মাইলস্টোন দুর্ঘটনা

বোনের বিদায়ের পর ভাই নাফিও চলে গেল না-ফেরার দেশে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৩ ০৮:৪১:১৩
বোনের বিদায়ের পর ভাই নাফিও চলে গেল না-ফেরার দেশে
বাবা-মায়ের সঙ্গে নাজিয়া ও নাফি। ছবি : সংগৃহীত

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফি (৯)। এর আগে একই ঘটনায় প্রাণ হারায় তার বোন, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী নাজিয়া। ভাই-বোনের এমন করুণ পরিণতি দেশে শোকের ছায়া ফেলেছে।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাত ১২টা ১৫ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ছোট্ট নাফি। তার শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই, রাত ৩টার দিকে মারা যায় তার বড় বোন নাজিয়া, যার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।

এই দুই শিশু পরিবারের সঙ্গে উত্তরার কামারপাড়া এলাকায় বসবাস করত এবং তারা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যথাক্রমে প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান জানান, আহতদের মধ্যে বেশিরভাগের অবস্থাই ছিল অত্যন্ত সংকটজনক।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট জানায়, এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত তাদের হাসপাতালে ১১ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মারা গেছেন। আর ঢাকা মেডিকেলেও মারা গেছে আরও এক শিক্ষার্থী।

আইএসপিআর মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে। তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ জনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নিহতদের মধ্যে ২৩ জনই শিশু।

নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের পরিচয় এখনও শনাক্ত করা যায়নি। এ পর্যন্ত ২০টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, ৬টি রাখা হয়েছে সিএমএইচ মর্গে। নিহত বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের মরদেহ ইতোমধ্যে রাজশাহীতে দাফন করা হয়েছে।

আইএসপিআর জানায়, এ ঘটনায় মোট আহত হয়েছেন ১৬৫ জন। তাদের মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪৬ জন, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৮ জন, সিএমএইচে ২৮ জন, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৬০ জনসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, চিকিৎসাধীনদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের উন্নত চিকিৎসায় দেশের সেরা বিশেষজ্ঞরা নিয়োজিত হয়েছেন। শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে করা এক সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও দুইজন নার্স ঢাকায় পৌঁছেছেন। এ ছাড়াও চীন, ভারত ও জাপান আহতদের চিকিৎসায় সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতার তালিকা চেয়েছে।

দেশজুড়ে এই দুর্ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে, বিশেষত কোমলমতি শিশুদের মর্মান্তিক মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ