নীলা মার্কেট: ঢাকার সন্নিকটে খাদ্য-প্রেমীদের স্বপ্নীল গন্তব্য

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৩ ১১:০৫:০১
নীলা মার্কেট: ঢাকার সন্নিকটে খাদ্য-প্রেমীদের স্বপ্নীল গন্তব্য

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরের বুক চিরে বালু নদীর তীরে বিস্তৃত একটি বিশাল খাবারের হাট গড়ে উঠেছে, যা স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ‘রসনার হাট’ নামে। একদিকে নদীর কলতান আর অন্যদিকে লেকের শীতল বাতাস এই মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠেছে প্রায় দুই শতাধিক বাহারি খাবারের দোকান ও রেস্টুরেন্ট। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই খাবারের রাজ্যে জমে ওঠে বিশাল ভোজনরসিকদের ভিড়, যা শুধু খাদ্যপ্রেমীদের জন্য নয়, বরং স্থানটির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

নীলা মার্কেট ও এর আশপাশের ফুড জোনটি পূর্বাচল উপশহরের বিভিন্ন সেক্টরের সেক্টর-১, ১১ ও ১২ এবং ময়েজউদ্দিন চত্বর ক্ষেত্রে ছড়িয়ে রয়েছে। এই এলাকা ৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়ের ঠিক পাশে অবস্থিত, যা ঢাকার সঙ্গে সহজ যোগাযোগের কারণে দর্শনার্থী ও ভোজনরসিকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে।

প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে নীলা মার্কেটের খাবার দোকানগুলো ব্যস্ত হতে শুরু করে। সকালে কাঁচা মাংস কাটার কাজ চললেও, সূর্য পশ্চিমে ডুবতে শুরু করার সাথে সাথেই শুরু হয় রান্নার মহোৎসব। বড় বড় কড়াইয়ায় তৈরি হয় দেশি হাঁসের ঝাল ঝাল মাংস, গরুর মাংস, দেশি মুরগি ভুনা এবং নানা ধরনের ভর্তা। গরম গরম রুমালি রুটি, আটার রুটি ও চালের চাপটি পিঠা এসব মাংসের সঙ্গে পরিবেশিত হয়, যা নীলা মার্কেটের খাবারের বিশেষ আকর্ষণ।

হাঁসের মাংস ভুনা এখানে এতটাই জনপ্রিয় যে, প্রায় সব দোকানে বিক্রি হয় দেশি পাতি হাঁসের ঝাল ঝাল মাংস। একটি প্লেটে পাওয়া যায় পাঁচ পিস মাংসসহ আনলিমিটেড ঝোল, যার দাম প্রায় ৩০০ টাকা। গরুর মাংস ২৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৩০০ টাকা, আর গরুর বট ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। মাংসের পাশাপাশি নানা প্রকারের পিঠা যেমন চাপটি, আটার রুটি, ডিম চাপটি ও চিতই পিঠা জনপ্রিয়। প্রচলিত গ্রামীণ পিঠাগুলোকে এখানে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়, যা খাবারের স্বাদ ও নৈপুণ্যকে করে তোলে আরও সমৃদ্ধ।

নীলা মার্কেটের আরেকটি বিশিষ্টতা হলো এখানে পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক মাছ ও সীফুড। তাজা চিংড়ি, কাঁকড়া, স্যামন, কোরাল এবং লবস্টারের বারবিকিউ সরাসরি গ্রিল করে পরিবেশন করা হয়, যা প্রত্যেক দর্শনার্থী ও ভোজনরসিকের মন জয় করে নেয়। এই মেনুর কারণে রূপগঞ্জের এই খাবারের হাট যেন একবারে সমুদ্র উপকূলের স্বাদ উপভোগ করার জায়গায় পরিণত হয়েছে।

নীলা মার্কেটে রয়েছে বাহারি মিষ্টির দোকান, যেখানে পাওয়া যায় রসগোল্লা, বালিশ মিষ্টি, মালাই চপ, সন্দেশ, ল্যাংচা, গোলাপ জামুন, ছানা ও দধি। এছাড়া রয়েছে ৫০ ও ৬০ টাকার মধ্যে দুই ধরনের তন্দুরি চা, যা সন্ধ্যার আড্ডায় বিশেষ আকর্ষণ। বিভিন্ন ফলমূলের দোকানও এখানে রয়েছে, যা ভোজনের পর তৃপ্তি জোগায়।

খাবারের পাশাপাশি নীলা মার্কেট স্থায়ী একটি আনন্দমেলার রূপ নিয়েছে। এখানে রয়েছে শিশুদের জন্য বিভিন্ন রাইডস, নাগরদোলা, নৌকা ভ্রমণসহ বিভিন্ন বিনোদনের আয়োজন। পুরো এলাকায় সাজানো হয় বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প, পোশাক ও খেলনার স্টল, যা পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা দর্শনার্থীদের বিনোদন নিশ্চিত করে।

নীলা মার্কেট ও এর আশপাশের ফুড জোনটি স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার বেচাকেনা হয় এখানে। কয়েকশ কর্মী ও উদ্যোক্তা এই হাটের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। এর ফলে খাদ্য সংস্কৃতি, উদ্যোক্তা চেতনা এবং পর্যটনের মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে।

নীলা মার্কেটের এই ফুড জোনটি নদী ও লেকের তীরে গড়ে উঠায় এটি একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেরও কেন্দ্র। বাতাসের সান্নিধ্য এবং জলরাশির কলতান এই জায়গাটিকে অন্যান্য শহুরে ফুড জোন থেকে আলাদা করে তোলে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিচ্ছন্নতার দিকে গুরুত্ব দিয়ে এখানকার ব্যবসায়ীরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণে উদ্যোগী।

নীলা মার্কেটের রসনার হাট এখন শুধু খাদ্যপ্রেমীদের জন্য নয়, বরং রূপগঞ্জবাসী ও আশপাশের এলাকার মানুষের সামাজিক মিলনস্থল, অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা এবং সাংস্কৃতিক উৎসবের জায়গা হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে যে, সঠিক উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা চেতনায় নতুন নতুন স্থানে খাদ্যসংস্কৃতি ও পর্যটন বিকাশ সম্ভব।

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ