রাজবাড়ীতে বিদ্যুৎ বিল কেলেঙ্কারিতে কোটি টাকা আত্মসাৎ

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১১ ১১:০৫:০৯
রাজবাড়ীতে বিদ্যুৎ বিল কেলেঙ্কারিতে কোটি টাকা আত্মসাৎ

রাজবাড়ীতে বিদ্যুৎ বিল সংগ্রহের নামে শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করার অভিযোগে অবশেষে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) কর্মচারী মোক্তার বিশ্বাসকে। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যায় গাজীপুরের শিমুলতলী এলাকায় রাজবাড়ী সদর থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ অভিযানে তাকে আটক করা হয়। পরে রাতেই তাকে রাজবাড়ীতে আনা হয়।

রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) পাভেল মোল্লা জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও সোর্সের সহায়তায় মোক্তারের অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান চালানো হয়। বর্তমানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং আরও তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

মোক্তার বিশ্বাস রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চর নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওজোপাডিকোর নিয়োগপ্রাপ্ত মিটার রিডারম্যান হিসেবে ১৫ বছর ধরে আলীপুর ও শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দায়িত্বে থাকার সুযোগ নিয়ে তিনি বিদ্যুৎ বিল তৈরি, বিকাশের মাধ্যমে বিল সংগ্রহ, এমনকি নতুন সংযোগ দেওয়ার নামেও গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন। ২০২৩ সাল থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দুই ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কোটি টাকার বেশি আদায় করে তিনি গা ঢাকা দেন।

এই প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসে যখন ভুক্তভোগীরা যথাযথভাবে বিল পরিশোধ করার পরও বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের কাছে বকেয়া বিল চেয়ে নোটিশ পাঠায়। এরপরই বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে এবং প্রতিকারের আশায় গ্রাহকরা ২ জুলাই রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপে ওজোপাডিকোর সহকারী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মোক্তারের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও নজরদারির অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে একজন কর্মচারী কীভাবে এত বড় প্রতারণা চালাতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এমনকি ডিজিটাল বিলিং ও জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা না থাকায় গ্রাহকরা প্রতারিত হয়েছেন সহজেই।

এই প্রতারণা কেবল একজন কর্মচারীর লোভের ফসল নয়, এটি গোটা বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার দুর্বলতা ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার বহিঃপ্রকাশ। মোক্তারের গ্রেপ্তার হয়তো বিচারের সূচনা, তবে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে প্রয়োজন কার্যকর নজরদারি, স্বচ্ছ ডিজিটাল বিলিং ব্যবস্থা এবং শক্তিশালী তদারকি কাঠামো। প্রশাসনের সুষ্ঠু তদন্ত ও কঠোর শাস্তির মাধ্যমে এই ঘটনার পূর্ণ চিত্র উন্মোচিত হলে, গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং দুর্নীতিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ