চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ড্যাম, তীব্র প্রতিক্রিয়া দিল ভারত ও বাংলাদেশ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৩ ১০:১৪:৩৭
চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ড্যাম, তীব্র প্রতিক্রিয়া দিল ভারত ও বাংলাদেশ

চীন তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে, যার ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশটির দাবি, এটি হবে বিশ্বের বৃহত্তম হাইড্রোপাওয়ার প্রকল্প, যা প্রতি বছর যুক্তরাজ্যের সমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে। তবে এই বিশাল প্রকল্পকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও বাংলাদেশে দেখা দিয়েছে গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা। কারণ, এই প্রকল্পটি নির্মিত হচ্ছে ইয়ারলুং ঝাংবো নদীর ওপর, যা ভারত ও বাংলাদেশে প্রবেশের পর ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত।

এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পটি তিব্বতের মালভূমি থেকে নেমে আসা ইয়ারলুং ঝাংবো নদীর উপর পাঁচটি বড় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটির আওতায় প্রথম পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে ২০৩০ সালের প্রথমার্ধেই। যদিও চীন এখনো পুরো প্রকল্পের বিস্তারিত পরিকল্পনা ও পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু প্রকাশ করেনি, তবে তাদের দাবি অনুযায়ী এটি হবে পরিবেশবান্ধব ‘ক্লিন এনার্জি’ প্রকল্প এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।

ভারত ও বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ এবং নীতিনির্ধারকেরা প্রকল্পটি নিয়ে তথ্যের স্বচ্ছতার অভাব ও সীমান্তবর্তী এলাকার প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। ব্রহ্মপুত্র নদী ভারত ও বাংলাদেশে কৃষি, জলবিদ্যুৎ, পানীয় জল এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর নির্ভরশীল কোটি মানুষের জন্য একটি অপরিহার্য উৎস। ভারতের অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ইতোমধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, চীনের বাঁধ নির্মাণের ফলে রাজ্যের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ৮০ শতাংশ নদী শুকিয়ে যেতে পারে এবং আসাম রাজ্যে ভয়াবহ বন্যার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি, নদীর সঙ্গে আসা পলিমাটি হ্রাস পেলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই ধরনের শঙ্কা বিরাজ করছে। ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশে প্রবেশ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেচ ও জীবনধারণের উৎস হিসেবে কাজ করে। উপরিভাগে বড় বাঁধ নির্মাণ এবং পানিপ্রবাহে হস্তক্ষেপ হলে নিম্নপ্রবাহের বাংলাদেশে পানির ঘাটতি, কৃষির উপর নেতিবাচক প্রভাব ও নদীভাঙন ভয়াবহ আকার নিতে পারে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই প্রকল্প সম্পূর্ণভাবে তাদের সার্বভৌম এলাকার ভেতরে হওয়ায় তারা তাদের ইচ্ছামতো উন্নয়ন করতে পারে। তারা দাবি করেছে, এই হাইড্রোপাওয়ার প্রকল্প হবে সবুজ জ্বালানির উৎস এবং বন্যা মোকাবেলায় কার্যকর। চীন আরও জানিয়েছে, তারা নিচের দিকের দেশগুলোর সঙ্গে তথ্য বিনিময় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ে সমন্বয় করছে, যদিও এই বিবৃতি কতটা কার্যকর তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকরা।

যদিও ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে জানা গেছে ভারতও ইয়ারলুং ঝাংবো বা সিয়াং নদীর ওপর দুটি বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে একটি হবে ভারতের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের প্রকল্পটি ‘রান-অব-দ্য-রিভার’ ধাঁচের হওয়ায়, এতে পানি জমিয়ে না রেখে স্বাভাবিক প্রবাহেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। তাই হয়তো সরাসরি পানি সরবরাহে ততটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না, তবে প্রকল্পটির জলপ্রবাহের গতিশীলতা, পরিবেশগত ভারসাম্য ও রাজনৈতিক সম্পর্কের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব অনস্বীকার্য।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ