ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের ১৫০ কোটি ডলারের সামরিক ঘাঁটি প্রকল্প

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১০ ১৪:১০:৪১
ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের ১৫০ কোটি ডলারের সামরিক ঘাঁটি প্রকল্প

যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের অভ্যন্তরে একাধিক সামরিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে প্রায় ১৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। এই বিনিয়োগের আওতায় বিমানঘাঁটি, হেলিকপ্টার হ্যাঙ্গার, গোলাবারুদ সংরক্ষণাগার, কমান্ড সেন্টার এবং ইসরায়েলের বিশেষ নৌ-কমান্ডো ইউনিট শায়েতেত ১৩-এর জন্য একটি আধুনিক সদর দপ্তর গড়ে তোলা হচ্ছে। বুধবার (৯ জুলাই) ইরানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রকল্পগুলো সরাসরি তত্ত্বাবধান করছে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই, যা সাধারণ সামরিক সহায়তা কর্মসূচির তুলনায় এক নতুন কৌশলগত মাত্রা নির্দেশ করে। এই নির্মাণ কার্যক্রম ২০১৬ সালে ওবামা প্রশাসনের সময় নির্ধারিত বার্ষিক ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা চুক্তির অংশ হিসেবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এটি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলকে সরবরাহ করা সিএইচ-৫৩কে হেভি লিফ্ট হেলিকপ্টার এবং কেসি-৪৬ পেগাসাস ট্যাংকার বিমান ব্যবস্থার জন্য অবকাঠামোগত সহায়তা। এ ছাড়াও ৯০০ মিলিয়ন ডলারের পৃথক এক টেন্ডারের মাধ্যমে ইসরায়েলের বর্ধিত এফ-১৫আইএ এবং স্টেলথ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বহরের জন্য নতুন সুবিধাদি নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্র শুধু অস্ত্র সরবরাহ করছে না, সেই অস্ত্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নির্মাণেও সরাসরি জড়িত।

ওয়াশিংটনের এই বিপুল সামরিক বিনিয়োগ এমন সময়ে সামনে এলো, যখন মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক ১২ দিনের আগ্রাসনের ঠিক আগেই এই প্রকল্পগুলোর নকশা ও প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছিল। যদিও এই প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সরাসরি ওই আগ্রাসনের সম্পর্ক নেই বলে দাবি করা হচ্ছে, তবু সময়কাল এবং কৌশলগত অবস্থান বিবেচনায় বিষয়টি নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এই সামরিক সহায়তা শুধুমাত্র ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করার অংশ। তবে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা এই প্রচেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার কৌশল বলেও দেখছেন। ইসরায়েলে সামরিক উপস্থিতি আরও ঘনিষ্ঠ করায় যুক্তরাষ্ট্র সেখানে কেবল ‘সহযোগী’ নয়, বরং একটি ‘স্থিতিশীল সামরিক ঘাঁটি’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে।

এই বিশাল বিনিয়োগ এমন এক সময় সামনে এলো, যখন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনা বাড়ছে। বিশেষ করে, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থান এবং ইরানের প্রতি প্রকাশ্য শত্রুতাপূর্ণ নীতির কারণে অঞ্চলজুড়ে অস্থিরতা বাড়ছে। প্রেস টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সামরিক অবকাঠামোগত সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইসরায়েলকে আঞ্চলিক আধিপত্যে সহায়তা দেওয়াই মূল লক্ষ্য।

বিশ্লেষকদের মতে, এই বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে ‘কৌশলগত অদ্ভুত সম্পর্কের’ নতুন দৃষ্টান্ত। এটি শুধু অস্ত্র বাণিজ্যের ক্ষেত্র নয়, বরং সরাসরি সামরিক অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রভাব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক বিনিয়োগের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্বজুড়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চললেও এটুকু পরিষ্কার যে, এটি কেবল ইসরায়েলের নিরাপত্তা জোরদার করার প্রচেষ্টা নয়। বরং মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি সামরিক প্রভাব ও ভূ-রাজনৈতিক প্রতিপত্তি বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র যে কৌশল নিচ্ছে, এই প্রকল্প তারই বহিঃপ্রকাশ। আর তাতে ইসরায়েলের সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়ে উঠছে অস্ত্র, প্রযুক্তি ও সামরিক যৌথ পরিচালনার এক গভীর ও বহুমাত্রিক বলয়।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ