২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা: সুপ্রিম কোর্টে বড় লড়াই মঙ্গলবার

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২৬ ১১:১২:০৬
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা: সুপ্রিম কোর্টে বড় লড়াই মঙ্গলবার

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন) শুনানির দিন ধার্য হয়েছে আগামী মঙ্গলবার (২৭ মে)। সোমবার (২৬ মে) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই দিন নির্ধারণ করেন।

এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্যান্য আসামিকে হাইকোর্ট খালাস প্রদান করে। গত বছরের ১ ডিসেম্বর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আলোচিত রায় দেন, যা পরে ১৯ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ রূপে প্রকাশিত হয়।

এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের অনুমতির আবেদন জানায়। চলতি বছরের ১৩ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত আবেদনটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠায়। শুনানির প্রথম দিন ১৫ মে হলেও সেটি মুলতবি করে আজকের দিনে স্থানান্তর করা হয়।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় দলের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন এবং আহত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাসহ শতাধিক নেতা-কর্মী। এই ঘটনাকে রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম ঘৃণিত ও সংগঠিত সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পিন্টু, হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ মোট ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। আরও ১১ জন সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

প্রাথমিকভাবে মামলার অভিযোগপত্রে ২২ জনকে আসামি করা হলেও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। সেই তদন্ত শেষে আরও ৩০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ফলে আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জনে। তবে এই ৫২ জনের মধ্যে তিনজনের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় এখন কার্যত আসামি ৪৯ জন।

এই মামলার হাইকোর্টের রায়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে আসে। যেমন, অপরাধ সংঘটনের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও হাইকোর্ট কিছু আসামিকে খালাস দিয়েছেন যা রাষ্ট্রপক্ষ "বিচারিক বিচ্যুতি" হিসেবে উল্লেখ করেছে। এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সামনে সেই রায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এই মামলাটি শুধু একটি সন্ত্রাসী হামলার বিচার নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় গভীর প্রভাব ফেলে আসছে। আওয়ামী লীগ সরকারের দাবি অনুযায়ী, এটি ছিল একটি ‘রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট হত্যাকাণ্ড’। অন্যদিকে, বিএনপি বরাবরই এই মামলাকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে আখ্যায়িত করে আসছে।

মঙ্গলবারের শুনানির মধ্য দিয়ে এই বহুল আলোচিত মামলার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে নতুন দিক উন্মোচিত হতে পারে। রাষ্ট্রপক্ষ যদি আপিলের অনুমতি পায়, তবে মামলাটি পূর্ণাঙ্গভাবে আপিল বিভাগে শুনানি হবে এবং উচ্চ আদালতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে চূড়ান্ত রায় আসবে যা দেশের আইনি ও রাজনৈতিক ইতিহাসে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত