‘আশা আর মরীচিকা’: গাজার মানবিক বিপর্যয়ের সাক্ষ্য দিল শতাধিক সংস্থা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৩ ১০:৪৫:৫০
‘আশা আর মরীচিকা’: গাজার মানবিক বিপর্যয়ের সাক্ষ্য দিল শতাধিক সংস্থা
ছবিঃ সংগৃহীত

গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে বুধবার ১০০-রও বেশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও সাহায্য সংস্থা সতর্ক করেছে, সেখানে “গণদুর্ভিক্ষ” দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত ইউরোপ সফরে যাচ্ছেন সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি এবং একটি কার্যকর সহায়তা করিডোর নিয়ে আলোচনা চালাতে।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েই চলেছে, বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন গাজা উপত্যকায় ২১ মাসের দীর্ঘ যুদ্ধের পর দুই কোটিরও বেশি মানুষ চরম খাদ্যসংকট ও জীবনযাত্রার মৌলিক চাহিদার ঘাটতির মুখে পড়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ এখন পর্যন্ত সীমাহীন মানবিক ক্ষতির দিকে ঠেলে দিয়েছে ফিলিস্তিনিদের।

জাতিসংঘ মঙ্গলবার জানিয়েছে, মে মাসের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে গঠিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন চালু হওয়ার পর থেকে, খাদ্য সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টায় ১,০০০-র বেশি ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলি বাহিনী হত্যা করেছে। এই ফাউন্ডেশন কার্যত জাতিসংঘের বিদ্যমান মানবিক সহায়তা ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে নতুন বিতরণ কাঠামো তৈরি করে।

১১১টি সাহায্য সংস্থার যৌথ বিবৃতিতে — যার মধ্যে রয়েছে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (MSF), সেভ দ্য চিলড্রেন, অক্সফাম প্রভৃতি — জানানো হয়েছে, “আমাদের সহকর্মীরা ও যাদের আমরা সহায়তা করি, তারা একে একে ক্ষয়ে যাচ্ছেন। খাদ্য নেই, আশ্রয় নেই, চিকিৎসা নেই — শুধু বেঁচে থাকার লড়াই।”

তারা অবিলম্বে একটি সমঝোতামূলক যুদ্ধবিরতি, সব স্থল সীমান্ত খুলে দেওয়া এবং জাতিসংঘ-নেতৃত্বাধীন মানবিক সহায়তা ব্যবস্থার মাধ্যমে অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তাদের দূত স্টিভ উইটকফ ইউরোপ সফরে যাচ্ছেন গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে এবং পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্য সফরের সম্ভাবনাও রয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র জানান, “উভয় পক্ষ সম্মত একটি যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক করিডোর নিয়ে আশাবাদী।”

তবে বাস্তবতা ভিন্ন। ইসরায়েল দাবি করে, তারা সাহায্য প্রবেশ করতে দিচ্ছে, কিন্তু হামাস এসব খাদ্য সহায়তা জোরপূর্বক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে উচ্চ দামে বিক্রি করছে এবং সহায়তা নিতে আসা সাধারণ মানুষদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।

'আশা আর ভাঙনের মধ্যে ফিলিস্তিনিরা'

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সীমান্তের একপাশে টনকে টন সহায়তা পণ্য গুদামজাত থাকলেও তা গাজার ভেতরে পৌঁছাতে পারছে না। এমনকি যেটুকু পৌঁছেছে, সেটিও বিতরণে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তারা বলেন, “ফিলিস্তিনিরা যেন এক মরীচিকার পেছনে ছুটছে। সহায়তার আশা জাগে, আবার তা হারিয়ে যায়। এটি শুধু শারীরিক কষ্ট নয়, মানসিক নির্যাতনও।”

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ পরিস্থিতিকে সাম্প্রতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় বলে আখ্যা দিয়েছেন।

গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতালের প্রধান মঙ্গলবার জানান, গত তিন দিনে শুধুমাত্র অপুষ্টিজনিত কারণে ২১ জন শিশু মারা গেছে। এটি গাজার ভয়াবহ মানবিক অবস্থা আরও স্পষ্ট করে তোলে।

স্থবির কূটনৈতিক আলোচনা, নতুন করে শান্তি অনিশ্চিত

কাতারে ৬ জুলাই থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে শান্তি আলোচনার চেষ্টা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র, মিসর এবং কাতার মধ্যস্থতা করলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে এই আলোচনা কার্যত স্থবির অবস্থায়।

এদিকে বিশ্বের ২০টিরও বেশি পশ্চিমা দেশ যৌথভাবে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে, কারণ গাজায় “মানবিক বিপর্যয় সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে” বলে তারা মনে করছে।

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি অভিযানে এ পর্যন্ত ৫৯,১০৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। অপরদিকে, হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১,২১৯ জন, যাদের বেশিরভাগও ছিলেন সাধারণ মানুষ।

-হাসানুজ্জামান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ