খুলনায় যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানকে গুলি করে হত্যা

খুলনা ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১২ ০৯:০৪:৫১
খুলনায় যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানকে গুলি করে হত্যা

খুলনার দৌলতপুরে নিজ বাড়ির সামনে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান মোল্লাকে (৪৫)। শুক্রবার (১১ জুলাই) দুপুরে দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

নিহত মাহবুব খুলনা মহানগর যুবদলের দৌলতপুর থানা শাখার সহসভাপতি ছিলেন।

নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের পর খুলনা-যশোর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে মিছিল করেন এবং দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, দুপুর দেড়টার দিকে সদ্য কেনা প্রাইভেটকারটি পরিষ্কার করছিলেন মাহবুব। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে আসা তিন ব্যক্তি হেলমেট পরে এসে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। মাহবুব দৌড়ে বাড়ির দিকে পালানোর চেষ্টা করলে পেছন থেকে তাকে এলোপাতাড়ি গুলি করা হয়।

গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তার পাশে পড়ে গেলে দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেল থামিয়ে নেমে তার পায়ের রগ কেটে দেয় এবং মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে মাহবুবের শরীরে ৯টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে সাতটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহতের বোন শান্তা বলেন, “দলের জন্য কত কিছু করল ভাইটা। গুলিও খাইছে, পলায় বেড়াইছে। এখন ভালো সময় আসার আগে চলে গেল।”

এক প্রত্যক্ষদর্শী যুবক জানান, “আমি মাহবুব ভাইয়ের সঙ্গে গাড়ি পরিষ্কার করছিলাম। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে মাথা তুলতেই আমার দিকেও গুলি ছোড়ে ওরা। আমি দৌড়ে পালিয়ে যাই।”

দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী বলেন, “তিনজন যুবক মোটরসাইকেলে করে এসে হত্যাকাণ্ড চালায়। তারা তেলিগাতির দিকে পালিয়ে গেছে। ঘটনাস্থল ও আশপাশে অভিযান চলছে। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।”

তিনি আরও জানান, নিহত মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে মাদকসহ অন্তত আটটি মামলা রয়েছে। এসব তথ্য মাথায় রেখেই তদন্ত চলছে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) তাজুল ইসলাম বলেন, “এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা ও জমি নিয়ে বিরোধের বিষয়গুলোও আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।”

নিহত মাহবুব গত ১৮ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এলাকায় ছাত্রদল ও বাম সংগঠনের সংঘর্ষে রামদা হাতে অংশ নেন। ঘটনার ছবি ছড়িয়ে পড়লে তাকে দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। তবে তিনি নিয়মিত দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন।

এছাড়া স্থানীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে জমি ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ছিল বলে এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা বলেন, “খুলনায় একের পর এক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটছে। পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মাহবুব হত্যায় অবিলম্বে আসামিদের গ্রেপ্তার এবং পুলিশে বড় রদবদলের দাবি জানাচ্ছি।”

অন্যদিকে বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা দাবি করছেন, কুয়েটের ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

সত্য প্রতিবেদন/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ