যেভাবে পানিদূষণ রোধ করবে ঢাবি অধ্যাপকের নতুন প্রযুক্তি

ঢাকা মহানগরের পানির গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে হাসপাতালের বর্জ্য পানি পরিশোধনের জন্য নতুন ও উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পথে এগিয়ে চলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। তার নেতৃত্বে, এক অভাবনীয় গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া (এএমআর) এবং জীবাণুবাহিত দূষণ রোধে কার্যকর সমাধান নিয়ে আসার প্রস্তুতি চলছে। প্রকল্পটি অর্থায়ন করছে জাপানের দুই শীর্ষ বিজ্ঞান ও উন্নয়ন সংস্থা—জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এবং জাপান সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এজেন্সি (জেএসটি)।
বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি নীরব হুমকি হয়ে উঠছে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া। ঢাকার বাস্তবতায়, এই হুমকি আরও প্রকট, কারণ শহরের প্রায় ৫০০ হাসপাতালের ব্যবহৃত পানি কোনো রকম পরিশোধন ছাড়াই সরাসরি নদীতে ফেলা হয়। পরবর্তীতে সেই পানি ওয়াসা কর্তৃক পরিশোধিত হয়ে বাড়িঘরে পৌঁছায়। যদিও এসব পানি ফিল্টার করা হয়, তবু অতি সূক্ষ্ম ব্যাকটেরিয়া এবং অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্ট জিন এর মধ্য দিয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এই প্রক্রিয়াই এক সময় সুপেয় পানিকেও বিপজ্জনক করে তুলছে।
অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, “এই ব্যাকটেরিয়াগুলো অনেক সময় প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। ফলে রোগ সহজে সারে না, বরং জটিল রূপ নেয়। এটি ক্যান্সারের মতোই ভয়ানক, এমনকি দীর্ঘমেয়াদে আরও মারাত্মক।”
এই সমস্যা মোকাবেলায় অধ্যাপক আনোয়ার ও তার গবেষক দল জাপানের এহিমে ও শিজুওকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে অক্সিডেশন এবং অ্যাডভান্স অক্সিডেশন নামক দুটি উন্নত পানি পরিশোধন পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন। পরীক্ষাগারে ইতিমধ্যে আশাব্যঞ্জক সাফল্য পেয়েছে তারা। পরবর্তী ধাপে এই প্রযুক্তি বাস্তব ক্ষেত্রে হাসপাতালের বর্জ্য পানিতে প্রয়োগ করে কার্যকারিতা যাচাই করা হবে।
এই পাঁচ বছর মেয়াদি গবেষণা প্রকল্পের বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইয়েন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩০ কোটি টাকা খরচ হবে প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও গবেষণা অবকাঠামো নির্মাণে, বাকি ২০ কোটি টাকায় বাংলাদেশি গবেষকদের জাপানে প্রশিক্ষণ ও পিএইচডি কর্মসূচিতে পাঠানো হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত হবে আধুনিক "ঢাকা ওয়াটার এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ সেন্টার"। এই কেন্দ্রটি বাংলাদেশে পানির গুণমান, এএমআর ব্যাকটেরিয়া পর্যবেক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক গবেষণায় অংশগ্রহণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), CDC ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতার জন্যও দরজা খুলে যাবে এই কেন্দ্রের মাধ্যমে।
প্রকল্পের আওতায় কমপক্ষে পাঁচজন শিক্ষার্থী জাপানের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সুযোগ পাবেন। সেখানে তারা গবেষণার পাশাপাশি প্রতি মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকার সমপরিমাণ সম্মানীও পাবেন। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকরা জাপানে বিভিন্ন কর্মশালা, গবেষণা সম্মেলন এবং বিশেষ প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারবেন।
২০১৯ সালে শুধু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশে ২৬,২০০ জন সরাসরি এবং প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ পরোক্ষভাবে মারা গেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে শুধু এশিয়াতেই প্রতি বছর এএমআরের কারণে ৪.৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এমন বাস্তবতায় অধ্যাপক আনোয়ারের নেতৃত্বে এই প্রকল্প এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো, হাসপাতালের বর্জ্য পানি শোধন করে জীবাণুমুক্ত করার পর তা নদীতে ফেলা হোক। তাহলে সেটি মানুষ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হবে না। এটি নতুন প্রযুক্তি, কিন্তু বাস্তবায়নে আর বিলম্ব করার সুযোগ নেই।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রথমে ঢাকা শহরে প্রকল্প বাস্তবায়নের পর এর কার্যকারিতা প্রমাণ হলে সারা দেশে, এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এর প্রয়োগ ঘটবে।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেয়ারবাজারে গেম্বলারদের দৌরাত্ম্য: আস্থা ফেরাতে চাই কঠোর শাস্তি ও কাঠামোগত সংস্কার
- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের দীর্ঘ ছুটি, চালু থাকবে জরুরি সেবা
- বাংলাদেশে সেনা-সরকার উত্তেজনা ও ‘কু’ এর গুঞ্জন: নেপথ্যে কি?
- নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে কারা টিকে থাকবে, কারা হারিয়ে যাবে?
- সেনাপ্রধানের বক্তব্য, জুলকারনাইন তাতে যা বললেন!
- তারকা পরিচিতি: রক্ষাকবচ না কি সমাজবিমুখ অব্যাহতি?
- নাহিদের স্পষ্ট বার্তা: এনসিপিতে নেই দুই উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ
- বিএনপির সালাউদ্দিনকে নিয়ে কি লিখলেন প্রেস সচিব শফিকুল?
- বাংলাদেশে আন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে মৌলিক অধিকার হুমকিতে
- দারুননাজাত: নৈতিকতার আলোকবর্তিকা
- মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কেন অনিশ্চিত
- ইউজিসি-ম্যাকগিল পিএইচডি স্কলারশিপ: শুধুমাত্রবাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য
- ডিপ্লোমেটিক শেকআপ: জসীম উদ্দিন দূতাবাসে , সচিব হচ্ছেন নজরুল
- ডিসেম্বরে নির্বাচন চান সেনাপ্রধান
- "ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সব রাজনৈতিক দল অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে"