার্কিন অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং ও মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ ভিত্তিক কিছু প্রতিষ্ঠান ইরানি তেলের উৎস গোপন করতে ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা ছায়া নৌবহর পরিচালনা করত। এসব কার্যক্রমের মধ্যে ছিল এক জাহাজ থেকে অন্য জাহাজে তেল স্থানান্তর এবং ছদ্ম কোম্পানির মাধ্যমে পণ্যের গতিপথ লুকানো।

তালিকাভুক্ত চীনা প্রতিষ্ঠান: সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান—শানডং জিনচেং পেট্রোকেমিক্যাল গ্রুপ ও রিজাও শিহুয়া ক্রুড অয়েল টার্মিনাল। অভিযোগ রয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত জাহাজ ব্যবহার করে ইরানের কোটি কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ইরানের তেল ও এলপিজি পরিবহন বা উৎস গোপনের কাজে ব্যবহৃত বহু জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘ম্যাক্স স্টার’, ‘গ্যাস ভিশন’, ‘সি অপেরা’ এবং ‘টিউলিপ’—যেগুলোর সঙ্গে যুক্ত চালানগুলো বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে পৌঁছেছে।

আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে মার্কিন আইনের আওতায় থাকা তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সব সম্পদ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে এবং তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার জ্বালানি বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোতে, যারা স্পট মার্কেট থেকে এলপিজি ক্রয় করে। ওয়াশিংটনের নীতিগত অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে—ইরানের সীমার বাইরে গিয়ে তারা এখন এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যস্বত্বভোগীদেরও নজরদারির আওতায় আনছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নিষেধাজ্ঞা ছোট আমদানিকারকদের জন্য জ্বালানি সরবরাহকে জটিল করে তুলতে পারে।


রেকর্ড ছুঁয়েছে সোনার দাম: বিশ্ব অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয় সোনা

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৮ ১২:১০:৩২
রেকর্ড ছুঁয়েছে সোনার দাম: বিশ্ব অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয় সোনা
ছবিঃ সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বিনিয়োগকারীদের ‘নিরাপদ আশ্রয়’ খোঁজার প্রবণতা আবারও সোনার বাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৪,০০০ ডলার (প্রায় ২,৯৮৫ পাউন্ড) অতিক্রম করে সর্বকালের রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এটি ১৯৭০–এর দশকের পর সোনার সবচেয়ে বড় উত্থান বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্কনীতির পর থেকেই বৈশ্বিক বাণিজ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়, যা বিনিয়োগকারীদের সোনার দিকে ঝুঁকতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মার্কিন সরকারের চলমান ‘শাটডাউন’ বা আংশিক কার্যক্রম বন্ধ থাকাও এই মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। টানা দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করা এই সংকটে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ বিলম্বিত হচ্ছে, যা বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে।

সোনা ঐতিহ্যগতভাবে একটি ‘সেফ হেভেন’ বা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত—যে সম্পদ বাজারের অস্থিরতা বা অর্থনৈতিক মন্দার সময়েও মূল্য ধরে রাখে, এমনকি বাড়ায়ও।

বুধবার সকালে এশীয় বাজারে স্পট গোল্ড—অর্থাৎ তাৎক্ষণিক বিক্রয়যোগ্য সোনার দাম—প্রতি আউন্সে ৪,০১১ ডলারের উপরে উঠে যায়। একই দামে ৭ অক্টোবর পৌঁছেছিল গোল্ড ফিউচারস মার্কেটও, যা বাজারের ভবিষ্যৎ প্রত্যাশার সূচক হিসেবে বিবেচিত হয়।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক ব্যাংক ওসিবিসির (OCBC) রেটস স্ট্র্যাটেজিস্ট ক্রিস্টোফার ওং বলেন, “মার্কিন সরকারের শাটডাউন সোনার দামের জন্য শক্তিশালী অনুকূল বাতাস তৈরি করেছে। অতীতেও এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকেছেন।”

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এক মাসব্যাপী সরকারি অচলাবস্থার সময়ও সোনার দাম প্রায় ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে ওং সতর্ক করে বলেন, “যদি শাটডাউন প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত শেষ হয়, তাহলে সোনার দাম কিছুটা কমে আসতে পারে।”

ইউওবি ব্যাংকের বাজার কৌশল বিভাগের প্রধান হেং কুন হাও বলেন, “গত এক মাসের সোনার অভূতপূর্ব উত্থান বিশ্লেষকদের সব পূর্বাভাস ছাড়িয়ে গেছে।” তিনি জানান, ডলারের দুর্বলতা এবং নতুন খুচরা বিনিয়োগকারীদের (রিটেইল ইনভেস্টর) অংশগ্রহণ এই উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছে।

প্রেসিয়াস মেটাল ব্যবসায়ী ও স্টোরেজ প্রতিষ্ঠান সিলভার বুলিয়ন–এর প্রতিষ্ঠাতা গ্রেগর গ্রেগারসন বলেন, “গত এক বছরে আমাদের গ্রাহকের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এখন ব্যাংক, ধনী পরিবার ও খুচরা বিনিয়োগকারীরা সোনাকে বিশ্ব অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে একধরনের সুরক্ষা হিসেবে বিবেচনা করছেন।”

তার ভাষায়, “আমাদের বেশিরভাগ গ্রাহক দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী—তারা সাধারণত চার বছরের বেশি সময় সোনা সংরক্ষণ করেন। সোনার দাম ভবিষ্যতে কিছুটা নামতে পারে, কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অন্তত আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত এটি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় থাকবে।”

তবে বিশ্লেষকেরা সতর্ক করছেন, সুদের হার বাড়লে বা ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত হলে সোনার দাম কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। ওসিবিসির ওং বলেন, “২০২২ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়িয়েছিল, তখন সোনার দাম ২,০০০ ডলার থেকে নেমে ১,৬০০ ডলারে পৌঁছেছিল।”

তিনি আরও বলেন, “সোনা অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে একধরনের বীমা হলেও, সেই বীমা পরিস্থিতি বদলালে ভাঙা যায়।”

বিশ্লেষকদের মতে, এবার সোনার উত্থান মূলত বাজারে এমন ধারণা থেকে এসেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ শিগগিরই সুদের হার কমাবে। এতে সোনার বিনিয়োগ আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।

এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফেডের ওপর প্রকাশ্যে চাপ বাড়িয়েছেন—গভর্নর লিসা কুককে বরখাস্তের চেষ্টা ও চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে সমালোচনা করে। অর্থনীতিবিদ ওং মন্তব্য করেন, “এভাবে ফেডের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হলে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আস্থা কমে যাবে, আর তখন অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক সম্পদ হিসেবে সোনার গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে।”

বিশ্লেষক মহল একমত—বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা, মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা এবং রাজনৈতিক টানাপোড়েন মিলিয়ে সোনার এই রেকর্ড উত্থান শুধুমাত্র বাজারের প্রতিক্রিয়া নয়, বরং অনিশ্চিত সময়ে নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবেও নতুন করে আবির্ভূত হচ্ছে।

-আশরাফুল ইসলাম


অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার: বিশ্বব্যাংক দিল বাংলাদেশকে সুখবর

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৭ ১৭:১৫:০৯
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার: বিশ্বব্যাংক দিল বাংলাদেশকে সুখবর
ছবি: সংগৃহীত

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.৮ শতাংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত অর্থবছরে যা ছিল ৩.৯৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই ধারা আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত থাকতে পারে।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি ও চ্যালেঞ্জ

আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাটি বলছে, মূল্যস্ফীতি কমে আসা এবং ব্যক্তি খাতের ভোগব্যয় বৃদ্ধিই এই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি।

ভোগব্যয় বৃদ্ধি: ভোগব্যয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পোশাক রপ্তানি খাত স্থিতিশীল থাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ট্যারিফ কাঠামোর আওতায় বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

চ্যালেঞ্জ: বিশ্বব্যাংকের মতে, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা, জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সংস্কার কার্যক্রমে বিলম্বের কারণে বিনিয়োগ নিম্নমুখী থাকতে পারে।

আমদানি ও ঘাটতি: আমদানি স্বাভাবিক হলে চলতি হিসাব আবার ঘাটতিতে ফিরে যাওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

এলডিসি উত্তরণ ও রাজস্ব সংস্কার

বিশ্বব্যাংকের বিভাগীয় পরিচালক জ্যঁ পেম মন্তব্য করেছেন, এলডিসি (LDC) গ্র্যাজুয়েশনের জন্য বাংলাদেশের জোরেশোরে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, “এ ধরনের উত্তরণে অনেক ধরনের সুবিধাও আছে, এ বিষয়ে সরকারকে আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। বেসরকারি খাতকে উপযোগী করে তুলতে মনোযোগ প্রয়োজন।”

সংস্কারের ফলে রাজস্ব আয় বাড়ায় বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে থাকবে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক। আগামী অর্থবছরে সরকারি ঋণ জিডিপির ৪১.৭ শতাংশে পৌঁছাবে।


অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আমি স্বস্তিতে আছি: ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৭ ১৪:৫১:০৬
অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আমি স্বস্তিতে আছি: ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত

দেশের অর্থনৈতিক দিক নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আমি স্বস্তিতে আছি। সে জন্য তো আমরা মোটামুটি একটু কনফিডেন্ট।”

দারিদ্র্যের হার নিয়ে প্রশ্ন

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়ার কথা বলা হলে, অর্থ উপদেষ্টা তার উত্তরে এই পরিসংখ্যানের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “আমি তাত্ত্বিক দিকে এখন যাবো না। দারিদ্র্য বেড়ে গেছে, দারিদ্র্য আছে—এগুলো বলতে হলে আমার অনেক বক্তব্য দিতে হবে।”

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ পরিসংখ্যানের প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন:

“আপনি ৫ হাজার লোকের টেলিফোন করে ইন্টারভিউ নিয়ে বললেন দারিদ্র্য বেড়ে গেছে, এগুলো তো আমি জানি। আমাকে একজন বলে স্যার আপনি একটা পেপার লেখেন, আমি বলে দিলে একটা ফার্ম ২০ হাজার রিপ্লাই দিয়ে দিবে আপনাকে কালকের মধ্যে। এগুলো রিলাবিলিটির ব্যাপার।”

তিনি আরও বলেন, “তবে ডেফিনেটলি আমাদের চ্যালেঞ্জ আছে, এটা আমি অস্বীকার করি না। কিন্তু এত পারসেন্ট বেড়ে গেছে…”

অমর্ত্য সেনের প্রসঙ্গ

তিনি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের একটি মন্তব্য উল্লেখ করে বলেন, “অমর্ত্য সেন একবার বলেছিলেন—খুব কঠিন দারিদ্র্য আমার মেজার করতে হবে না। দরিদ্র লোক দেখলেই চিনতে পারবেন, তার চেহারা, তার ভাবে।”

পাঠকের মতামত: