ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ড: আদালতে ছাত্রদল নেতার স্বীকারোক্তি

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১২ ১৭:৩২:৩৪
ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ড: আদালতে ছাত্রদল নেতার স্বীকারোক্তি

ঢাকার পুরান শহরের ঘনবসতিপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী এলাকাগুলোর একটি রজনী ঘোষ লেনে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড নগরবাসীর মধ্যে তীব্র শোক, আতঙ্ক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। মো. সোহাগ (৪৩) নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যার ঘটনায় ছাত্রদল নেতা তারেক রহমান রবিন অস্ত্র মামলায় আদালতে স্বেচ্ছায় দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। শনিবার (১২ জুলাই) বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ গিয়াসের আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন তিনি। এরপর বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানা রবিনের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন। রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে রবিন নিজেই দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত তারেক রহমান রবিন রাজধানীর চকবাজার থানার ৩০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। মো. সোহাগকে হত্যার ঘটনায় রবিন ও তার সহযোগী মাহমুদুল হাসান মহিনকে গত বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর কোতোয়ালি থানায় দুটি পৃথক মামলা দায়ের হয় একটি হত্যা মামলা এবং অন্যটি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে। হত্যা মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিনকে পাঁচদিন এবং অস্ত্র মামলায় রবিনকে দুইদিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

নিহত মো. সোহাগ কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মিটফোর্ড এলাকার ৪ নম্বর রজনী ঘোষ লেনে ভাঙারির ব্যবসা করতেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটসংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে কয়েকজন দুর্বৃত্ত তার ওপর হামলা চালায়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একজন তার মাথায় পাথর নিক্ষেপ করলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়ে যান। স্থানীয়দের মতে, মাথায় প্রচণ্ড আঘাতের ফলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তা ভাইরাল হয়ে যায় এবং সর্বমহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফেসবুকে অসংখ্য মানুষ এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানান এবং অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তোলেন।

এই নির্মম হত্যাকাণ্ড পুরান ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটনের প্রবণতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয়রা জানান, মিটফোর্ড ও এর আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধের সংস্কৃতি দীর্ঘদিন ধরেই চলমান, তবে এভাবে প্রকাশ্যে পাথর ছুঁড়ে হত্যা সমাজকে আরও ভীত করে তুলেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য বিবেচনায় তদন্ত এগিয়ে চলেছে এবং প্রয়োজনে আরও আসামিদের গ্রেপ্তারের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

এ ঘটনায় ছাত্র রাজনীতির নেতৃবৃন্দের অপরাধে সম্পৃক্ততা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। একদিকে সংগঠনের নেতা হয়ে দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও অপরদিকে সহিংসতা ও অস্ত্র মামলায় জড়িত থাকায় রাজনৈতিক আদর্শের অবক্ষয় স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও, অতীতের অভিজ্ঞতায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয় রয়ে গেছে।

মো. সোহাগের মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তির জীবনহানি নয়, বরং এটি পুরান ঢাকার রাজনৈতিক অপরাধ ও দখল-ভিত্তিক ব্যবসার এক ভয়ংকর প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অবস্থায় রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব এখন অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক পরিচয়কে দায়মুক্তির ঢাল হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করা। অন্যথায় এই ধরনের সহিংসতা বারবার ফিরে আসবে, যা শুধু কোনো একটি এলাকার নয়, বরং গোটা সমাজের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য বড় হুমকি হয়ে থাকবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ