অবশেষে বিদ্যুৎ পাচ্ছে নাভাহো জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি, মরুভূমির উত্তাপে কিছুটা স্বস্তি

পরিবেশ ও জলবায়ু ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ১০:৪৬:০০
অবশেষে বিদ্যুৎ পাচ্ছে নাভাহো জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি, মরুভূমির উত্তাপে কিছুটা স্বস্তি

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা মরুভূমির জ্বলন্ত তাপের মধ্যে অবশেষে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন নাভাহো জাতিগোষ্ঠীর বাসিন্দারা। সম্প্রতি বিদ্যুৎকর্মীরা লালচে ধূলিধূসরিত মাটিতে বৈদ্যুতিক খুঁটি বসিয়ে সংযোগ দিচ্ছেন ক্রিস্টিন শর্টির বাড়িতে—যা তাঁর কাছে অনেকটা স্বপ্নপূরণের মতো।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় আদিবাসী এলাকা নাভাহো নেশন জুড়ে এখনো ১০ হাজারের বেশি পরিবার বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। ফলে এই অঞ্চলে অনেকেই তীব্র গরমে ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশনের মতো ন্যূনতম সহায়তাও পান না।

৭০ বছর বয়সী শর্টি বলেন, “আগে এত গরম হতো না। এখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিন দিন তাপমাত্রা বাড়ছে। বিদ্যুৎ পেলে অন্তত ফ্যান চালিয়ে কিছুটা স্বস্তি পাব।”

টোনালিয়া নামের যে ছোট্ট গ্রামে তিনি থাকেন, তা এক সময় ছিল ঠাণ্ডা ও বৃষ্টিভেজা। এখন সেখানে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়, বর্ষাকালের বৃষ্টিপাত কমে গেছে, ছোট ছোট মৌসুমি হ্রদ শুকিয়ে যাচ্ছে, আর গবাদিপশু পিপাসায় মরছে।

বর্তমানে শর্টির কাছে একটি ছোট জেনারেটর ও সৌরপ্যানেল আছে, যা দিয়ে তিনি টিভি চালানো, রান্না করা বা ফ্রিজ চালানোর মতো কাজ করেন। তবে একসঙ্গে সব চালানো সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া আমার জীবনে বিশাল পরিবর্তন আনবে। এটা অনেক সহজ করে দেবে জীবন।”

‘লাইট আপ নাভাহো’ প্রকল্প: বিদ্যুৎ পৌঁছানোর সংগ্রাম

সারা যুক্তরাষ্ট্র বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আওতায় আসে ১৯৩০-এর দশকে। কিন্তু নাভাহো নেশনে প্রথম বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শুরু হয় ১৯৬০-এর দিকে। এখনো অনেক এলাকা রয়ে গেছে অন্ধকারে।

নাভাহো ট্রাইবাল ইউটিলিটি অথরিটির (NTUA) মুখপাত্র ডিনিস বেসেন্তি বলেন, “এই অঞ্চলটা এতদিন অবহেলিত ছিল। অনেকেই জানতে চায়—যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের ভেতরে কীভাবে এখনো কেউ বিদ্যুৎ ছাড়াই থাকে?”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ২০১৯ সালে ‘লাইট আপ নাভাহো’ নামে একটি প্রকল্প চালু করা হয়। এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিদ্যুৎ কোম্পানির কর্মীরা প্রতি বছর কয়েক সপ্তাহ নাভাহো অঞ্চলে গিয়ে কাজ করেন।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ১,০০০ পরিবারের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। ২০১৯ সালের পর থেকে মোট ৫,০০০ পরিবার পেয়েছে নতুন সংযোগ। তবে বাকি ১০,০০০ পরিবারকে সংযুক্ত করতে আরও অন্তত ২০ বছর সময় লাগবে—যদি অতিরিক্ত অর্থ না আসে।

তাপপ্রবাহে মৃত্যু, দীর্ঘ অপেক্ষার ক্ষোভ

৫৪ বছর বয়সী এলবার্ট ইয়াজ্জি টিউবা সিটিতে থাকেন। তাঁর মোবাইল হোমটি গ্রীষ্মে চুল্লির মতো গরম হয়ে ওঠে। অতীতে তাঁর পরিবারের একজন সদস্য গরমে হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন।

“আগে গরম ভালো লাগত। এখন বয়স বাড়ায় শরীর আর সহ্য করতে পারে না,” তিনি বলেন।

সপ্তাহখানেক হলো তাঁর বাড়িতে বিদ্যুৎ এসেছে। তিনি পুরোনো তিনটি বাতিল কুলার জোড়াতালি দিয়ে একটা কার্যকর "সোয়াম্প কুলার" বানিয়েছেন। এখন তিনি ঘরে বসেই আরামে টিভি দেখতে পারেন, ঠাণ্ডা পানীয় পান করতে পারেন।

তবে অনেকেই এখনো সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত।

৪২ বছর বয়সী গিলবার্টা কোর্তেস বলেন, “আমার মা-বাবাকে তরুণ বয়সে বিদ্যুতের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কোনোদিন তা বাস্তবায়িত হয়নি। এখন আমার বাড়ির সামনে খুঁটি বসেছে, কিন্তু আমি এখনো সন্দিহান। অনেক প্রতিশ্রুতি শুনেছি, বাস্তব খুব কম দেখেছি। আমি এখনো রাগান্বিত।”

-হাসানুজ্জামান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ