বিদ্যুৎ বিল কমানোর ১০ উপায়

জীবনযাপন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ১২:৩৫:১৫
বিদ্যুৎ বিল কমানোর ১০ উপায়

প্রচণ্ড গরমে মানুষের স্বস্তি যেমন হারিয়ে যাচ্ছে, তেমনি বাড়ছে বিদ্যুৎ খরচ। এই অতিরিক্ত খরচের কারণে অনেকের মাসিক বাজেটে চাপ পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামান্য সচেতনতা ও কিছু কার্যকর অভ্যাস গড়ে তুললেই বিদ্যুৎ বিল অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। চলুন একনজরে দেখে নিই, কিভাবে আপনি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারেন।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য ব্যবহার করুন

বিদ্যুৎ কম খরচের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সাশ্রয়ী পণ্য ব্যবহার করা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এলইডি বাল্ব সাধারণ ইনক্যান্ডিসেন্ট বাল্বের চেয়ে প্রায় ৭৫% কম বিদ্যুৎ খরচ করে। একইভাবে, রেফ্রিজারেটর বা এসি কেনার সময় ইনভার্টার প্রযুক্তিসম্পন্ন মডেল বেছে নেওয়া জরুরি, যেগুলো বিদ্যুৎ খরচ অনেক কমায়।

মিটার নিয়মিত পরীক্ষা করুন

বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ ঠিকমতো নির্ণয় করতে মিটার নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। অনেক সময় মিটারের ভুল রিডিং অতিরিক্ত বিলের কারণ হয়। তাই বিলের সঙ্গে ব্যবহৃত ইউনিট মিলিয়ে দেখা ও সন্দেহ হলে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে অবহিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

অব্যবহৃত ডিভাইসের প্লাগ খুলে রাখুন

টিভি, চার্জার, রাউটার, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি অনেক ডিভাইস বন্ধ থাকলেও স্ট্যান্ডবাই মোডে বিদ্যুৎ খরচ করে। তাই এসব ডিভাইস ব্যবহার না থাকলে সকেট থেকে প্লাগ খুলে রাখা উচিত। এই অভ্যাসটি দীর্ঘমেয়াদে আপনার বিদ্যুৎ বিল কমিয়ে দেবে।

এসির তাপমাত্রা ও রক্ষণাবেক্ষণ

গরমের সময় এসি ব্যবহার অনিবার্য হয়ে পড়ে। তবে এসির তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখলে তা স্বস্তিদায়ক পরিবেশ বজায় রেখেও বিদ্যুৎ খরচ কমাবে। এছাড়া প্রতি ৩-৬ মাস পরপর এসির পরিষ্কার ও সার্ভিসিং নিশ্চিত করলে যন্ত্রটির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং কম বিদ্যুৎ খরচ হয়।

প্রাকৃতিক বাতাস ও আলোকে কাজে লাগান

দিনের বেলায় জানালা ও দরজা খোলা রেখে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস প্রবেশের সুযোগ করে দিন। এতে এসি বা ফ্যানের প্রয়োজন কমে আসে। ঘরে তাপমাত্রা কম রাখতে ভারি পর্দা বা বাইরের গাছপালা সহায়ক ভূমিকা রাখে।

তাপ নিরোধক উপাদান ব্যবহার

বাড়ির ছাদ বা দেয়ালে তাপ প্রতিরোধী উপকরণ ব্যবহার করলে ঘরের ভিতরের তাপমাত্রা অনেকটা হ্রাস পায়। এর ফলে অতিরিক্ত কুলিংয়ের প্রয়োজন পড়ে না। ফাইবারগ্লাস, সেলুলোজ, রিফ্লেক্টিভ ফয়েল ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহার করে আপনি ঘরকে আরও আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী করে তুলতে পারেন।

অভ্যাসে সাশ্রয় আনুন

অনেকেই রুম থেকে বের হওয়ার সময় লাইট, ফ্যান, এসি বন্ধ করতে ভুলে যান। এটি বিদ্যুতের বড় অপচয়। প্রতিদিনের ছোট ছোট এই অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করলেই মাসিক বিল অনেকটাই কমে যাবে। শিশুদেরকেও এই বিষয়ে সচেতন করা উচিত।

সবুজায়নের মাধ্যমে প্রাকৃতিক শীতলতা

বাড়ির চারপাশে গাছপালা রোপণ করুন। গাছ পরিবেশে ছায়া দেয়, বাড়ির তাপমাত্রা কম রাখে এবং বাতাসকে ঠাণ্ডা রাখে। এটি শুধু বিদ্যুৎ সাশ্রয়ই করে না, পরিবেশবান্ধব একটি জীবনধারার পথও দেখায়।

বৈদ্যুতিক যন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ

টিভি, রেফ্রিজারেটর, ফ্যান, ওভেন ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার এবং সার্ভিসিং না করালে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেয়, ফলে বাড়ে বিদ্যুৎ খরচ। যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পুরনো পণ্যগুলো অনেক সময় বেশি বিদ্যুৎ টানে, তাই সুযোগ পেলে সেগুলো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী মডেলে পরিবর্তন করুন।

সৌরবিদ্যুৎ: দীর্ঘমেয়াদি সাশ্রয়ী সমাধান

প্রাথমিকভাবে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন খরচসাপেক্ষ হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ সাশ্রয় করে। ছাদ বা খোলা জায়গায় ছোট সোলার প্যানেল স্থাপন করে আপনি আলোকসজ্জা, ফ্যান, চার্জারসহ ছোটখাটো যন্ত্র চালাতে পারেন। এটি শুধু আপনার বিদ্যুৎ বিল কমাবে না, পরিবেশ রক্ষাতেও ভূমিকা রাখবে।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের এই ১০টি কৌশল বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করলে শুধু মাসিক খরচ কমানোই নয়, দেশের সামগ্রিক বিদ্যুৎ সংকট নিরসনেও আপনি ভূমিকা রাখতে পারবেন। আমরা যদি সকলে সচেতন হই, তাহলে বিদ্যুৎ ব্যবহারে দক্ষতা যেমন বাড়বে, তেমনি টেকসই ভবিষ্যতের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাব।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ