যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে চীনের এআই কৌশল

বিশ্বের প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যৎ আজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) উপর নির্ভরশীল। এই বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এক নতুন ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে যা কোনো প্রচলিত অস্ত্র প্রতিযোগিতার চেয়ে কম নয়। তবে এ লড়াইয়ের কৌশল, গতি ও দৃষ্টিভঙ্গি দুই পরাশক্তির মধ্যে ভিন্নতর।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এআই উন্নয়নকে সরাসরি ‘চীনের সঙ্গে অস্ত্র প্রতিযোগিতা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র থেমে যায়, তাহলে আমরা চীনা-নিয়ন্ত্রিত এআই-এর দাসে পরিণত হবো।” এই মন্তব্য শুধু প্রযুক্তির দৌড় নয়, বরং রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ইস্যুরও প্রতিফলন।
যুক্তরাষ্ট্রের এআই নীতিতে আধিপত্য ধরে রাখার মূল স্তম্ভ হচ্ছে বিপুল বিনিয়োগ, নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে প্রযুক্তি জায়ান্টদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব। ওপেনএআই, মাইক্রোসফট, এএমডি এবং কোরওয়েভের মতো শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা হালকা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার পক্ষে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে লবিং করেছেন।
এদিকে, ১৫ মে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে একটি এআই সহযোগিতা চুক্তি করেন, যেটিকে তিনি ‘যুক্তরাষ্ট্রের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আধিপত্য নিশ্চিতের একটি মাইলফলক’ হিসেবে আখ্যা দেন।
প্রযুক্তি কাঠামো নির্মাণেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট বিশাল। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটি এআই মডেল পরিচালনার লক্ষ্যে ডেটা সেন্টার নির্মাণে এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করতে যাচ্ছে।
চীনের ভিন্নমুখী কৌশল: বাস্তব প্রয়োগে অগ্রাধিকার
যুক্তরাষ্ট্র যখন এআই গবেষণা ও নিয়ন্ত্রণে মনোযোগী, তখন চীন এর বাস্তব প্রয়োগকে কেন্দ্র করে একটি ভিন্ন রূপরেখা বাস্তবায়ন করছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বলেন, “এআইকে পারমাণবিক অস্ত্রের মতো ভয়ংকর হিসেবে না দেখে, বিদ্যুতের মতো প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি হিসেবে দেখা উচিত।”
এ লক্ষ্যেই চীন ‘এআই+’ নামে একটি নতুন কর্মসূচি চালু করেছে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে শিল্প, উৎপাদন, এবং ভোক্তা পর্যায়ে এআই যুক্ত করে প্রযুক্তিকে বাস্তব জীবনের অংশ করার চেষ্টা চলছে। এটি মূলত এক দশক আগের ‘ইন্টারনেট+’ নীতিরই উন্নত সংস্করণ, যার মাধ্যমে চীন একটি শক্তিশালী ডিজিটাল অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি করেছিল।
চীনের আরেকটি ব্যতিক্রমী কৌশল হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বের এআই প্রযুক্তির সমতুল্য উদ্ভাবন এবং তা ওপেন সোর্স করে সবার জন্য উন্মুক্ত করা। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চীনা প্রতিষ্ঠান ডিপসিক এমন একটি ভাষা মডেল প্রকাশ করে, যার কার্যকারিতা ওপেনএআই-এর এক মডেলের সঙ্গে তুলনীয়। এর গঠন কাঠামো উন্মুক্ত করে চীন দেখিয়ে দেয় ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতা কেবল মডেল তৈরিতে নয়, বরং বাস্তব প্রয়োগ ও ব্যবহারিক দক্ষতায় হবে।
চীন এআই গবেষণায় বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গিও গ্রহণ করছে। কিছু সরকারি গবেষণায় এআই-কে মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে সংযুক্ত করার বা চিত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাস্তব জগতের সঙ্গে যোগাযোগ সক্ষম এমন প্রযুক্তির উন্নয়ন চলছে যা পশ্চিমা কাঠামোর চেয়ে একেবারেই পৃথক।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) এক প্রতিবেদনে জানায়, আগামী এক দশকে এআই প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি ৫.৬ শতাংশ এবং চীনের জিডিপি ৩.৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ প্রযুক্তি-নির্ভর সেবা খাত এ বৃদ্ধির চালিকাশক্তি হলেও, চীনের তুলনামূলক ছোট সেবা খাত ও সীমিত উৎপাদনশীলতা এ বৃদ্ধিকে কিছুটা শ্লথ করতে পারে।
তবে এটি স্পষ্ট, চীন বাস্তবতাভিত্তিক ও শিল্প-ভোক্তা পর্যায়ের প্রয়োগে মনোযোগী একটি কৌশল নিয়ে দ্রুত এগিয়ে চলেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিযোগিতাকে নিরাপত্তা ও আধিপত্যের প্রেক্ষাপটে দেখছে।
-সোহাগ, নিজস্ব প্রতিবেদক
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেয়ারবাজারে গেম্বলারদের দৌরাত্ম্য: আস্থা ফেরাতে চাই কঠোর শাস্তি ও কাঠামোগত সংস্কার
- বাংলাদেশে সেনা-সরকার উত্তেজনা ও ‘কু’ এর গুঞ্জন: নেপথ্যে কি?
- নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে কারা টিকে থাকবে, কারা হারিয়ে যাবে?
- জবি’র সাবেক অধ্যাপক আনোয়ার বেগম হত্যাচেষ্টা মামলায় সুত্রাপুরে আটক
- সেনাপ্রধানের বক্তব্য, জুলকারনাইন তাতে যা বললেন!
- তারকা পরিচিতি: রক্ষাকবচ না কি সমাজবিমুখ অব্যাহতি?
- নাহিদের স্পষ্ট বার্তা: এনসিপিতে নেই দুই উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ
- বিএনপির সালাউদ্দিনকে নিয়ে কি লিখলেন প্রেস সচিব শফিকুল?
- সড়ক দুর্ঘটনায় সেনা কর্মকর্তা নিহত
- বাংলাদেশে আন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে মৌলিক অধিকার হুমকিতে
- মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কেন অনিশ্চিত
- ডিসেম্বরে নির্বাচন চান সেনাপ্রধান
- "ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সব রাজনৈতিক দল অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে"
- জেনে নিন ঈদের ছুটিতে কোন কোন এলাকায় ব্যাংক খোলা থাকবে
- ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের পর চীনের পুরস্কার