শোকের মাঝে উৎসব! চাটমোহরে বিএনপির সাংস্কৃতিক আয়োজন ঘিরে জনরোষ

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৩ ১০:২২:০৪
শোকের মাঝে উৎসব! চাটমোহরে বিএনপির সাংস্কৃতিক আয়োজন ঘিরে জনরোষ

পাবনার চাটমোহরে বিএনপির একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা ও নিন্দার ঝড়। রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের মৃত্যুতে যখন পুরো জাতি শোকাহত, তখন একই রাতে চাটমোহরের ছাইকোলা ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হয় এক বিতর্কিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনায় বিস্ফোরণ ঘটে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের।

গত সোমবার (২১ জুলাই) রাতে ছাইকোলা ইউনিয়নের দীঘলগ্রাম শাহবাড়ী বাজারে স্থানীয় বিএনপির এক কর্মী সভা শেষে আয়োজিত হয় উল্লিখিত অনুষ্ঠানটি। জানা গেছে, পাবনা-৩ আসনের (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়ায় এই কর্মী সভার আয়োজন করে স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনগুলো।

কর্মী সভা শেষে রাত ৮টা থেকে শুরু হয় গান ও নৃত্য পরিবেশনার অনুষ্ঠান, যা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। অনুষ্ঠানে বাইরের নারী শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে জমকালো নৃত্যগীত পরিবেশন করা হয়, আর উচ্চ শব্দে সাউন্ড সিস্টেমে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হতে থাকে। বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় সচেতন মহলের বক্তব্য অনুযায়ী, এমন একটি শোকাবহ মুহূর্তে এই ধরনের উল্লাসমূলক আয়োজন জনসাধারণের দৃষ্টিতে অনুচিত ও অমানবিক বলে বিবেচিত হয়েছে। জনগণের মতে, একটি জাতীয় বিপর্যয়ের সময় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির উচিত ছিলো আরও দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শন করা।

এ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাবনা পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য ডা. সচিব আহমেদ মোস্তফা নোমান, চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম কালু, উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মাহমুদুল আলম মাহমুদসহ একাধিক নেতৃবৃন্দ। তাদের উপস্থিতির প্রেক্ষিতে পুরো ঘটনার গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে।

ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, এমনকি সাধারণ জনগণের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। চাটমোহর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম হৃদয় ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “ছাইকোলার এই কর্মকাণ্ডে চাটমোহর লজ্জিত।” স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান লেবু বলেন, “আজকের দিনে এমন আয়োজন যারা করেছে, তাদের ধিক্কার জানাই।”

সাধারণ মানুষের বক্তব্যও ছিল অত্যন্ত কঠোর। সাইদুল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, “এই এলাকার বিবেকবান মানুষগুলো কি মরে গেছে?” অন্য একজন, জাহাঙ্গীর আলম জাকারিয়া মন্তব্য করেছেন, “দুঃখজনক ও লজ্জার। এদের কি বিবেক বুদ্ধি লোপ পেয়েছে?”

চাটমোহর উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি মোন্তাজ আহমেদ বলেন, “এই ধিক্কারজনক কাজ যারা করেছে, তাদের দল থেকে চিরতরে বহিষ্কার করতে হবে। এরা তুহিন ভাইয়ের নাম ব্যবহার করে তাকে ও দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।”

জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির উপদেষ্টা ও মনোনয়ন প্রত্যাশী আলহাজ হাসানুল ইসলাম রাজা বলেন, “যখন পুরো দেশ শিশুদের মৃত্যুতে শোকে আচ্ছন্ন, তখন এমন একটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন মানবিকতা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতার সর্বোচ্চ লঙ্ঘন। এটি জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটি মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে প্রকাশ্য বেঈমানি।”

চাটমোহরের সাবেক এমপি ও মনোনয়নপ্রত্যাশী কে এম আনোয়ারুল ইসলামও ঘটনা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, “দেশের শোকাহত পরিবেশে যা হয়েছে তা অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক।”

তবে অনুষ্ঠান আয়োজকদের পক্ষ থেকে এর পক্ষে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ছাইকোলা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান তোতা জানান, “অনুষ্ঠানটি পূর্বনির্ধারিত ছিল। আবহাওয়ার কারণে পিছিয়ে সোমবার হয়। তখনকার দিনে যে দুর্ঘটনা ঘটবে তা আগে থেকে জানার সুযোগ ছিল না। তবুও আমরা বক্তব্য শেষেই চলে যাই এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলি, কিন্তু উঠতি বয়সের ছেলেরা তা মানেনি।”

তিনি আরও দাবি করেন, “আসলে ঘটনাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বড় করে দেখা হচ্ছে। তুহিন ভাইয়ের মনোনয়ন পাওয়ায় চাটমোহরে বিএনপির মধ্যে বিভাজন রয়েছে, আর সেই গ্রুপগুলোর কেউ এই ইস্যু দিয়ে দলীয় ষড়যন্ত্র করছে।”

-ইসরাত

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ