মাইলস্টোন দুর্ঘটনা

একসঙ্গে স্কুলে যেতো, খেলতো—এখন পাশাপাশি কবরেও শুয়ে তিন শিশু

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২২ ২২:০২:৩৩
একসঙ্গে স্কুলে যেতো, খেলতো—এখন পাশাপাশি কবরেও শুয়ে তিন শিশু
উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী বাপ্পির বাবা/ছবি: বিবিসি বাংলা

একসঙ্গে স্কুলে যাওয়া, একসঙ্গে খেলা আর একসঙ্গে স্বপ্ন দেখা—এভাবেই চলছিল আরিয়ান, বাপ্পি ও হুমায়েরের ছোট্ট জীবন। বয়সে কাছাকাছি হওয়ায় তারা শুধু আত্মীয় নয়, ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কিন্তু এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সবকিছু থেমে গেল। ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারায় এই তিন কোমলমতি শিশু।

গত সোমবার স্কুল শেষে কোচিং ক্লাসে অংশ নিয়েছিল তারা। প্রতিদিনের মতোই বাসায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন আর ফেরা হলো না।দুর্ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাদের। মৃত্যুর পর তিনজনই এখন পাশাপাশি কবরস্থ, যেখান থেকে তাদের হাসি, খেলা আর স্কুলে যাওয়া আর কখনোই দেখা যাবে না।

তারা একই পরিবারের সদস্য—চাচা-ভাতিজা সম্পর্কে হলেও বয়সে ঘনিষ্ঠ হওয়ায় একই ক্লাসে পড়তো, একসঙ্গে চলাফেরা করতো। তাদের বাসা ছিল উত্তরা দিয়াবাড়ির তারারটেক মসজিদসংলগ্ন এলাকায়। যে জায়গাটিতে তারা একসময় খেলাধুলায় মেতে থাকতো, সেখানেই এখন রয়েছে তাদের কবর।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো এলাকায় শোকের ছায়া। চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না কেউই—স্বজন, বন্ধু, প্রতিবেশী সবাই শোকে স্তব্ধ। এক প্রতিবেশী বলেন, "এ বিদায় সহ্য করার মতো নয়, এ কষ্ট বলার মতো নয়।"

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী বাপ্পি ছিলেন মোহাম্মদ আবু শাহিনের ছেলে। তার ভাইয়ের ছেলে হুমায়ের এবং চাচাতো ভাই আরিয়ান ছিল তাদের নিয়মিত সঙ্গী। দুর্ঘটনার দিন সকালে একসঙ্গে স্কুলে গিয়েছিল তারা।বেলা ১১টায় স্কুল শেষে অংশ নিয়েছিল কোচিংয়ের ক্লাসে। বেলা দেড়টার দিকে কোচিং শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি।

বাপ্পির বাবা শাহিন বলেন, “আমি স্কুলে যাচ্ছিলাম ছেলেকে আনতে। হঠাৎ বিকট আওয়াজ শুনে দৌড়ে যাই। দেখি ধোঁয়া, চারদিকে দৌড়াদৌড়ি। পরে বুঝি সব শেষ।”

দুর্ঘটনাস্থল থেকে জীবিত উদ্ধার হলেও হাসপাতালে মারা যায় হুমায়ের, পরে শাহিনের ছেলে বাপ্পিও মারা যায়। রাত তিনটায় শাহিনের ভাইয়ের মৃত্যু হয় হাসপাতালে।

আরিয়ানের সহপাঠী রাইয়ান আফনান জানান, “আমি লাইব্রেরিতে ছিলাম বলে প্রাণে বেঁচে গেছি। স্কুল গেট পার হওয়ার সময় বিস্ফোরণের শব্দ শুনি।”

এই দুর্ঘটনায় আরও দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে, যাদের মরদেহ পরিবারের সদস্যরা নিয়ে গেছেন গ্রামের বাড়িতে। এলাকাবাসী এখনও বিষাদের মধ্যে আছেন। মোতালেব হোসেন নামের একজন বলেন, “যাদের একদিন আগেই খেলতে দেখেছি, আজ তারা নেই—এটা মানা যায় না।”

সুত্র-বিবিসি বাংলা

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ