জলবায়ু পরিবর্তন

দুধ কমাচ্ছে গরম: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে খামারে

পরিবেশ ও জলবায়ু ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৬ ১৫:৪৭:৪৭
দুধ কমাচ্ছে গরম: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে খামারে

বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান তাপদাহ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দুগ্ধ উৎপাদন খাতে বড় ধরনের হুমকি তৈরি হয়েছে—সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে। ইসরায়েলের জেরুজালেম ও তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এই গবেষণাটি জানিয়েছে, অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার প্রভাবে দুধ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস ঘটে।

দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি গরুর তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন, মাত্র এক ঘণ্টার জন্য যদি 'ওয়েট বাল্ব' তাপমাত্রা—যা তাপমাত্রা ও আদ্রতার সমন্বিত সূচক—২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকে, তাহলে প্রতিটি গরুর দৈনিক দুধ উৎপাদন ০.৫% হ্রাস পায়। শুধু তা-ই নয়, অতিরিক্ত গরমের প্রভাব একদিনেই শেষ হয় না; গরমের দিনের ১০ দিন পরেও দুধ উৎপাদনে প্রভাব পড়ে।

প্রতিবেদনটি বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের গড় দুধ উৎপাদন প্রতিদিন গড়ে ৪% হ্রাস পেতে পারে। এই ক্ষতি সবচেয়ে বেশি অনুভব করবে সেই ১৫ কোটি পরিবার, যাদের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে দুধ উৎপাদনের ওপর।

বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এটি এক গভীর সতর্কবার্তা। কারণ আগামী এক দশকে বিশ্বের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির অর্ধেকের বেশি এই অঞ্চল থেকেই আসবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে, এই অঞ্চলটি দ্রুতবর্ধমান তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতেও রয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহারে বিশ্ব উষ্ণায়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে, যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে গবাদি পশু এবং দুধ উৎপাদনে।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, গবাদিপশু মানবসৃষ্ট মিথেন গ্যাস নিঃসরণের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী, যা কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতোই জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে।

ইতোমধ্যে অনেক কৃষক বিশেষ করে ইসরায়েলে বিভিন্ন অভিযোজন পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। প্রায় সব খামারে গরুদের জন্য ছায়া নিশ্চিত করা, পানি ছিটানোর ব্যবস্থা, এবং শীতলকরণ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে গবেষণা বলছে, তাপমাত্রা যখন ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়, তখন এসব ব্যবস্থা মাত্র ৪০% পর্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

গবেষণার প্রধান লেখক ক্লেয়ার পালান্দ্রি বলেন, “শুধু গরু ঠান্ডা রাখলেই হবে না, তাদের ওপর যে মানসিক চাপ থাকে—যেমন দীর্ঘদিন আবদ্ধ থাকা বা বাচ্চাদের কাছ থেকে আলাদা করা—সেগুলোও কমাতে হবে। কারণ মানসিক চাপে গরুর তাপ সহনশীলতা কমে যায় এবং দুধ উৎপাদন আরও হ্রাস পায়।”

বিশ্বব্যাপী টেকসই কৃষিনীতির অংশ হিসেবে, জলবায়ু সহনশীল ও প্রাণীকল্যাণকেন্দ্রিক সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

-এম জামান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ