ইউক্রেনের বিতর্কিত সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা খুন

স্পেনের মাদ্রিদের একটি উপশহরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে ইউক্রেনের সাবেক প্রভাবশালী ও বিতর্কিত কর্মকর্তা আন্দ্রি পোর্টনভকে। গত কিছুদিন আগে ঘটেছে এই হত্যাকাণ্ড, যা ইউক্রেনে বিস্ময় সৃষ্টি করলেও তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোকের বহিঃপ্রকাশ ছিল না বললেই চলে। ঘটনার সময় তিনি তাঁর সন্তানদের একটি মার্কিন স্কুলে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি পার্ক করতে যাচ্ছিলেন। তখনই পার্কিংয়ে তাঁকে একাধিকবার গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলে ব্যায়ামের পোশাকে উপুড় হয়ে পড়ে থাকেন তিনি। ইউক্রেনীয় সংবাদমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের মতে, এই দৃশ্য যেন রুশপন্থা, দুর্নীতি ও বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহারকারী এক যুগের প্রতীকী অবসান।
পোর্টনভ ছিলেন ইউক্রেনের শেষ রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া টিমোশেঙ্কোর সঙ্গে কাজ করার পর নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইয়ানুকোভিচের দলে যোগ দেন তিনি এবং পরে প্রেসিডেন্টের দপ্তরের প্রথম নির্বাহী প্রধান হন। একই সময়ে তিনি ২০১২ সালে জাতীয় ফৌজদারি বিধিমালা প্রণয়ন করেন, যা আজও বিতর্কিত। সমালোচকদের মতে, এই আইনি সংস্কার কার্যত ছিল এক প্রকার রাজনৈতিক ও বিচারিক নিয়ন্ত্রণ কায়েমের কৌশল, যা দুর্নীতিকে ঢেকে রাখতে সাহায্য করেছে।
পোর্টনভের উত্থান ও ক্ষমতার প্রসারে তাঁর আইনি দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও, বহু পর্যবেক্ষক মনে করেন, তিনি ছিলেন একটি ‘পচে যাওয়া ব্যবস্থা’র মাস্টারমাইন্ড। ডেজিউর ফাউন্ডেশনের প্রধান আইন বিশেষজ্ঞ মিখাইলো ঝেরনাকভ বলেন, পোর্টনভ একটি দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারব্যবস্থা পুনর্গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন, যার মাধ্যমে সরকারের বেআইনি কর্মকাণ্ড আড়াল এবং রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারের পথ সুগম হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাঁর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, কারণ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ব্যক্তিগত স্বার্থে আদালতের রায় কিনে নেওয়া এবং অনুগত বিচারক নিয়োগ করার।
তাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগগুলোর একটি হলো সাংবাদিক দমন। পোর্টনভ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলার আশ্রয় নিয়েছিলেন, বিশেষ করে যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সম্পদ জোগাড় বা রুশ সংযোগ নিয়ে তদন্তমূলক প্রতিবেদন করতেন। ইউক্রেনের মাস ইনফরমেশন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অক্সানা রোমানিউক জানান, পোর্টনভ শুধু আইনি হুমকি নয়, যৌন নিপীড়নের হুমকিও দিতেন নারী সাংবাদিকদের। তাঁর বিরুদ্ধে যখনই কোনো অভিযোগ-প্রমাণসহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হতো, তখন তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতেন এবং সংবাদমাধ্যমকে ‘ভুয়া খবর’ প্রচারের দায়ে অভিযুক্ত করতেন।
২০১৪ সালে মাইদান বিপ্লবের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং পোর্টনভ পালিয়ে মস্কোতে আশ্রয় নেন। পরে অনুসন্ধানী সাংবাদিক ম্যাক্সিম সাভচুক মস্কোয় পোর্টনভের বিশাল সম্পত্তির অনুসন্ধান করেন। তিনি জানান, পোর্টনভ তাঁকে এবং তাঁর মাকে নিয়ে প্রকাশ্যে অপমানজনক মন্তব্য করেছিলেন। সাভচুকের ভাষায়, পোর্টনভ ছিলেন "অত্যন্ত প্রতিহিংসাপরায়ণ"।
এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা রয়ে গেছে। কে বা কারা তাঁকে হত্যা করল এবং কেন, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। অনেকের মতে, এই হত্যাকাণ্ড ছিল প্রতিশোধমূলক, আবার অনেকে বলছেন এটি হতে পারে রাজনৈতিক শক্তি পুনর্বিন্যাসের অংশ। তবে ইউক্রেনীয়দের অনেকেই মনে করছেন, এটি ছিল এমন একজন ব্যক্তির পরিণতি যিনি দীর্ঘদিন ধরে একটি দমনমূলক ও দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে ইউক্রেনে একটি দীর্ঘকালীন বিতর্কিত অধ্যায় শেষ হলো, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এই ব্যবস্থার উত্তরাধিকার কেমন হবে?
ইমন, নিজস্ব প্রতিবেদক
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে চার্জ দাখিল, বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার
- বাহরাইনেরমানামায় বিএনপির সাংগঠনিক পুনর্গঠন, নেতৃত্বে আক্তার হোসেন
- বাহরাইনে জাতীয়তাবাদী শক্তির পুনর্জাগরণ: গ্যালালী শাখায় নতুন নেতৃত্ব
- চীন না ভারত? উন্নয়ন না আনুগত্য? বুলেট ট্রেন বলছে স্পষ্ট জবাব
- অবশেষে বিসিবি সভাপতি ফারুককে নিয়ে মুখ খুললেন আসিফ
- বিশ্বশক্তির নজর এখন বাংলাদেশে: খনিজ ভাণ্ডারের নতুন মানচিত্র
- তারেক-ইউনুস উত্তপ্ত ফোনালাপ: যা জানা গেল
- হালদা নদীতে ডিম ছাড়ল রুই জাতীয় মা মাছ, সংগ্রহ প্রায় ১৪ হাজার কেজি নিষিক্ত ডিম
- নতুন বিসিবি সভাপতিবুলবুলের কাছে আশরাফুলের চাওয়া
- ঈদের দিন বৃষ্টি হবে কি?
- চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন ভোর: দক্ষিণ এশিয়ার তেলের ‘রাজসিংহাসন’ দখলের পথে বাংলাদেশ?
- ভারতের গর্ব এস-৪০০ ধ্বংস: বাস্তবতা নাকি প্রচারযুদ্ধ?
- ধ্বংস থেকে নেতৃত্ব: ৫ আগস্ট থেকে যেভাবে শুরু হলো অর্থনীতির পুনর্জাগরণ
- ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় হঠাৎ বিরতি: যুক্তরাষ্ট্র কি নতুন কৌশল নিচ্ছে?
- ধর্ম-সংস্কৃতি উপেক্ষা নয়: সংবিধান সংশোধনে ১৮০ শিক্ষকের সরব প্রতিবাদ