ফের আলোচনায় বসবে ঢাকা-ওয়াশিংটন

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১২ ১২:৩৯:২১
ফের আলোচনায় বসবে ঢাকা-ওয়াশিংটন

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কছাড় নিয়ে চলমান আলোচনায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু অমীমাংসিত থেকে গেছে। ফলে তিন দিনব্যাপী বৈঠকে পূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। দুই দেশের প্রতিনিধি দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে নিজ নিজ দেশের আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনার পর আবারও যৌথভাবে আলোচনায় বসবে। বাংলাদেশ দূতাবাস শনিবার (১২ জুলাই) ওয়াশিংটন থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানায়।

তিন দিনের আলোচনায় অংশ নেয়া বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। সঙ্গে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ তৈয়ব, যারা ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। এ ছাড়া আলোচনা পর্যবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও অংশ নেন।

দ্বিতীয় দফার আলোচনার তৃতীয় ও শেষ দিনে কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হলেও, কয়েকটি টেকনিক্যাল ও নীতিগত সিদ্ধান্তে দুই পক্ষের মধ্যে মতানৈক্য থেকেই যায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শুল্কছাড়ের ক্ষেত্রে স্পষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি নিশ্চয়তা চাওয়া হয়, বিশেষ করে তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল ও চামড়াজাত পণ্যে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র পরিবেশগত মানদণ্ড, শ্রম অধিকার, পণ্যের উৎসনির্ধারণের নিরীক্ষা এবং দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা ইস্যুকে প্রাধান্য দেয়। এতে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা কিছুটা জটিল হয়ে পড়ে।

উল্লেখ্য, গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র ৫৭টি দেশের পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, যার মধ্যে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুল্কহার নির্ধারিত হয় ৩৭ শতাংশ। আলোচনার মধ্যেই ৯০ দিনের জন্য সেই শুল্ক কার্যকরের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে গত ৭ জুলাই হোয়াইট হাউস থেকে নতুন ঘোষণা আসে—বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের পণ্যের ওপর পুনরায় শুল্ক আরোপ করা হবে এবং এবার হার নির্ধারণ করা হয় ৩৫ শতাংশ।

এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে তিন দিনের আলোচনা শুরু হয়, যা শেষ হয় শুক্রবার। আলোচনার ফলাফল অনুযায়ী, দুই দেশ নতুন করে একটি সময় নির্ধারণ করে ভার্চুয়ালি এবং সামনাসামনি আলোচনায় বসবে। আশা করা হচ্ছে, এই আলোচনার মধ্য দিয়ে কোনো কার্যকর সমঝোতায় পৌঁছানো যাবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এ বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, আলোচনা অব্যাহত থাকলে এবং দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ বিবেচনায় রাখা হলে একটি ‘উইন-উইন’ ফলাফলে পৌঁছানো সম্ভব হবে। তারা জানান, প্রয়োজনে বাংলাদেশ পক্ষ আলোচনায় আবার যুক্তরাষ্ট্রে যাবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাতগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ হলে দেশের শিল্প খাত বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প চরম চাপে পড়বে। ফলে এই আলোচনাকে কেবল অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের বাণিজ্য স্বার্থ রক্ষায় বর্তমান সরকারের কৌশলগত তৎপরতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষার মধ্য দিয়ে একটি ইতিবাচক ও দীর্ঘস্থায়ী সমঝোতার পথ খুঁজে পাওয়ার ওপরই নির্ভর করছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি শিল্পের ভবিষ্যৎ।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ