ইন্টারভিউয়ে সফল হওয়ার ছয়টি চাবিকাঠি

জীবনযাপন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৬ ১৩:৪২:২১
ইন্টারভিউয়ে সফল হওয়ার ছয়টি চাবিকাঠি

একটি চাকরির ইন্টারভিউ সফলভাবে উতরে যাওয়ার জন্য শুধু প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট নয়। বরং প্রার্থী কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করছেন, কীভাবে কথা বলছেন, এমনকি যেসব বিষয়ে তার জানা নেই, সেগুলো কীভাবে স্বীকার করছেন এসব সূক্ষ্ম বিষয়গুলোও নিয়োগদাতার নজর এড়িয়ে যায় না। তাই ইন্টারভিউ মানেই শুধু প্রশ্নোত্তর নয়; এটি একজন প্রার্থীর পেশাদারিত্ব, আত্মবিশ্বাস ও চিন্তার পরিপক্বতা যাচাইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া।

চলুন জেনে নিই ইন্টারভিউয়ের আগে এবং ইন্টারভিউ চলাকালে কোন বিষয়গুলোয় গুরুত্ব দিলে একজন প্রার্থী নিজেকে অধিকতর দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাসীভাবে উপস্থাপন করতে পারেন-

১. এক সেকেন্ডের বিরতি বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক

ইন্টারভিউয়ে প্রশ্ন শোনামাত্রই দ্রুত জবাব দেওয়ার প্রবণতা অনেকের থাকে। কিন্তু এই তাড়াহুড়া অনেক সময় ভুল বা অস্পষ্ট উত্তর ডেকে আনে। বরং প্রশ্ন শোনার পর ১-২ সেকেন্ড বিরতি নিয়ে চিন্তা করে জবাব দেওয়া প্রার্থীর পরিণত মানসিকতা ও যুক্তিশীলতা প্রকাশ করে। এটি কোনো দুর্বলতা নয়, বরং আত্মনিয়ন্ত্রণের পরিচায়ক।

২. অসততা নয়, স্বীকারোক্তির সাহসই বড় গুণ

ইন্টারভিউ বোর্ডে বসে সব প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু না জানার বিষয়টি ঢাকতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতায় পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই যে বিষয়ে আপনি জানেন না, সেটি বিনয়ের সঙ্গে স্পষ্ট করে বলা এবং শেখার আগ্রহ প্রকাশ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে আপনি একজন সৎ ও শেখার ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

৩. ক্যারিয়ারে বিরতি? সৎ ব্যাখ্যাই যথেষ্ট

কোনো প্রার্থীর পেশাজীবনে কিছু সময়ের বিরতি বা চাকরি পরিবর্তন থাকা অস্বাভাবিক নয়। অনেকেই এই তথ্য লুকানোর চেষ্টা করেন কিংবা অপ্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যায় জড়িয়ে পড়েন, যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বরং এটি যদি শেখার উদ্দেশ্যে, ব্যক্তিগত কারণে, বা নতুন কিছু অনুসন্ধানের প্রয়াসে ঘটে থাকে, তবে সেটি স্বাভাবিকভাবে উপস্থাপন করাই শ্রেয়। এটি প্রার্থীর আত্মবিশ্বাস ও স্বচ্ছতা প্রকাশ করে।

৪. সময়জ্ঞান: খুব আগে নয়, খুব দেরিও নয়

ইন্টারভিউ স্থলে পৌঁছানোর সময় নিয়েও সংবেদনশীল হতে হবে। খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছালে তা আয়োজকদের জন্য অপ্রস্তুতির কারণ হতে পারে, আবার দেরিতে পৌঁছালে পেশাদারিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়। নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট আগে উপস্থিত হওয়াই উত্তম।

৫. রিসার্চ করুন: প্রস্তুতির অর্ধেক এখানেই

আপনি যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন, তারা কী করে, তাদের নেতৃত্বে কারা আছেন, বর্তমান লক্ষ্য বা প্রকল্পগুলো কী এই বিষয়গুলো জানাটা শুধু আপনাকে প্রস্তুতই রাখবে না, বরং আপনার আগ্রহ, গবেষণার মনোভাব এবং দায়িত্ববোধের ইঙ্গিত দেবে। প্রশ্নকর্তাদের দৃষ্টিতে আপনি হয়ে উঠবেন একজন সচেতন ও আগ্রহী প্রার্থী।

৬. শারীরিক ভাষা নিরব অথচ শক্তিশালী বার্তা

আপনার বসার ভঙ্গি, চোখের যোগাযোগ, মুখাবয়বের অভিব্যক্তি সব মিলিয়ে আপনার শরীরের ভাষাও একটি বার্তা দেয়। সোজা হয়ে বসা, মাথা উঁচু রাখা এবং চোখে চোখ রেখে কথা বলা আত্মবিশ্বাসের চিহ্ন। হাত গুটিয়ে বা চোখ এড়িয়ে কথা বললে তা সংকোচ বা অনিশ্চয়তা বোঝায়। মনে রাখবেন, আপনি চাকরির জন্য যোগ্য আপনাকেই দরকার। তাই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেকে তুলে ধরাই সঠিক কৌশল।

ইন্টারভিউতে ভালো করার অভ্যাস একদিনে তৈরি হয় না। এটি প্রতিনিয়ত নিজের চিন্তা-প্রকাশ, ভাষা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং উপস্থিতি চর্চার ফসল। প্রস্তুতি, সততা ও আত্মবিশ্বাসএই তিনটি স্তম্ভে দাঁড়িয়েই একজন প্রার্থী ইন্টারভিউ পর্বে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রাখেন।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ